আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাঁচা–মরার ম্যাচ ছিল বাংলাদেশের। হারলেই এশিয়া কাপ থেকে বিদায়। আর জিতলে সুপার ফোরের আশা জিইয়ে থাকবে। এমন সমীকরণে খেলতে নেমে বাংলাদেশ বেঁচে গেছে। এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় খেলায় বাংলাদেশ ৮ রানে হারিয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানকে। ফলে ৩ খেলা শেষে তাদের অর্জন ৪ পয়েন্ট। তবে এ জেতাই শেষ নয়। তাদের এখন তাকিয়ে থাকতে হবে ১৮ সেপ্টেম্বর শ্রীলংকা–আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে। সে ম্যাচে শ্রীলংকা আফগানিস্তানকে হারালেই বাংলাদেশ সুপার ফোরে পৌঁছবে। আর যদি আফগানিস্তান জয়লাভ করে তবে তিন দলের পয়েন্ট সমান হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে রান রেটের দ্বার হতে হবে। সে হিসেবেই বলে দেবে ‘বি’ গ্রুপ থেকে কোন দুটি দল সুপার ফোরে যাবে। ‘বি’ গ্রুপে তিন ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে প্রথম পর্ব শেষ করেছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে পেছনে ফেলে পয়েন্ট তালিকার দুইয়ে অবস্থান তাদের। দুই ম্যাচে দুটি জয় পাওয়া শ্রীলঙ্কার পয়েন্টও ৪। তবে শ্রীলঙ্কা নেট রান রেটের হিসেবে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে আছে। রান রেটে এগিয়ে আছে আফগানিস্তানও। তিনে থাকা রশিদদের পয়েন্ট ২।
গতকাল আবুধাবিতে টসে জিতে বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে। নির্ধারিত ২০ ওভার বাংলাদেশ ৫ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ১৫৪ রান। জবাবে আফগানিস্তান ২০ ওভার খেলে ১৪৬ রানে অল আউট হয়ে যায়।
১৫৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে আফগানিস্তান শুরুতেই ধাক্কা খায়। বাংলাদেশ দুর্দান্ত শুরু করে। প্রথম বলেই সেদিকউল্লাহ আতালকে এলবিডব্লিউ করে দেন নাসুম আহমেদ। বাঁহাতি স্পিনারের বলের লাইনেই যেতে পারেননি আফগান ওপেনার। জায়গায় দাঁড়িয়ে লেগে খেলার চেষ্টায় সফল হননি বলে–ব্যাটে করতে। জোরাল আবেদনে সাড়া দিয়ে আউট দেন আম্পায়ার। রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গে কথা বলে রিভিউ না নিয়ে ফিরে যান সেদিকউল্লাহ। ওভারের বাকি পাঁচটি বল ডট খেলেন নতুন ব্যাটসম্যান ইব্রাহিম জাদরান। ১ ওভারে আফগানিস্তানের রান ১ উইকেটে শূন্য। নিজের প্রথম ওভারে উইকেট পেতে পারতেন তাসকিন আহমেদও। তার বলে ইব্রাহিম জাদরানের ক্যাচ নিতে পারেননি রিশাদ হোসেন। তাসকিনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে দেন ইব্রাহিম। বল যায় সরাসরি এঙট্রা কাভারে, রিশাদের হাতে। কিন্তু মুঠোয় রাখতে পারেননি তিনি। সে সময় শূন্য রানে ছিলেন ইব্রাহিম। জীবন পেয়ে অবশ্য বেশি দূর যেতে পারেননি ইব্রাহিম জাদরান। নাসুম আহমেদের চমৎকার ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ হয়ে যান আফগান টপ অর্ডার ব্যাটার। স্পিন করে একটু ভেতরে ঢোকা ডেলিভারি ব্যাটে খেলতে পারেননি ইব্রাহিম। জোরাল আবেদনে আম্পায়ার সাড়া দিলে রিভিউ নেন তিনি। লেগ স্টাম্প ছুঁয়ে যেত বল, অর্থাৎ আম্পায়ার্স কল। আম্পায়ার আউট দেওয়ায় ফিরে যান ইব্রাহিম। ১২ বলে এক চারে তিনি করেন ৫ রান। এরপর দ্রুত এগোনো জুটি ভাঙেন রিশাদ হোসেন। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে গুলবাদিন নাইবকে থামান এই লেগ স্পিনার। অফ স্টাম্পের একটু বাইরের বলে আগেভাগেই শট খেলে ফেলেন নাইব। সহজ ক্যাচ নেন বোলার। ভাঙে ২৭ বল স্থায়ী ৩৩ রানের জুটি। ১৪ বলে দুটি চারে ১৬ রান করেন নাইব। ক্রিজে রহমানউল্লাহ গুরবাজের সঙ্গী মোহাম্মদ নাবি। নিজের পরের ওভারে আরেকটি উইকেট পান রিশাদ হোসেন। লেগ স্পিনারকে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় ধরা পড়েন রহমানউল্লাহ গুরবাজ। আফগান ওপেনার প্যাডল সুইপে টাইমিং করতে পারেননি। স্কয়ার লেগ সীমানায় ক্যাচ নেন জাকের আলি। ৩১ বলে দুটি করে ছক্কা ও চারে ৩৫ রান করেন গুরবাজ। ক্রিজে মোহাম্মদ নাবির সাথে যোগ দেন আজমাতউল্লাহ ওমারজাই। আফগানদের চেপে ধরার কৌশলে ১৩তম ওভারে পঞ্চম উইকেটও তুলে নেয় বাংলাদেশ। মোস্তাফিজের বলে বোল্ড হন মোহাম্মদ নবী (১৫)। তাতে ৭৭ রানে পঞ্চম উইকেট হারিয়ে আরও বিপদে পড়ে আফগানিস্তান। তবে ক্যামিও ইনিংসে ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ব্যবধান কমাচ্ছিলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই। তার ব্যাটে ১৫তম ওভারে স্কোর একশ ছাড়ায় আফগানদের। মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই ব্যাটারকে ৩০ রানে থামান তাসকিন আহমেদ। ওমরজাই ক্যাচ আউট হওয়ার আগে ১৬ বলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কা মারেন। ১৮ বলে তখন দরকার ৩১ রান। ঠিক এই সময়েই রান আউটে আফগানদের সপ্তম উইকেট তুলে তাদেরকে আরও চাপে ফেলে বাংলাদেশ। নুরুল হাসান সোহানের দুর্দান্ত থ্রোয়ে রান আউট হন করিম জানাত (৬)। তাতে ১২৪ রানে পড়ে যায় আফগানদের সপ্তম উইকেট। এসময় বল হাতে নেন মোস্তাফিজ। এদিকে ব্যবধান কমিয়ে ম্যাচ জমিয়ে তোলার চেষ্টায় ছিলেন রশিদ খান। প্রথম বলে চার মারলেও ১৮.