আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতির মাঝে চট্টগ্রাম মহানগরী পুলিশের থানাগুলোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সীমিত পরিসরে টহল, অভিযান, মামলা গ্রহণ এবং জিডি রেকর্ডের মতো কার্যক্রম দিয়ে সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে পুলিশি কার্যক্রম। গতকাল প্রথমদিনে সিএমপির ১১টি থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। আজ আরো কয়েকটি থানার কার্যক্রম শুরু হবে। অচিরেই সিএমপির ১৬টি থানার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হবে বলে সিএমপি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্র জানিয়েছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যু থেকে সৃষ্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ৫ আগস্ট থেকে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। সরকারের পতনের সাথে সাথে থানাগুলোতে হামলা, ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে প্রায় ১০টি থানা পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। থানার আসবাব থেকে শুরু করে নথিপত্র সবই জ্বালিয়ে কিংবা লুট করে নিয়ে যাওয়া হয়। বিক্ষুব্ধ মানুষের হামলায় আহত হন অনেক পুলিশ সদস্য। পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে চলে গেলে সবগুলো থানা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলনে নামেন এবং দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ না দেয়ার ঘোষণা দেন। থানার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। হামলা, লুটপাট, দখল এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে। সেনাবাহিনী এবং আনসার সদস্যদের মাধ্যমে অরাজকতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছিল না।
পুলিশের নতুন আইজি সকলকে ধৈর্য ধরে স্ব স্ব ইউনিটে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু এতেও খুব বেশি সাড়া পাওয়া যায়নি। অবশেষে গত বৃহস্পতিবার শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। গতকাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। দায়িত্ব নিয়ে উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন পুলিশ সদস্যদের কাজে যোগ দিয়ে দায়িত্ব পালনসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন। কিছু শর্তসাপেক্ষে বরখাস্তকৃত পুলিশ সদস্যদের কাজে ফিরিয়ে আনারও ঘোষণা দেয়া হয়।
সরকারের কিছু উদ্যোগের ফলে পুলিশ সদস্যরা গতকাল থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন। যারা বাড়ি ঘরে চলে গিয়েছিলেন তারা ফিরে আসতে শুরু করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল নগরীর ১১টি থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হয়েছে। থানাগুলো হচ্ছে চান্দগাঁও, বায়েজিদ বোস্তামী, খুলশী, পাঁচলাইশ, সদরঘাট, চকবাজার, বাকলিয়া, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, কর্ণফুলী এবং বন্দর থানা। আজ সকাল থেকে কোতোয়ালী, হালিশহর এবং ডবলমুরিং থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু হবে। এগুলোর মধ্যে যেসব থানার ভবন ব্যবহার উপযোগী নেই সেগুলোর প্রাঙ্গণে বসে পুলিশ সদস্যরা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। অপরদিকে ইপিজেড থানার কার্যক্রমও আজ সকাল থেকে নিউমুরিং পুলিশ ফাঁড়িতে শুরু হবে। ভবন ব্যবহার উপযোগী না থাকায় থানার কার্যক্রম শুরু করার জন্য পতেঙ্গা থানার জন্য একটি নতুন ভবন খোঁজা হচ্ছে বলেও সিএমপি সূত্র জানিয়েছে।
এই ব্যাপারে গতরাতে নগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি থানার কার্যক্রম সীমিত পরিসরে শুরু করার কথা উল্লেখ করে বলেন, অচিরেই পুলিশ পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করবে। তিনি বলেন, আমাদের বহু জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা এখন সেনাবাহিনীর সহায়তায় আইনশৃংখলা প্রতিষ্ঠার কাজ করবো। প্রতিটি থানায় দুইটি করে সেনাবাহিনীর টহল টিম কাজ করছে বলে উল্লেখ করে পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে সেনাবাহিনীর পাশাপাশিও পুলিশও টহলে থাকবে। কোথাও কেউ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে তা নিয়ন্ত্রণ করা হবে।