লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। সীমিত সংখ্যক চিকিৎসক নিয়েও গত এক মাসে ২০ হাজার রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই উপজেলার স্বাস্থ্যসেবাকে কার্যকর ও টেকসই রাখতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত এবং জনবল বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতালটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে জনবল ঘাটতির শিকার এই প্রতিষ্ঠানটিতে প্রতিদিন গড়ে ৮০ জনের বেশি রোগী ভর্তি থাকছেন, যা প্রতিষ্ঠানটির ধারণ ক্ষমতার তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে আউটডোর বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিচ্ছেন হাজারের অধিক রোগী। মৌসুমি জ্বর, সর্দি–কাশি, ডায়রিয়া, ত্বকের রোগ, শ্বাসকষ্ট, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় চিকিৎসকদের উপর পড়েছে ব্যাপক চাপ। তবুও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা অতিরিক্ত দায়িত্বের মাঝেও আন্তরিকতার সাথে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৩০ জন চিকিৎসক পদ রয়েছে। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ২৬ জন। এরমধ্যে ৭ জন ডেপুটেশনে ও ২ জন অনুপস্থিত। এই সংকট থাকা সত্ত্বেও গত এক মাসে ২০ হাজার ১২০ জন রোগীকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে বহির্বিভাগে ১৭ হাজার ২৬৭ জন, জরুরী বিভাগে ২ হাজার ৫৯ জন ও ভর্তি ছিলেন ৭৯৪ জন।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রোগীদের লম্বা লাইন বহিঃবিভাগে। শিশু, নারী ও বয়স্ক রোগীরা সেবা নিতে এসে অপেক্ষা করছেন চিকিৎসকদের জন্য। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কয়েকজন রোগী জানান, চিকিৎসক সংকটের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন দরিদ্র রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা না পেলে শহরে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয় অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও যাতায়াতের সীমাবদ্ধতার কারণে। ফলে অনেকেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ছাড়াই বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় দ্রুত পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন তারা।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসাইন জানান, রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। তবে আমরা সব চিকিৎসক, নার্স ও কর্মীদের সমন্বয়ে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছি। পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ, ল্যাবরেটরি ও অন্যান্য জরুরি সেবা সচল রয়েছে। রোগীর চাপ সামলাতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা অতিরিক্ত কাজ করছে এবং সীমিত শয্যা থাকা সত্ত্বেও আমরা কাউকেই ফিরিয়ে দিচ্ছি না। প্রতিটি রোগী যেন প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা পান তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেওয়ার আহ্বান জানান। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লক্সের চিকিৎসাসেবার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এছাড়া চিকিৎসক সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।