২ ওভারে মোস্তাফিজের বলেই ২০ রানে তাসকিনের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাতে ১৩২ রানে অষ্টম উইকেট হারায় আফগানিস্তান। পরের বলে নতুন নামা গজনফরকেও লিটর দাসের গ্লাভসবন্দি করেন কাটার মাস্টার। তাতে জয়ের আরও কাছে চলে আসে বাংলাদেশ। শেষ ওভারে তাসকিনের বলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান আরো কমিয়ে আনেন নূর আহমেদ। কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি। শেষ বলে ধরাই পড়েন তাসকিনের বলে নূরুল হাসানের হাতে। ১৪ রান করেন নূর আহমেদ। নাসুম আহমেদ ৪ ওভার বল বল করে ১ মেডেন ১১ রান দিয়ে ২ উইকেট লাভ করেন। তিনি পরে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন। এছাড়া মোস্তাফিজুর রহমান ২৮ রানে ৩টি উইকেট পান। রিশাদ হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ প্রত্যেকে ২টি করে উইকেট নেন। শামীম হোসেন এবং সাইফ হাসান দুজনে ৪ ওভার বল করে ৫৫ রান দিয়ে বাংলাদেশকে অনেক ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছিলেন।
এর আগে দুই ওপেনারের ব্যাটে উড়ন্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে তানজিদ তামিম দারুণ ব্যাটিং করেছেন। এই ওপেনারের গড়ে দেওয়া শক্ত ভিতে দাঁড়িয়েও সুবিধা করতে পারেননি মিডল অর্ডার ব্যাটাররা। জাকের আলি–লিটন দাসরা প্রচুর ডট বল খেলেছেন। তাতে কোনো রকমে দেড়শ ছুঁতে পারে বাংলাদেশ। আবুধাবিতে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৫৪ রান করে বাংলাদেশ। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন তামিম। টস জিতে লিটন দাসের ব্যাটিং বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক প্রমাণ করেছেন দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তানজিদ তামিম। বিশেষ করে তামিম। এই তরুণ ওপেনার পাওয়ার প্লেতে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন। এক প্রান্তে তামিম আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করলেও আরেক প্রান্তে রান তুলতে বেশ ভুগেছেন সাইফ। শুরুতে বেশ কিছু ডট খেলেছেন তিনি। তবে তামিম আরেক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করায় রানের চাকা সচল ছিল। সাইফ উইকেটে থিতু হয়েও সেটা পুষিয়ে দিতে পারেননি। পাওয়ার প্লে শেষেই ফিরেছেন তিনি। সাজঘরে ফেরার আগে ২৮ বলে করেছেন ৩০ রান। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি লিটন দাস। দেখে–শুনে খেলে উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন লিটন, তবে নূর আহমেদের করা প্রথম বলেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন। ১১ বলে ৯ রান করেছেন তিনি। লিটন দ্রুত ফিরলেও এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিং করেছেন তামিম। স্পর্শ করেছেন ব্যক্তিগত ফিফটি। ২৮ বলে এই মাইলফলক ছুঁয়েছেন তিনি। ফিফটির পর অবশ্য আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। নূরকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অফে ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন। তার আগে ৩১ বলে ৫২ রান করেছেন এই ওপেনার। পাঁচে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে চেয়েছিলেন শামিম হোসেন। তবে হিতে বিপরীত হয়েছে। রশিদকে আক্রমণ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েছেন। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১ রান। মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয় উইকেটে থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২০ বল খেলে ২৬ রান করেছেন তিনি। শেষদিকে জাকের আলি বেশ ভুগেছেন। আফগানদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের বিপরীতে রান করতে রীতিমতো সংগ্রাম করেছেন। ১৩ বল খেলে অপরাজিত ১২ রান করেছেন তিনি। তবে নুরুল হাসান সোহান ভালো ব্যাটিং করেছেন। তার ৬ বলে অপরাজিত ১২ রানের ইনিংস বেশ কার্যকরী ছিল। আফগানিস্তানের পক্ষে ২টি করে উইকেট পান অধিনায়ক রশিদ খান এবং নূর আহমেদ। আজমতউল্লাহ ওমরজাই পান অপর উইকেটটি।