ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের কারণে গতকাল চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল সীমিত ছিল। পরিবহন কোম্পানির কর্মকর্তাদের দাবি, বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে গাড়ি চলাচল সীমিত করা বা না চালানোর বিষয়ে কারও কোনো নির্দেশনা ছিল না। বরং সমাবেশ ঘিরে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তাই তারা যেতে ইচ্ছুক ছিলেন না। অনেকে তারিখ পরিবর্তন করেছেন। এসব কারণে যাত্রী কমে যাওয়ায় গাড়িও অন্যান্য দিনের তুলনায় কম ছাড়া হয়।
তবে যাত্রীদের দাবি, গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। তাদের অভিযোগ, দূরপাল্লার বাস কম চলাচল করেছে। অনেক পরিবহন কোম্পানির গাড়ি চলাচল করেনি। গাড়ি চলাচলের এই অবস্থার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। জরুরি প্রয়োজনেও গন্তব্যে যেতে পারেননি।
চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া, অলংকার মোড়, এ কে খান গেট ও বিআরটিসি এলাকা থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের বাস ছেড়ে যায়। কিন্তু গতকাল বিকালে এসব এলাকায় বিভিন্ন বাস কাউন্টারের সামনের রাস্তা ফাঁকা ছিল। কাউন্টারগুলোতেও যাত্রীদের ভিড় ছিল না। সৌদিয়া পরিবহনের কর্মকর্তাদের একজন জানান, প্রতিদিন তাদের কাউন্টার থেকে ২৫টি এসি বাস এবং
৪৫টি নন এসি বাস ঢাকাসহ সারা দেশে ছেড়ে যায়। কিন্তু শুক্রবার খুব কম বাস ছেড়ে গেছে। আবার গাড়িগুলোতে অর্ধেকের বেশি আসন ছিল ফাঁকা। যাত্রী কম থাকায় অনেক গাড়ির যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। গতকালও তাদের কাউন্টার থেকে মাত্র একটি বাস ছেড়ে গেছে।
দামপাড়ায় গ্রিন লাইন বাসের কাউন্টার ছিল যাত্রীশূন্য। কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তারা বলেন, প্রতিদিন এখান থেকে আটটি বাস ঢাকায় যায়। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি বাসও ছেড়ে যায়নি। এর আগের দিন শুক্রবার মাত্র দুটি বাস ছেড়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে সন্ধ্যা ছয়টার বাসে যাত্রী ছিলেন মাত্র তিনজন এবং বিকাল সাড়ে চারটার বাসে ছিলেন মাত্র সাতজন।
একই চিত্র দেখা যায় দামপাড়ায় শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারেও। বিক্রয় নির্বাহী অসীম ঘোষ বলেন, শুক্র ও শনিবার তেমন কোনো চাহিদা ছিল না। তাই বাস বের করা হয়নি। তিনি বলেন, তাদের কাউন্টার থেকে এক ঘণ্টা পরপর গাড়ি ছেড়ে যায়। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত একটি গাড়ি ছেড়ে গেছে, তা–ও বেনাপোলের উদ্দেশ্যে। শুক্রবার কিছু টিকিট বিক্রি করা হলেও পরে পর্যাপ্ত যাত্রী না থাকায় যাত্রীদের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক পরিবহন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বলেন, এই সমাবেশ ঘিরে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। ঢাকায় যাওয়ার পথে কোথাও কোনো ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয় কিনা, আবার ঢাকায় গেলে কোথায় উঠবেন, সেখানে পরিস্থিতি কী হবে তা নিয়ে যাত্রীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছিল। তাই প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও যাত্রীদের ঢাকায় যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ কম ছিল।
এদিকে যাত্রীদের বক্তব্য ছিল উল্টো। তাদের অভিযোগ, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বাস চলাচল কমে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তাদের কারও পারিবারিক প্রয়োজন, কারও ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঢাকায় যাওয়া জরুরি ছিল। কিন্তু বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখেছেন, গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাস নেই। তাই যাত্রা বাতিল করা ছাড়া উপায় ছিল না।