সীতাকুণ্ডে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তন হচ্ছে?

আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে গুঞ্জন, দলের সভায় ডাক পাননি সালাউদ্দিন

মোরশেদ তালুকদার | রবিবার , ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ at ৫:৫২ পূর্বাহ্ণ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম৪ আসনে (সীতাকুণ্ড এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড) বিএনপি প্রার্থী পরিবর্তন করছে? দলটির ভেতরেবাইরে এমন প্রশ্নই ছিল গতকাল। কারণ এদিন দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের নিয়ে রাজধানীতে একটি সভা করে বিএনপি। চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, কুমিল্লা ও সিলেট বিভাগের সংসদীয় আসনে দল মনোনীত প্রার্থীদের এ সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। চট্টগ্রাম৪ আসন থেকে এ সভায় আমন্ত্রণ পান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা লায়ন আসলাম চৌধুরী। কিন্তু ডাকা হয়নি ইতোপূর্বে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী সালাউদ্দিনকে।

এদিকে ওই সভায় উপস্থিত থাকার খবরে গুঞ্জন ওঠে, লায়ন আসলাম চৌধুরীই হচ্ছেন চট্টগ্রাম৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী। উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তার কর্মীসমর্থকরা। তবে কাজী সালাউদ্দিনের ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, দল থেকে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে কিছু জানানো হয়নি। তাই তারা মনে করেন, কাজী সালাউদ্দিনের প্রতি দলের সমর্র্থন এখনো অটুট রয়েছে। কেন্দ্রীয় বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, দল আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি না দেওয়া পর্যন্ত কে দলের টিকিট পাচ্ছেন তা নিশ্চিত করে বলা যাবে না।

জানা গেছে, প্রার্থীদের নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত সভাটি ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক; যেখানে নির্বাচনী বিভিন্ন আইনকানুনসহ নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা করেছেন এ বিষয়ে অভিজ্ঞরা। অনেকটা কর্মশালার মতো ছিল এটি। সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থীদের সঙ্গে সমন্বয় করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। আজাদীকে তিনি বলেন, সভায় চট্টগ্রাম৪ আসন থেকে লায়ন আসলাম চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

সহসাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর মোহাম্মদ হেলাল আজাদীকে জানান, নির্বাচনী আইনকানুনসহ বিভিন্ন বিষয়ে অনেকটা কর্মশালার মতো হয়েছে সভাটি। এদিকে সভায় ডাক না পাওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কাজী সালাউদ্দিন। এছাড়া একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় আসলাম চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

জানা গেছে, ৩ নভেম্বর চট্টগ্রামের ১৬ আসনের মধ্যে ১০টি আসনে দলের প্রাথমিক মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এদিন চট্টগ্রাম৪ আসন থেকে কাজী সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়, যিনি আসলাম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় সেদিন চট্টগ্রামঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন আসলাম চৌধুরীর অনুসারীরা। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়ার দাবি করেন তার অনুসারীরা। বিপরীতে কাজী সালাউদ্দিন নির্বাচনী এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন।

ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগে ২০১৬ সালের ১৫ মে গ্রেপ্তার হন আসলাম চৌধুরী। ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট কারামুক্ত হন তিনি। যদিও মোসাদ কানেকশনের অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করা হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ছিলেন আসলাম চৌধুরী। পরে ২০০৪ সালে জিয়া পরিষদ চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সভাপতি এবং উত্তর জেলা বিএনপির সদস্য হন। ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি থেকে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এরপর উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব পান। ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদ পান। ২০২৪ সালের ১৫ জুন তাকে যুগ্ম মহাসচিব থেকে সরিয়ে চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা করা হয়। তিনি ২০০৮ সালে ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেন চট্টগ্রাম৪ আসন থেকে। একই আসন থেকে কারাগার থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনেও বিএনপির প্রার্থী হন।

এদিকে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজাদীকে জানিয়েছেন, শুরুতে আসনটিতে আসলাম চৌধুরীকে নিয়ে দলের পরিকল্পনা ছিল। তবে তার বিরুদ্ধে ‘ঋণখেলাপি’র অভিযোগে মামলা আছে। ফলে দল চাইলেও শেষ পর্যন্ত আইনি জটিলতা তার প্রার্থী হওয়ায় বাধা হতে পারে শঙ্কা থাকায় কাজী সালাউদ্দিনকে প্রার্থী করা হয়। তাছাড়া ৮ বছর ৩ মাস কারাভোগের পর জামিনে মুক্ত হয়ে আসলাম চৌধুরী দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির কোনো সভাসমাবেশে উপস্থিত হননি। এমনকি কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতেও তাকে দেখা যায়নি। এতে তার প্রতি দলের হাই কমান্ড কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিল।

আসলাম চৌধুরীর একাধিক ঘনিষ্ঠজন আজাদীকে জানিয়েছেন, মামলা নিয়ে কোনো জটিলতা তৈরি হবে না বলে দলকে আশ্বস্ত করেছেন আসলাম চৌধুরী। তাই তাকে প্রার্থী করার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে বিএনপি।

উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডের পরিচিতি আছে চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশদ্বার হিসেবে। এ উপজেলা নগরের সীমানার সঙ্গে যুক্ত। তবে নির্বাচনী আসন বিন্যাসে সিটি কর্পোরেশনের ৯ ও ১০ নম্বর ওয়ার্ড আসনটির অন্তর্ভুক্ত। ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের ৩৮ কিলোমিটার অংশ এই আসনের অন্তর্ভুক্ত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে হাদির গায়েবানা জানাজা
পরবর্তী নিবন্ধপূর্বাঞ্চল রেলে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ ৬ রুটে বাড়তি ভাড়া কার্যকর