আজ (৬ মার্চ) জাতীয় পাট দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ‘পাট শিল্পের অবদান স্মার্ট–বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। এ উপলক্ষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পাট খাতের সমৃদ্ধির ধারা চলমান রাখতে এবং এই খাতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য এ বছর ১১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কিছু মিল দীর্ঘ ৪০–৫০ বছর ধরে সীতাকুণ্ডকে দেশে–বিদেশে শিল্পনগরীর পরিচিতি এনে দিয়েছিল। এখানে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন সেই পরিচিতি মুছে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাইছড়ি, কুমিরা, বাড়বকুণ্ড এবং বাঁশবাড়িয়া এলাকায় স্থাপিত চারটি পাটকল যেন এতদঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য। এ মিলগুলোতে এখন আর হুইসেল বাজে না আগের মতো। একসময় মিল এলাকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা হাজারো মুদি দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল, চায়ের স্টল, সেলুনসহ ছোট–বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এখানে সেই জুটমিলও নেই, নেই কোনো কোলাহলও। জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) ২৫টি পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার। তারমধ্যে সীতাকুণ্ডে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলও রয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগে গুল আহম্মদ জুট মিলে শ্রমিক–কর্মচারী–শ্রমিক–১৪৯৮ জন, হাফিজ জুট মিলস এ ২৫০৩ জন, এম এম জুট মিলে ৫৯৯ জন এবং আর আর জুট মিলে ৭২৯ জন কর্মকর্তা–কর্মচারী–শ্রমিক কাজ করতেন। এখন তারা সবাই বেকার জীবন যাপন করছেন।
বার আউলিয়া এলাকায় হাফিজ জুট মিলের পাশেই শ্রমিক কলোনি। যারা চাকরির সুবাধে পরিবার স্বজন নিয়ে ৪০–৪৫ বছর ধরে এখানেই বসবাস করে যাচ্ছেন। শ্রমিক কলোনিতে গড়ে উঠেছে কাঁচাবাজারসহ অসংখ্য দোকান পাট। জুট মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে এখন কোনো কোলাহল নেই। অনেক শ্রমিক দেশের বাড়িতে চলে যাওয়ায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়।
হাফিজ জুট মিলস শ্রমিক ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে বলছিল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে একজন করে চাকরি দিবে অথচ আজ তার উল্টো করছে। জুটমিলগুলো বন্ধ না করে বরং কিভাবে চালালে লাভ হবে সেই চেষ্টা করা উচিত ছিল সরকারের।
শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হক বলেন, মিল বন্ধের ফলে দেশে প্রায় এক কোটি মানুষ বেকার হয়ে পড়ছে। সরকার লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে বসিয়ে বসিয়ে যদি খাওয়াতে পারে আমরা শ্রমিকরা কাজ করে কেন খেতে পারবো না। আমরা কি রোহিঙ্গাদের চেয়েও পর হয়ে গেলাম?
সীতাকুণ্ড শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি ও হাফিজ জুট মিলের সিবিএ সভাপতি মাহবুবুল আলম জানান, বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) কর্তৃপক্ষ ২০২০ সালের জুলাই মাসে অব্যাহত লোকসানের অজুহাতে সীতাকুণ্ডের চারটিসহ দেশের ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধ ঘোষণা করে। পরে ২০২১ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্রাচুইটির টাকা পরিশোধ শুরু করে। ইতিমধ্যে ৭০ শতাংশ শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ করা হয়েছে।