সীমান্তের গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে ২ শতাধিক মানুষ

দোছড়ি সীমান্তে প্রচণ্ড গোলাগুলি খোলা হয়েছে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির

নাইক্ষংছড়ি প্রতিনিধি | রবিবার , ২৩ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:২৪ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দোছড়ি সীমান্ত এলাকার ওপারে মিয়ানমার অংশে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এতে এপারে বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাত থেকে দোছড়ি ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত এলাকায় সীমান্ত পিলার ৪৮-৪৯ নম্বরের কাছাকাছি মুহুর্মুহু গুলির শব্দ পাওয়া গেছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান মো. এমরান জানান। আতঙ্কিত লোকজন গ্রাম ছেড়ে নিরাপদ স্থানে গেছে। প্রায় ২ শতাধিক মানুষ গ্রাম ছেড়ে উপজেলা প্রশাসনের আশ্রয় শিবিরে গেছে বলে জানা গেছে।

গোলাগুলির ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন। গুলিতে অল্পের জন্যে রক্ষা পেয়েছেন তিনিসহ ২ গণমাধ্যমকর্মী। তিনি জানান, বিকেলে তিনি সীমান্তের গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে আসা লোকজনের খোঁজ নিতে যান। এ সময় মিয়ানমার থেকে কয়েকটি গুলি এসে চেরারমাঠের ইলিয়াছ ও ইউনুসের ধানক্ষেতে পড়ে। তখন আতংকগ্রস্ত মানুষ জড়ো হয়। এদের অনেকের পরিবার বাড়ি ছেড়ে নিরাপদে চলে গেছে। বাকিরাও প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

তিনি জানান, এর আগে আমতলী মাঠ এলাকায় মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর একটি চৌকিতে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সাথে একটি স্বশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়।

তিনি বলেন, সীমান্তের এ অংশে গোলাগুলির আওয়াজ শুনে মানুষ আতংগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে বাড়ি-ঘর ছেড়ে যাচ্ছে। তাদেরকে জরুরি সেবা দেয়ার জন্যে চাকঢালা জুনিয়র হাই স্কুলে অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন সেখানে খাবারের ব্যবস্থা করেছে। গোলাগুলির ঘটনায় কয়েক গ্রামের ২ শতাধিক মানুষ পালিয়ে এসেছে। আরো আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৪৪ পিলারের নিকটবর্তী আবদুর রহমানসহ কয়েকজন জানান, তারা গতকাল সকাল ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে প্রথম গুলির আওয়াজ শোনেন। বেলা ১২টা থেকে বৃষ্টির মতো গুলির আওয়াজ আসে। শিশু ও নারীরা নিরাপদ দূরত্বে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আতংকিত কিছু লোক সীমান্ত থেকে পালিয়ে আসার খবর পেয়ে তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয়ে আসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অস্থায়ী আশ্রয় শিবির খোলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে লোকজনকে শিবিরে নিয়ে আনার ব্যবস্থা করছেন তারা। চেয়ারম্যান, মেম্বার, গ্রাম পুলিশ ও চৌকিদার-দফাদারদের এসব দেখার জন্যে বলা হয়েছে। তিনি নিজেও সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছেন। বিজিবির একটি সূত্র বলেছে, তারা সবকিছু পর্যবেক্ষণ করছে এবং সতর্ক রয়েছে। টহলও জোরদার করা হয়েছে।বিডিনিউজ সূত্রে জানা যায়, মাইকিং করে একেবারে সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান করা লোকজনদের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে নিরাপদে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাদের কাছাকাছি আত্মীয়-স্বজন নেই তাদেরকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় অথবা স্কুলে এসে আশ্রয় নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।

মিয়ানমার বিষয়ক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, বেশ কিছুদিন ধরেই রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির অবস্থান লক্ষ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বোমা বর্ষণ করছে। সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে প্রচণ্ড গোলাগুলি হচ্ছে। যার কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাগরে নিম্নচাপ, বন্দরে সতর্ক সংকেত
পরবর্তী নিবন্ধআওয়ামী লীগ নির্বাচনমুখী আন্দোলনমুখী বিএনপি