সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনতে হবে কক্সবাজারকে

| শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ কক্সবাজারের মত সুন্দর সৈকতকে বাংলাদেশ কাজে লাগাতে না পারায় হতাশা প্রকাশ করেছে। আদালত অবমাননার অভিযোগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মামুনুর রশিদ গত বুধবার বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চে হাজিরা দিতে এলে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এ হতাশা প্রকাশ করেন।

বিচারপতি জে বি এম হাসান বলেন, সারা পৃথিবী কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের দিকে তাকিয়ে আছে। এত সুন্দর সৈকতকে আমরা ইউটিলাইজ করতে পারছি না। কক্সবাজারে দায়িত্ব পেলে কাজ করার সুযোগও ‘অনেক বেশি পাওয়া যায়’ মন্তব্য করে বিচারক বলেন, কিন্তু কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক যা করছেন, তাতে তার ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য এর আগেই নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সরকার কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য অটুট রেখে এর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কক্সবাজারকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। সে জন্য আমি সবাইকে বিশেষ করে কক্সবাজারবাসীকে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নব-নির্মিত পরিবেশ-বান্ধব বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আশপাশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিনসহ বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। তিনি বলেন, আজকে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন তৈরি হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় বিনিয়োগ হচ্ছে। একে একটি ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই মহেশখালীর উন্নয়ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি টেকনাফে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে এর সমুদ্র সৈকতও যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অতীতে জাতির পিতার সঙ্গে কক্সবাজার সফরকালে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরবস্থার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি অনুযায়ী দোহাজারি থেকে গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ এবং চমৎকার একটি রেলস্টেশন নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের ন্যায় কক্সবাজার অবধি হাইওয়ের কাজও চলছে। পাশাপাশি সিলেট থেকে কক্সবাজার সরাসরি বিমান চলাচল চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমাদের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বরিশাল, রাজশাহী এবং সৈয়দপুরসহ যতগুলো বিমানবন্দর রয়েছে সেখান থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কক্সবাজারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন সরকার দিয়েছে। সেখানে একটি মেডিকেল কলেজ করা হয়েছে, হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি উন্নতমানের কনভেনশন সেন্টার এই কক্সবাজারেই করা হবে। যাতে যে কোনো ধরনের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম সেখানে আয়োজনের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়।

কক্সবাজারে ‘সি অ্যাকুরিয়াম’ প্রতিষ্ঠার কথা আবারও উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, এদেশে এ ধরনের অ্যাকুরিয়াম পরিচালনায় দক্ষ জনবলের অভাব থাকায় তার সরকার এ ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গতদের কক্সবাজার খুরুশকুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ফ্ল্যাটের অধিবাসীরা অধিকাংশই মৎসজীবী হওয়ার কারণে সেখানে একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক শুটকির হাট করে দেয়ার পাশাপাশি সেখানকার সি-বিচ উন্নয়নেরও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য দরকার কক্সবাজারের উন্নয়ন। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলেন, মারাত্মক দূষণের কারণে পর্যটন রাজধানী হিসেবে পরিচিত কক্সবাজারের পরিবেশ এখন আর পর্যটকদের অনুকূলে নয়। অথচ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজারকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পর্যটন বিশ্বের বুকে অন্যতম একটি স্থান দখল করে নিতে পারত। তাই পর্যটন বাঁচাতে হলে কক্সবাজারকে বাঁচাতে হবে। আজ যেসব স্থাপনা কক্সবাজার বিচের কাছাকাছি চলে এসেছে, তা যে কতটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করেছে, তা ভাষায় ব্যক্ত করা কঠিন। কক্সবাজারকে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে এসে সমুদ্রকে দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে