টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুই সহযোগী দেশের লড়াই। আর সে লড়াইটা হয়ে উঠল বিশ্বকাপের সবচাইতে রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ। এক সময় নামিবিয়ার সহজ জয় দেখা গেলেও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটা গড়ায় সুপার ওভারে। আর রোমাঞ্চকর সে সুপার ওভারের ম্যাচে দারুণ এক জয় তুলে নিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সুচনা করল নামিবিয়া। বারবাডোজের কেনসিংটন ওভালে গতকাল রোববার ভোরে মূল ম্যাচে দুই বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে গুটিয়ে যায় ওমান। রান তাড়ায় ৬ উইকেটে ১০৯ রানেই থামে নামিবিয়া। ম্যাচটা হয়ে যায় টাই। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চতুর্থ টাই ম্যাচ এটি। আর সুপার ওভারে ফল নির্ধারণ হওয়া তৃতীয় ম্যাচ। সবশেষ ২০১২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ গড়িয়েচিল সুপার ওভারে। একই আসরে শ্রীলঙ্কা–নিউজিল্যান্ড লড়াইয়ের ফলও এসেছিল সুপার ওভারে। প্রায় এক যুগ পর আবারো সুপার ওভার ম্যাচ দেখল বিশ্বকাপ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রুবেন ট্রাম্পেলম্যানের তোপে পড়ে ওমান। ম্যাচের প্রথম দুই বলে অসাধারণ দুটি ইয়র্কারে কাশ্যাপ প্রজাপতি ও আকিবকে ফেরান বাঁহাতি এই পেসার। পরের ওভারে নাসিমকেও আউট করেন তিনি। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট নিলেন ট্রাম্পেলম্যান। ২০২১ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওভারেই তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়েছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে পাওয়ার প্লেতে একাধিকভাবে অন্তত ৩ উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে আর তিন জনের। তারা হলেন ডার্ক ন্যানেস, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও ট্রেন্ট বোল্ট। ট্রাম্পেলম্যানের দেওয়া শুরুর ধাক্কা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি ওমান। খালিদ কাইল ৩৯ বলে ৩৪, জিশান মাকসুদ ২০ বলে ২২ রান করে দলকে কোনোমতে একশ পার করান। পুরো ইনিংসে ওমানের ছয় ব্যাটসম্যান এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ এলবিডব্লিউর রেকর্ড এটি। এর আগে ৫টি করে এলবিডব্লিউর ঘটনা আছে তিনটি। শেষ পর্যন্ত দুই বল বাকি থাকতে ১০৯ রানে অল আউট হয় ওমান। দলের পক্ষে দুই অংকের ঘরে যেতে পারা অপর ব্যাটাররা হলেণ আয়ান ১৫ এবং শাকিল ১১। ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়ে নামিবিয়ার সেরা বোলার ট্রাম্পেলম্যান। বিশ্বকাপে নামিবিয়ার কোনো বোলারের সেরা বোলিং এটি।
স্বল্প রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে বেশ কয়েকবার ভাগ্যের সহায়তা পায় নামিবিয়া। অন্তত ৩টি ক্যাচের সুযোগ নিতে পারেননি ওমানের ফিল্ডাররা। দুইবার বেঁচে গিয়ে ৪৮ বলে ৪৫ রানের ইনিংস খেলেন ফ্রাইলিঙ্ক। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে মাইকেল ফন লিনগেনকে বোল্ড করে ওমানকে দারুণ শুরু এনে দেন বিলাল। দ্বিতীয় উইকেটে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন নিকো ডেভিন ও ফ্রাইলিঙ্ক। কিন্তু রানের গতি বাড়াতে পারেননি তারা। অষ্টম ওভারে ডেভিনের ফিরতি ক্যাচ ছেড়ে দেন মেহরান। পরের ওভারেই অবশ্য তাকে ফেরান ওমান অধিনায়ক আকিব ইলিয়াস। ৩১ বলে ২৪ রান করা ডেভিনের বিদায়ে ভাঙে ৪২ রানের জুটি। এরপর এরাসমাসকে নিয়ে ৩১ রান যোগ করেন ফ্রাইলিঙ্ক। তখনও পর্যন্ত সব কিছু তাদের নিয়ন্ত্রণেই মনে হচ্ছিল। এরাসমাসের বিদায়ের পর পেছাতে থাকে নামিবিয়া। পরে মেহরানের দারুণ বোলিংয়ে উল্টো সম্ভাবনা জাগায় ওমান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি তারা। শেষ বলে নামিবিয়ার প্রয়োজন ছিল ২ রান। মেহরান খানের গুড লেংথ থেকে লাফানো ডেলিভারি ব্যাটে লাগাতে পারলেন না ডেভিড ভিসা। গ্লাভসে জমাতে পারলেন না নাসিম খুশিও। সুযোগ পেয়ে রানের জন্য ছুটলেন দুই ব্যাটসম্যান। খুব কাছ থেকেও স্টাম্প ভাঙতে পারলেন না উইকেটরক্ষক। ফলে টাই হয়ে গেল ওমান–নামিবিয়া ম্যাচ। খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। আর সে সুপার ওভারে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বিলাল খানের প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কা মারলেন ভিসা। শেষ দুই বলে বাউন্ডারি মারলেন গেরহার্ড এরাসমাস। সব মিলিয়ে ২১ রান পেল নামিবিয়া। পরে ভিসার হাতেই বল তুলে দেন এরাসমাস। দুর্দান্ত বোলিংয়ে কেবল ১০ রান দিলেন ভিসা। আর তাতেই দারুণ জয়ে মাঠ ছাড়ল নামিবিয়া। সুপার ওভারের আগে মূল ম্যাচে ২৮ রানে ৩ উইকেটের পর ব্যাট হাতে অপরাজিত ৯ রান করেন ভিসা। দুই দিকেই দারুণ অবদান রেখে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেন সাবেক দক্ষিণ আফ্রিকান পেস অলরাউন্ডার।