বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণ আতঙ্কে স্থানীয়রা। মাইন বিস্ফোরণে বাংলাদেশি যুবকের পা বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর রোববার তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার ওপারে মাইন বিস্ফোরণে ওমর ফারুক নামে এক রোহিঙ্গা কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে গতকাল বিকাল ৫টা পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তে কোনো ধরনের গোলা বর্ষণ ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর ৪টি মর্টার শেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে তুমব্রু বাজারসহ ১২টি গ্রাম। এর ফলে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে সীমান্তের অধিবাসীরা।
অপরদিকে সীমান্ত সুরক্ষায় কঠোর অবস্থানে রয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সীমান্তে তৎপরতা বাড়িয়েছেন প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
সীমান্তের বাসিন্দারা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু, বাইশফাঁড়ি, রেজু-আমতলী, হেডম্যানপাড়া, ফাত্তাঝিড়ি, ঘুমধুম ও সোনাইছড়ি ইউনিয়নের শূন্যরেখার কাঁটাতার ঘেঁষা সীমান্ত এলাকাগুলোর বিভিন্ন পয়েন্টে মাটির নিচে ল্যান্ডমাইন পুঁতে রেখেছে মিয়ানমার বাহিনী। রোববার সীমান্তবর্তী তুমব্রু বাজারের পার্শ্ববর্তী কোনারপাড়া এলাকায় শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কয়েকজন সদস্য ঝিরিতে মাছ ধরতে যান। এ সময় রোহিঙ্গারা সীমান্তের কাঁটাতার ঘেঁষা পাশের এলাকায় চোরাই পণ্য আনতে গেলে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়। এতে ঘটনাস্থলে ওমর ফারুক (১৭) নামে এক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়। এ সময় আবদুর সাহাবুল্লাহ নামে একজন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হন। হতাহতরা তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সদস্য।
ঘুমধুম ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের সদস্য দিল মোহাম্মদ ভুট্টো বলেন, রোববার মাইন বিস্ফোরণের ঘটনাটি তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ঘটেছে। নিহত কিশোরকে দাফন করা হয়েছে শূন্যরেখায় নির্ধারিত কবরস্থানে। তবে আহত যুবক কোথায় চিকিৎসাধীন রয়েছে জানি না। ধারণা করা হচ্ছে নোম্যান্স ল্যান্ডের রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বাইশফাঁড়ি পাড়ার প্রধান কার্বারী ক্যহ্লাউ তংঞ্চঙ্গ্যা বলেন, বাইশফাঁড়ি পাড়ায় পাহাড়ি-বাঙালি ৬৫ পরিবার রয়েছে। তারা সীমান্ত এলাকাগুলোতে ধান-সবজির চাষ করেছে। মারমা ও তংঞ্চঙ্গ্যা জনগোষ্ঠী জুমচাষ করেছে কাঁটাতার ঘেঁষা পাহাড়ে। সীমান্ত পরিস্থিতি উত্তপ্ত থাকায় বিজিবি ও প্রশাসনের কঠোর বিধিনিষেধ থাকায় খেতে সপ্তাহে এক-দুবার হলেও যেতে পারছেন। কিন্তু সীমান্ত জুড়ে মাটির নিচে মিয়ানমার বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণের কারণে আতঙ্কে আছে সীমান্তবাসী।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্ত এলাকায় মাইন বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়ছে। দুর্ঘটনা রোধে জুমচাষি পাহাড়ি ও বাঙালি অধিবাসীদের সীমান্তে যাতায়াতে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সীমান্তে আনাগোনা কমাতে কঠোর বিধিনিষেধও রয়েছে।
মর্টারের গোলায় কাঁপল তুমব্রু বাজারসহ ১২ গ্রাম : ক’দিন বন্ধের পর গতকাল সন্ধ্যায় ৪টি মর্টার শেলের গোলায় কেঁপে উঠল নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু বাজার ও আশপাশের ১২টি গ্রাম।
বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিপরীতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘর্ষ চলমান রয়েছে। গত কয়েক দিন সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
ব্যবসায়ী আবদুল কাদের ও গ্রাম পুলিশ আবদুল জব্বার জানান, ৩ দিন পর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হঠাৎ সীমান্ত পিলার ৩৪ সংলগ্ন মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট বিজিপি ক্যাম্প থেকে পরপর ৪টি মর্টার শেল ফায়ার করলে বাংলাদেশের তুমব্রু ও বাইশফাঁড়ি এলাকার ১২টি গ্রাম ভূমিকম্পের ন্যায় কেঁপে ওঠে।
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, মর্টার শেলের শব্দে এলাকার লোকজনের মাঝে আতংক দেখা দেয়।
৩৪ বিজিবির একটি সূত্র জানায়, তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বিজিবি কঠোর অবস্থানে আছে। তাদের সদস্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। টহল জেরদার করা হয়েছে।