সুখরঞ্জন ট্রাইব্যুনালে, হাসিনা-সিনহাসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ

‘সাঈদী হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য না দেওয়ায় আমাকে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছে’

| শুক্রবার , ২২ আগস্ট, ২০২৫ at ৭:১২ পূর্বাহ্ণ

যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এবং পরে সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ায় গুম ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন পিরোজপুরের সুখরঞ্জন বালি। গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন বলে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম জানিয়েছেন। অভিযোগের সাক্ষী করা হয়েছে আইনজীবী তানভীর আল আমিন, মনজুর আহমেদ আনসারী, আবু বকর সিদ্দিক, হাসানুল বান্না সোহাগ ও মাসুদ সাঈদীকে। খবর বাসসের।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ৩২ জনের নামে এ অভিযোগ তুলেছেন সুখরঞ্জন বালি। অজ্ঞাতনামা হিসেবে বিবাদী করা হয়েছে ১০ থেকে ১৫ জনকে। তালিকায় অন্যদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক বিচারক বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবির, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলার সাবেক তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন এবং পিরোজপুর১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম আউয়ালের নাম রয়েছে। বিবাদী করা হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তৎকালীন তদন্ত সংস্থা প্রধান মো. সানাউল হককে।

সুখরঞ্জন বালির অভিযোগ, ২০১০ সালের জুলাইআগাস্ট মাসের দিকে তৎকালীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন পিরোজপুরের পাড়ের হাটের রাজলক্ষী স্কুলে ডেকে তার কাছে একাত্তরে তার ভাই বিশা বালির হত্যার বিষয়ে জানতে চান। তিনি জানান পাক হানাদর বাহিনী তার ভাইকে হত্যা করেছে। তখন হেলাল উদ্দিন তাকে ভাইয়ের হত্যাকারী হিসেবে অন্যদের সঙ্গে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর নামও বলতে বলেন এবং তার বিরুদ্ধে ট্রাইবুনালে গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বলেন। কিন্তু তিনি রাজি না হলে তাকে মারধর করেন। এর বেশ কিছুদিন পর সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বিশা বালী হত্যার ঘটনা জানতে চান। এরপর মাসুদ সাঈদী আমার ভাইয়ের হত্যার প্রকৃত ঘটনা ট্রাইব্যুনালে এসে বলার জন্য অনুরোধ করেন এবং আমি সাঈদী হুজুরের পক্ষে সাক্ষ্য দিতে রাজি হই।

তিনি অভিযোগ করেন, এরপর ২০১২ সালের ৫ নভেম্বর তিনি সাঈদীর পক্ষে সাক্ষ্য দিতে ট্রাইব্যুনালে গেলে ফটক থেকে পুলিশ তাকে চোখ ও হাত বেঁধে অজানা স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে একটি জানালাবিহীন অন্ধকার ঘরে প্রায় দুই মাস তাকে বন্দি রাখা হয় এবং প্রচণ্ড শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হয়। এরপর আরেকটি জায়গায় নিয়ে তাকে আরও দুই মাস নির্যাতন করা হয় বলে তার অভিযোগ। সুখরঞ্জন বলেন, এরপর একদিন চোখ বেঁধে একটি গাড়িতে তোলা হয় এবং কয়েক ঘণ্টার যাত্রার পর গাড়ি থামলে তিনি শৌচাগারে যাওয়ার কথা বলেন। তখন চোখ খুলে দিলে তিনি বুঝতে পারেন, তাকে সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, বিজিবির সহায়তায় তাকে উত্তর ২৪ পরগণাগার স্বরূপনগর থানার অন্তর্গত বৈকারী পাঠানো হয়। সেখানে বিএসএফ তাকে মারধর করে। পরে তাকে বশিরহাট নিয়ে যায়। বশিরহাট সাবজেলে ২২ দিন রাখার পর সেখান থেকে পাঠানো হয় দমদম কেন্দ্রীয় কারাগারে। পরে জানতে পারি বিষয়টি মাসুদ সাঈদী জানতে পারেন এবং আমার ছেলেকে ভারত পাঠিয়ে দেন। কারাগারে থাকার সময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আমার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করে এবং আমার নির্যাতনের বিবরণ নথিভুক্ত করে। দেশে ফিরে এলেও পিরোজপুরে নিরাপত্তার কারণে যেতে পারি না; আত্মগোপনে নিজ জেলার বাইরে অবস্থান করি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্ত্রোপচারের পর আলাদা হলো জোড়া লাগানো জুহি-রুহি
পরবর্তী নিবন্ধরোগ নির্ণয়ে সর্বপ্রথম এআইভিত্তিক এন্ডোস্কোপি সিস্টেমের সংযোজন