আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩ আসনে (চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণের ১৬ আসন, কক্সবাজারের ৪ আসন এবং তিন পার্বত্য জেলার ৩ আসন) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সকলেই এখন ঢাকায়। নিজেদের ভাগ্য পরীক্ষার সুখবরটি অনেকেই আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে নিজ হাতে নিয়ে আসতে চান। মূলত আজ চট্টগ্রাম বিভাগের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নির্ধারণ হবে বৃহত্তর চট্টগ্রামের ২৩ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার কাণ্ডারী কারা হচ্ছেন। বলতে গেলে আজকের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় অসংখ্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর ভিড়ে আসল নৌকার মাঝি কারা হচ্ছেন তাদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে। মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চূড়ান্ত হওয়ার পরও যদি প্রার্থীদের তালিকা আজকে ঘোষণা করা না হয় তাহলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে কারা ভোটের মাঠে নামবেন, তা জানা যাবে আগামীকাল রোববার। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে এখন পর্যন্ত চার বিভাগে নৌকার প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, রোববারের মধ্যে তিনশ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। নতুন মুখও এসেছে, কিছু বাদও পড়েছে। বিজয়ী হতে পারেন এমন প্রাার্থীদের বাদ দেয়নি আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা নৌকার মাঝি হয়ে সংসদে বসেছিলেন, এবার তাদের কেউ কেউ বাদ পড়তে পারেন বলে দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
নৌকার মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে (মনোনয়ন পাননি) তারা বিজয়ী হতে পারবেন না। অনেকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। নতুন করে তাদেরকে প্রার্থী করা হয়নি।
সুতরাং সারাদেশের মতো চট্টগ্রামের সংসদীয় আসন গুলোতে নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি নতুন ক্লিন ইমেজের যে সকল প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছেন তাদের ভাগ্য পরীক্ষা আজকের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় নির্ধারণ হলেও ঘোষণা করা হবে আগামীকাল এমনটাই জানিয়েছেন দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
চট্টগ্রামের ১৬ সংসদীয় আসনের মধ্যে গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি আসন দুটি জাতীয় পার্টি এবং তরিকত ফেডারেশনকে ছেড়ে দেয়া হয়। বাকি ১৪টি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবারও এই দুটি আসন ছেড়ে দেয়া হবে নাকি ১৬ আসনেই দল থেকে প্রার্থী দেয়া হবে তা জানা যাবে আগামীকাল রোববার। চট্টগ্রামসহ সারাদেশের ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। এতে কারো কপাল পুড়তে পারে–কারো কপাল খুলতে পারে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রামের প্রায় আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি মনোনয়ন লাভের দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন এমন প্রার্থীরা সবাই ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাদের সাথে রয়েছেন তাদের কর্মী–সমর্থকরাও। সবার দৃষ্টি এখন ঢাকায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনয়ন ফাইনাল লিস্টে কার নাম স্থান পেয়েছে তা নিয়ে বেশ উদ্বেগ–উৎকণ্ঠায় আছেন বতর্মান সংসদ সদস্যদের অনেকেই।
গত ১৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ গত ২১ নভেম্বর শেষ হয়েছে। এই চার দিনে চট্টগ্রামের ১৬ আসন থেকে আওয়ামী লীগের ২১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান। এবারের মতো এতো রেকর্ড সংখ্যক মনোনয়ন প্রত্যাশী অতীতে কোনো সময় ছিল না বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শেষ মুহূর্তে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ২১৭ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে কে হচ্ছেন ১৬ আসনের নৌকার কাণ্ডারী সেটা সেটা এখন দেখার বিষয়।
একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, এবার চট্টগ্রাম মহানগরী, উত্তর ও দক্ষিণের ১৪ আসনের মধ্যে (চট্টগ্রাম–৫ হাটহাজারী এবং চট্টগ্রাম–২ ফটিকছড়ি ছাড়া) ৫ থেকে ৬টি আসনে নতুন মুখ আসতে পারে।
গত বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মনোনয়ন বোর্ডে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ নিয়ে বৈঠক শেষে রংপুরের ৩৩ ও রাজশাহীর ৩৯টি মিলিয়ে মোট ৭২টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। গতকাল আরো দুই বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোট গ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি রোববার।
