সুইজারল্যান্ড সিংগাপুর থেকে আনা হবে দুই জাহাজ এলএনজি

রমজানে গ্যাস সংকট এড়ানোর লক্ষ্য দেশে পৌঁছাতে সময় লাগবে একমাসের বেশি

হাসান আকবর | বৃহস্পতিবার , ২৫ জানুয়ারি, ২০২৪ at ৭:০৫ পূর্বাহ্ণ

সুইজারল্যান্ড এবং সিংগাপুর থেকে দুই জাহাজ এলএনজি আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আসন্ন রমজানে দেশে যাতে গ্যাস এবং বিদ্যুতের কোনো সংকট না হয় তার আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকার ১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই জাহাজ এলএনজি কিনছে। স্পট মার্কেট থেকে কেনা এসব এলএনজিবাহী জাহাজ দেশে পৌঁছাতে এক মাসেরও বেশি সময় লাগবে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের গ্যাস সেক্টর পুরোপুরি আমদানি নির্ভর। শুধু চট্টগ্রামই নয়, কুমিল্লা, চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকাসহ বিস্তৃত এলাকার গ্যাসের চাপও আমদানিকৃত এলএনজির ওপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আমদানিকৃত গ্যাসের প্রবাহ কোনো কারণে ব্যাহত হলে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়, চাপ কমে যায় বাখরাবাদ এবং তিতাসের গ্রাহকদের সংযোগেও। সম্প্রতি চট্টগ্রাম গ্যাসশূন্য হয়ে যাওয়ার ঘটনার পর শীর্ষ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে।

আসন্ন রমজানসহ সামনের দিনগুলোতে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে যাতে গ্যাসের অভাব প্রকট হয়ে না উঠে সেজন্য আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। ওই দুইটি জাহাজে ৬৭ লাখ ২০ হাজার এমএমবিটিইউ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) থাকবে। লিকুইড এই গ্যাস জাহাজে করে আনার পর মহেশখালীতে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জির টার্মিনালে গ্যাসিফিকেশন করে দেশে সরবরাহ দেয়া হবে। মার্কিন কোম্পানির এফএসআরইউ (ফ্লোটিং সিস্টেম গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) থেকে প্রতিদিন ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ দেয়া হবে। যা দিয়ে চট্টগ্রামে ২৮০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো গ্যাস দিয়ে বাকি গ্যাস ন্যাশনাল গ্রিডে সরবরাহ দেয়া হবে। এই গ্যাস প্রবাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে আসলে চট্টগ্রামের চারটি সার কারখানা, একাধিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং ৬৮টি সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন, ছয় লাখেরও বেশি আবাসিক, বাণিজ্যিক এবং শিল্প গ্রাহকের গ্যাসের যোগান দেয়া হবে।

বর্তমানে যে পরিমাণ এলএনজি টার্মিনালটিতে রয়েছে তা দিয়ে শেষ হওয়ার আগে যাতে নতুন গ্যাসবাহী জাহাজ নোঙর করে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এজন্য সিংগাপুর থেকে এক কার্গো এবং সুইজারল্যান্ড থেকে এক কার্গো এলএনজি কিনে আনা হচ্ছে। স্পট মার্কেট থেকে এই এলএনজি কিনতে সরকারের ১ হাজার ২৪২ কোটি ৮০ লাখ ৯৫ হাজার ৬৮০ টাকা ব্যয় হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই ব্যয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনসহ যাবতীয় আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, স্পট মার্কেট থেকে কেনা দুই কার্গোর এলএনজির মধ্যে এক কার্গো সুইজারল্যান্ডের মেসার্স টোটাল এনার্জি গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড সরবরাহ দেবে। এতে ব্যয় হচ্ছে ৫৯৫ কোটি ৪৫ লাখ ৮৮ হাজার ৬৪০ টাকা। এই জাহাজের প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম ধরা হয়েছে ১৩ দশমিক ৭৭ ডলার। অপর কার্গো সরবরাহ দেবে সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড নামের কোম্পানি। এতে ব্যয় হবে ৬৪৭ কোটি ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৪০ টাকা। এই জাহাজের লিকুইড অবস্থায় থাকা গ্যাসের প্রতি এমএমবিটিইউ’র দাম ধরা হয়েছে ১৪ দশমিক ৯৭ ডলার।

আগামী মাস খানেকের মধ্যে গ্যাস নিয়ে জাহাজ দুইটি মহেশখালীতে পৌঁছালে আসন্ন রমজানে দেশে গ্যাসের কোন সংকট হবে না বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। জাহাজ দুইটি এলএনজি মহেশখালীতে স্থাপিত এফএসআরইউতে দিয়ে চলে যাবে। পেট্রোবাংলার দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা এলএনজি আমদানির যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেন, আসন্ন রমজানসহ পরবর্তী মাসগুলোতে দেশ যাতে গ্যাসের সংকটে না পড়ে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশীতে কাবু জনজীবন
পরবর্তী নিবন্ধ৯ মামলায় জামিন,একটিতে আটকে থাকলেন খসরু