সীতাকুণ্ড সমুদ্র উপকূলে সাগরে বসানো জাল কাটতে বাধা দেয়ায় দুই জেলের ওপর হামলা চালিয়েছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা। এ সময় লাঠির আঘাতে রাম জলদাস (৩২) নামের এক জেলে সাগরে ডুবে নিখোঁজ হয়েছেন। এছাড়া আহত লিটন জলদাসকে (২৮) বোটসহ অপহরণ করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। গতকাল সোমবার বিকেলে উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের মধ্যম মাহমুদাবাদ সমুদ্র উপকূলে এ ঘটনা ঘটে। সাগরে নিখোঁজ ও অপহৃত দুই জেলে সহোদর। তারা একই এলাকার মৃত শীতল জলদাসের ছেলে।
জেলেপাড়ার একাধিক জেলে জানান, গতকাল সোমবার বিকেলে বঙ্গোপসাগরে বসানো জালে মাছ ধরেছে কিনা দেখতে দুই সহোদর সাগরে যান। এ সময় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারী চক্রের সদস্যরা তাঁদের বসানো জাল কেটে ফেলে দেন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে দুর্বৃত্তরা রড ও লাঠি দিয়ে দুই ভাইকে উপর্যুপরি আঘাত করে। একপর্যায়ে রাম জলদাসের মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করলে তিনি মাছ ধরার নৌকা থেকে সাগরের পানিতে পড়ে নিখোঁজ হন। ঘটনার পর আহত লিটন জলদাস মোবাইলে বিষয়টি জেলেপাড়ার বাসিন্দাদের জানান। খবর পেয়ে জেলেপাড়ার নারী–পুরুষ সবাই সাগর উপকূলে ছুটে যায়। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর তারা লিটন জলদাসকে খুঁজে পায়নি। উপকূলে উপস্থিত লোকজনের মাধ্যমে তারা জানতে পারেন–লিটন জলদাসকে হামলাকারীরা নৌকাসহ অপহরণ করে নোয়াখালীর ভাসান চরে নিয়ে গেছে।
স্থানীয়রা আরো জানান, ঘটনার পর তাঁরা থানা–পুলিশকে খবর দেন। এছাড়া সাগরে ড্রেজার মেশিনে থাকা ৮ অবৈধ বালু উত্তোলনকারীকে আটক করে জেলেপাড়ায় নিয়ে যান। পরে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। হামলায় জড়িত অবৈধ বালু উত্তোলনকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি অপহৃত লিটন জলদাসকে তাঁদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানান জেলেপাড়ার বাসিন্দারা।
সাগরে নিখোঁজ স্বামী রাম জলদাসকে খুঁজে পেতে পাঁচ বছরের কন্যা সন্তান পল্লবী দাসকে নিয়ে নৌ–পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন স্ত্রী কনিকা দাস। এ সময় তিনি বলেন, আমার স্বামী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় মেরে সমুদ্রে ফেলে দেয় এবং আমার দেবর লিটন জলদাশকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
জেলে সর্দার প্রদীপ জলদাস বলেন, নোয়াখালী নৌ পুলিশের সহায়তায় অপহৃত জেলে লিটন জলদাসকে উদ্ধার করেছেন বলে থানা–পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। পরে ভিডিও কলের মাধ্যমে লিটন জলদাসের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। প্রদীপ জলদাস আরো জানান, দুই মাস ধরে সাগর উপকূলে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অর্ধশতাধিক জেলে। সাগরে বসানো জেলেদের জালগুলো তারা কেটে নিয়ে গেছে। দাঁদনদারদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কেনা এসব জাল হারিয়ে পথে বসেছেন জেলেরা। আজও (সোমবার) হামলার শিকার হওয়া দুই সহোদরের দেড় লক্ষাধিক টাকার জাল কেটে দিয়েছে এসব বালুখেকো দুর্বৃত্ত।
কুমিরা নৌ–পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওয়ালিউদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে নৌ পুলিশের একটি টিম পাঠানো হয়েছে। হাতিয়া থানা হাট থেকে অপহরণ হওয়া লিটন জলদাসকে উদ্ধার হয়েছে। এছাড়া ভোলা চ্যানেল থেকে এমবি নাবিল ফারহান নামক বাল্কহেডটিকে আটক করা হয়েছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলমগীর জানান, সাগরে নিখোঁজ জেলেকে উদ্ধারে নৌ পুলিশ কাজ করছে। তবে তাঁকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া জেলেকে নোয়াখালী সাগর উপকূল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁকে সেখানকার পুলিশের মাধ্যমে সীতাকুণ্ড থানায় আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।