বাংলাদেশের সীমান্তে নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই জানিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, দেশের সীমান্ত কিন্তু পুুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে বাংলাদেশ–মিয়ানমার বর্ডারটা দখল করে আছে আরাকান আর্মি। ভবিষ্যতে এটা কার হবে, মিয়ানমার নাকি আরাকান আর্মির, তা বলা তো মুশকিল। সেজন্য বিজিবি উভয় পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।
গতকাল শনিবার দুপুরে কক্সবাজারে বিজিবি প্রশিক্ষণ মাঠে উখিয়া বিজিবির ব্যাটালিয়নের (৬৪ বিজিবি) উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান। বিজিবি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের জেরে বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তে স্পর্শকাতরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সীমান্তে একটি ব্যাটালিয়ন স্থাপন সময়ের দাবি ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে নজরদারি ও তৎপরতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কঙবাজারের উখিয়ায় বিজিবি ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করা হলো।
এদিকে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, সীমান্তে ভারতীয়রা আইন না মানলে আরও কঠোর হবে বিজিবি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ–মিয়ানমার সীমান্তের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা, অবৈধ অনুপ্রবেশ, ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য ও অন্যান্য অবৈধ পণ্যের চোরাচালান প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ যেকোনো আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমন এবং সীমান্তবর্তী জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে উখিয়া ব্যাটালিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এর আগে নবগঠিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন (৬৪ বিজিবি), স্টেশন সদর দপ্তর, ঢাকা, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, ঢাকা এবং কে–নাইন ইউনিট অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের পতাকা উত্তোলন করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ২২৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী সীমান্তরক্ষী বাহিনী। এই বাহিনীর রয়েছে অত্যন্ত গৌরবময় ও সমৃদ্ধ ইতিহাস। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এই বাহিনীর সাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। মুক্তিযুদ্ধকালীন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সাহসী ভূমিকা মুক্তিকামী বাঙালিদের সাহস ও প্রেরণা জুগিয়েছে।
একইদিন সকালে কঙবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে বাংলাদেশ যোগাযোগ রাখছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের সভাপতিত্বে এ সভা হয়। উপদেষ্টা বলেন, কঙবাজারে অপহরণ ও মাদকের বিস্তার বেড়েছে। প্রায়ই এসব বিষয় গণমাধ্যমে আসছে। আপনারা (সাংবাদিকরা) এবং স্থানীয় সচেতন মহল জানেন কারা এসব করছে। মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কাগজে–কলমে ১২ লাখ বলা হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি। এরা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। এদের প্রত্যাবাসন ছাড়া সীমান্ত এলাকার অপরাধ কর্মকাণ্ড থামানো মুশকিল। আবার তাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনও সম্ভব নয়। বলতে গেলে রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা ‘শাঁখের করাতে’ রয়েছি।
সীমান্তে আইন না মানলে কঠোর হবে বিজিবি : সীমান্ত হত্যা কোনোভাবে কাম্য নয় উল্লেখ করে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ভারতীয় যারা অনুপ্রবেশ করেন তাদের সুন্দরভাবে নিয়মের মধ্যে গ্রেপ্তার করে হস্তান্তর করি আমরা। সেটা কতটুকু আর করা যাবে? সীমান্তে ভারতীয়রা আইন না মানলে আরও কঠোর হবে বিজিবি।
তিনি বলেন, আমরা বলেছি এটা (সীমান্ত হত্যা) কোনোভাবেই কাম্য নয়, এটা মেনে নেওয়া যায় না। অবৈধ অনুপ্রবেশ হোক আর যাই হোক, হত্যা কোনো চূড়ান্ত সমাধান হতে পারে না। আরও একটি (হত্যা) যদি হয় আমরা পরবর্তী সময় আরও কঠোর অবস্থানে যাব। এটা আমি আশ্বস্ত করতে চাই। তিনি বলেন, অন্য দেশের সীমান্তে অনুপ্রবেশ না করলে সব বাংলাদেশি নিরাপদ।
গতকাল উখিয়া ব্যাটালিয়নসহ (৬৪ বিজিবি) চারটি ইউনিট উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। পতাকা উত্তোলনের পর নবসৃজিত উখিয়া ব্যাটালিয়ন, গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এবং বিজিবি ডগ স্কোয়াড কে–৯ ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল প্যারেড প্রদর্শন করে। পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে রামু সেনানিবাস ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি ও এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আসাদুল্লাহ মিনহাজুল আলম, বিমান বাহিনী কঙবাজার ঘাঁটির এয়ার ভাইস মার্শাল এ এফ এম শামীমুল ইসলাম, কঙবাজারের রিজিয়ন কমান্ডার এমএম ইমরুল হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।