সীমিত আয়ে সংসার চলে না, মধ্যবিত্তরা বিপাকে

জাহেদুল কবির | মঙ্গলবার , ৩০ মে, ২০২৩ at ৫:২৫ পূর্বাহ্ণ

অনেক দিন ধরে নিত্যপণ্যের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। চালডাল, তেলচিনি থেকে শুরু করে সব পণ্যের দামই প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে সেই তালিকায় যুক্ত হয়েছে পেঁয়াজরসুন ও আদা। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে সীমিত আয়ের মানুষ পড়েছে খুবই বিপাকে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। হঠাৎ করে খরচ বাড়ায় অনেকে পরিবার গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, দেশের চাকরি বাজারে এখনো বেশিরভাগ মানুষের বেতনসীমা ১৫ থেকে ২৫ হাজারের ঘরে। আজ থেকে ৫ বছর আগে সেই টাকায় মোটামুটি সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা সম্ভব ছিল। এখন এই সময়ের ব্যবধানে প্রত্যেক পণ্যের দামই দ্বিগুণ কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের সাথে বাসা ভাড়া, সন্তানের পড়াশুনোর খরচ, যাতায়াত ও চিকিৎসার খরচ মেটাতে মাসের প্রথম সপ্তাহে ৯০ শতাংশ টাকা শেষ। বাকি সময়টা আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধারদেনা করে করে চলতে হচ্ছে মধ্যবিত্তশ্রেণীর।

খুচরা বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়, পেঁয়াজ ৯০ টাকায়, রসূন ১৩৫ টাকায়, আদা ৩২০ টাকা, মশুর ডাল ১০০ টাকা, সয়াবিন তেল এক লিটার ১৯৯ টাকা, ২ লিটার ৩৯৫ টাকা, ৩ লিটার ৫৯৫ টাকা এবং ৫ লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। এছাড়া বাজারে মোটা সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৬০ থেকে ৯০ টাকায়। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। এছাড়া পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা, তেলাপিয়া ১৮০ টাকা এবং রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। এছাড়া বাজারে বর্তমানে ৬০ হাজার নিচে কোনো সবজি নেই। আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়।

সোহরাব হাসান নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, বেতন পাই ২২ হাজার টাকা। এরমধ্যে বাসা ভাড়া, গ্যাস বিল ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতেই ১২ হাজার টাকা শেষ। বাকি টাকায় কোনোভাবে টেনেটুনে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্ত মানুষ আলু ভর্তা, ডালডিম খাবে, সেই সুযোগও নেই। সেখানে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম আগের চেয়ে কমেছে। তবে আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানির খরচ বেড়ে গেছে। কোনো ব্যবসায়ী তো আর লোকসান দিয়ে ব্যবসা করবে না। অপরদিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিমত, পাইকারদের থেকে একটা নির্দিষ্ট মুনাফায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনে। বর্তমানে দোকান ভাড়া, গ্যাসবিদ্যুৎ খরচ বেড়েছে। আমাদের অতি মুনাফা করার সুযোগ নেই। এদিকে বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার শুধুমাত্র রমজান এলেই বাজার মনিটরিং করে। মনিটরিংয়ের অভাবে ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইচ্ছে মতো বাড়ায়। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নিত্যপণ্যের এই ঊর্ধ্বগতিতে সবচেয়ে বিপদে আছে মধ্যবিত্ত শ্রেণী। সীমিত আয় দিয়ে সংসার চালানোটা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। পেঁয়াজরসূনআদা শুরু করে তেলডালচিনিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক্সপ্রেসওয়ের রড পড়ে এফোঁড়-ওফোঁড় মাথা, কিশোরের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবাজেটে সর্বজনীন পেনশন পরীক্ষামূলক শুরুর ঘোষণা আসছে