চকরিয়ার ডুলাহাজারাস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের উত্তর–পূর্বাংশের সীমানা প্রাচীর ভেঙে ভেতরে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে দলছুট একটি বন্য হাতি। এতে পার্কের বিশাল অংশ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। এদিকে পার্কের ভেতরে বন্য হাতির তাণ্ডবের খবরে পার্ক লাগোয়া লোকালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। একই আতঙ্ক ভর করছে পার্কে আগত দর্শনার্থীদের মাঝেও। তবে পার্ক কর্তৃপক্ষ বন্য হাতিকে ঘিরে যাতে আগত দর্শনার্থীদের মাঝে আতঙ্ক না ছড়ায় সেজন্য নির্দিষ্ট এলাকায় লাল পতাকা উঁচিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়াসহ পার্কের কর্মীরা মোড়ে মোড়ে টহল জোরদার করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং পার্কের কর্মীরা জানিয়েছেন, গত বুধবার দিবাগত রাত দশটার দিকে পার্কের উত্তর–পূর্বাংশের চা–বাগান সংলগ্ন সীমানা দেওয়ালের কাছে অবস্থান করছিল দুটি বড় আকৃতির বন্য হাতি। এর কিছুক্ষণ পর দলছুট হয়ে পড়ে হাতি দুটি। তন্মধ্যে দলছুট একটি বন্য হাতি পার্কের হাতির গোদা এলাকায় দুই স্থানে এবং কুমিরের বেস্টনীর তিন স্থানের সীমানা দেওয়ালের বিশাল অংশ গুঁড়িয়ে দিয়ে পার্কের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এ সময় হাতিটি পার্কের বিভিন্ন বন্য প্রাণীর বেস্টনী ও পাখিশালার বেস্টনীর বিশাল অংশ লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক মো. মাজহারুল ইসলাম আজাদীকে জানান, বুধবার দিবাগত রাতে দলছুট একটি বন্য হাতি পার্কের উত্তর–পূর্বাংশের পাঁচ স্থানের সীমানা দেওয়াল গুঁড়িয়ে দিয়ে অভ্যন্তরে ঢুকে ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালাতে থাকে। এই অবস্থায় পার্কের সকল কর্মকর্তা–কর্মচারী সতর্ক অবস্থান নেয় এবং হাতিটির গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু হাতিটি এতই বেপরোয়া ছিল যে ধারে–কাছে ঘেঁষারও কারো সুযোগ ছিল না। তাই হাতিটি রাতভর তাণ্ডবলীলা চালায় পার্কে। তিনি আরো জানান, ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে হাতিটিকে পার্কের ভেতর থেকে নানা কৌশল অবলম্বন করে বের করতে সমর্থ হন তারা। এরপর গুঁড়িয়ে দেওয়া সীমানা দেওয়ালের অংশে অস্থায়ীভাবে ঘেরাও দেওয়ার কাজ শুরু করা হয়। এছাড়া পার্কের যেসব স্থানে হাতির আগমণ ঘটে সেখানে লাল পতাকা উঁচিয়ে দিয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যাতে পার্কে আগত পর্যটক–দর্শনার্থীরা ভুল করে ওইসব স্থানে যেতে না পারে সেজন্য কর্মীরা মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। হাতিটির তাণ্ডবে পার্কের আনুমানিক ১০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
পার্ক সূত্র জানায়, এর আগে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে প্রায় ১৮টি বন্য হাতির একটি দল (শাবকসহ) সাফারি পার্কের জীববৈচিত্র্য জোন এলাকায় ঢুকে পড়েছিল। তখন টানা তিনদিন পার্কে অবস্থান করে পার্কের বন্যপ্রাণী আবাসস্থল উন্নয়ন এবং চারণভূমি সৃজনের তিনটি প্রকল্পের দুইশ হেক্টর এলাকায় সৃজিত ফলজ ও বনজ বাগানে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। কারণ সেখানে খাবারের নিরাপদ আবাস খুঁজে পেয়েছিল হাতির দলটি।
এদিকে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের উত্তরাংশের সীমানার কাছের চা–বাগান এলাকার বাসিন্দা নন্না মিয়া, রহিম উদ্দিনসহ একাধিক বাসিন্দা আজাদীকে বলেন, চা–বাগান এলাকায় বন্য হাতি আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় নির্ঘুম রাত কেটেছে তাদের। এমনকি আশপাশের চার–পাঁচটি পাড়ার মানুষও নির্ঘুম রাত কাটায়। এসব পাড়ার লোকজন আগুনের মশালসহ বিভিন্ন কায়দায় হাতি তাড়ানোর কৌশল নিয়ে রাত জেগে পাহারা বসায়। তাদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।