মিয়ানমারে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির দখলে নেয়া চৌকি উদ্ধারে হামলার তীব্রতা বাড়িয়েছে সে দেশের সেনা ও বিজিপি। তুমুল এই সংঘর্ষের জেরে সীমান্ত দিয়ে যাতে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ না করে, সেজন্য কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। তবুও দালালের হাত ধরে নানা কৌশলে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে রোহিঙ্গারা। ক্যাম্পে নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে শাহপরীর দ্বীপ দিয়ে পরিবারের ৮ সদস্য নিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন আব্দুর রশিদ। উঠেছেন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের খালার বাসায়। আব্দুর রশিদ জানান, তার পরিবারের একজন সদস্যকে মেরে ফেলেছে আরাকান আর্মি। দুই দেশের দালালের মাধ্যমে তারা গভীর রাতে অনুপ্রবেশ করেছেন। যার বিনিময়ে দালাল চক্রকে দিতে হয়েছে কয়েক লাখ বার্মিজ মুদ্রা। রশিদের মতোই পরিবারের ছয়জন নিয়ে আরেক রোহিঙ্গা মোহাম্মদ সাজেদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন। তিনিও এসেছেন দালালের হাত ধরে। প্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য, আরাকান আর্মির নির্যাতনের শিকার হয়ে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রগুলোর দাবি, টেকনাফ থেকে বান্দরবান পর্যন্ত সীমান্তে ১৬টি পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে আসছে রোহিঙ্গারা। যার নেপথ্যে রয়েছে ২০ জনের একটি দালাল চক্র। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) মুখপাত্র আমির জাফর জানান, রোহিঙ্গা প্রবেশের কোনো তথ্য তাদের কাছে নেই। এটা বিজিবি বা কোস্টগার্ডের ভালো জানার কথা।
এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত গোলাগুলি, মর্টারশেল নিক্ষেপ ও বোমা হামলার শব্দে কেঁপে উঠছে সীমান্তের এপারের কয়েকটি গ্রাম। ভারী অস্ত্রের বিকট শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর হোসেন।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে তাদের গৃহযুদ্ধ তীব্র আকারে চলছে। কয়েকদিন ধরে মিয়ানমারে বিমান থেকে বোমা হামলা চলছে।
টেকনাফ হ্নীলা এলাকার ছৈয়দ আলম বলেন, দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে সংঘাত অব্যাহত রয়েছে। জান্তা সরকারের অনেক সদস্য ঠিকতে না পেরে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। কিন্তু বিজিবি ও কোস্টগার্ড সতর্ক অবস্থানে আছে।
এ ব্যাপারে টেকনাফ–২ বিজিবির ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, সোমবার (গতকাল) সীমান্তের বিভিন্ন জায়গায় গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। তবে নতুন করে যাতে কেউ সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সর্তক অবস্থানে রয়েছি।
এ বিষয়ে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তে সোমবারও ওপার থেকে গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। নাফ নদীর ওপারে আগুনের কুণ্ডলী দেখা গেছে। তবে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছেন।