ফুলে ফুলে ভরে গেছে শিমগাছ। থোকায় থোকায় ঝুলে আছে শিম। ক্ষেতে শিম, জমির আলে শিম, খালের পাড়ে শিম। বাদ যায়নি বেড়িবাঁধ আর ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দু’পাশও। এ চিত্র শিমের রাজ্যখ্যাত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের। ফলন ভালো আর ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি কৃষকরা। উপজেলা কৃষিবিভাগ জানায়, এবার সীতাকুণ্ডে ২ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, প্রতি হেক্টরে ৩০ টন করে প্রায় ৮৪ হাজার টন শিম উৎপাদন হবে। বিভাগের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, উপজেলার পাঁচ হাজারের বেশি চাষী শিম চাষ করেন। সর্বাধিক শিম উৎপাদন হয় উপজেলার উত্তরে নুনাছরা থেকে ফকিরহাট পর্যন্ত। কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ছাড়াও পাহাড়ী এলাকায় ও ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই ধারে শিম চাষ করে আরো পাঁচ হাজার মেট্রিক টন অধিক উৎপাদন করে। যার হিসাব কৃষি বিভাগে নেই। ঢাকা–চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন বাজারগুলোসহ উপজেলার প্রতিটি হাটে চাষিরা শিম আনেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কমমূল্যে কিনে ট্রাকযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সীতাকুণ্ডের মোহন্তের বাজার, বড় দারোগারহাট, শুকলাল হাট, কুমিরা হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, ল্যাইটা, বাইট্যা, পুঁটি ও ছুরি এ চার প্রকার জাতের শিম হয়। তবে এদের মধ্যে ল্যাইটা শিম এখানে বেশি ফলন হয়ে থাকে।
নুনাছরার কৃষক শরিফুল্লা জানান, শিম চাষ করে আমরা লাভবান হচ্ছি। মাত্র তিন মাস সময় দিয়ে ভালো আয় করা যায়। তিনি বলেন, দুই একর জমিতে ৫ হাজার টাকা খরচ করে ২৫ হাজার টাকার মতো লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে চলতি মাসের শুরুতে এক দিনের বৃষ্টির কারণে অনেকের শিম গাছের ফুল ঝরে পড়েছে। শিমের উপর কালচে এক ধরনের দাগ পড়ে গেছে। তা নাহলে আরো ভালো ফলন হতো।
ইদিলপুরের দিলুয়ারা বেগম (৪০) বলেন, শিমের চাহিদা বেড়েছে, ফলন বেড়েছে তাই জমি, ঘরের আঙ্গিনা, কবরস্থান, রাস্তা, খাল কিছুই বাদ নেই। যেখানেই সুযোগ মিলছে শিম লাগাচ্ছেন সবাই। সমস্যা হচ্ছে, যত বেশি চাষাবাদ হচ্ছে শিমগাছে আসছে নতুন নতুন রোগব্যাধিও। অনেক সময় ওষুধেও কাজ করছে না।
সার–কীটনাশক বিক্রেতা মো. জসিম উদ্দিন বলেন, অনেক নিম্নমানের ও নকল ওষুধে বাজার সয়লাব হয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি চাষিদের সঠিক মাত্রাজ্ঞান না থাকার কারণেই ওষুধ কাজ করছে না এটাও সত্য।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ জানান, এখানের মাটি শিম চাষের জন্য উপযোগী। তবে কৃষকরা জমিতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে শিমের গুণাগুণ হ্রাস পাচ্ছে। তবে শিম চাষীদের এ ব্যাপারে কৃষিবিভাগ থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।