সীতাকুণ্ডের ঘরে ঘরে জ্বর ও সর্দি-কাশি দেখা দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার হঠাৎ একদিনের জ্বরে মারা গেছেন উপজেলার পূর্ব সৈয়দপুরের রফিকুজ্জামানের পুত্র রেজাউল হক খোকন (৩০)। ভুক্তভোগীরা জানান, এবারের জ্বরে অন্যবারের তুলনায় ভিন্ন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অন্য সময় জ্বরের সঙ্গে সর্দি-কাশি ছিল। এবার ওইসব লক্ষণের পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির পুরো শরীর ম্যাজম্যাজ করছে। অনেকে ব্যথা অনুভব করছেন। একবার শুরু হলে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর থাকে। একবার আক্রান্ত হলে ছয় দিনের আগে সুস্থ হচ্ছেন না রোগীরা। আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরাও। আক্রান্তদের সিংহভাগ পল্লী চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে আক্রান্তদের বেশিরভাগের করোনা পরীক্ষা নিয়ে কোনো উৎসাহ নেই।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, নাকের ঘ্রাণ নষ্ট, স্বাদ না পেলে কিংবা ডায়রিয়া হলে প্রাথমিকভাবে তাদের করোনা সংক্রমিত বলে ধরে নিতে হবে। ফলে দেরি না করে প্রথম দিনেই তাদের অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে। অ্যান্টিজেন টেস্টে নেগেটিভ এলে আরটিপিআর ল্যাবে পরীক্ষা করাতে হয়। এ লক্ষণের বাইরে রোগীদের তৃতীয় দিন থেকে করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। তবে শরীরে ব্যথা থাকলে ডেঙ্গু হতে পারে। এছাড়া মৌসুমি জ্বর, হেপাটাইটিস ই ও টাইফয়েড হতে পারে। তবে যে জ্বরই হোক না কেন, জ্বরের শুরুতে রোগীকে আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। এতে পরিবারের অন্য সদস্যরা এ রোগ থেকে রেহাই পাবে।
সীতাকুণ্ড স্বাস্থ্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ এপ্রিল সীতাকুণ্ডে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর থেকে গতকাল পর্যন্ত উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৬৯ জনে। গত সাত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৭ জন। এছাড়া এক বছরে সীতাকুণ্ডে করোনা সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন ২১ জন।
সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নমুনা সংগ্রহকারী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইউনুছ খান বলেন, গত শুক্রবার তার জ্বর দেখা দেয়। এরপর কোমরে ব্যথা শুরু হয়। ওষুধ সেবনের পরও ছয় ঘণ্টা তাপমাত্রা একই ছিল। শনিবার তিনি নমুনা দিলে করোনা নেগেটিভ আসে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তিনি করোনা পজিটিভ হন।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকরা জানান, তাদের কাছে বেশিরভাগ রোগী জ্বর নিয়ে আসছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও জ্বরের রোগী বেড়েছে। বেড়েছে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও। জ্বর, কাশি ও গলা ব্যথায় দুদিনের বেশি সময় ধরে আক্রান্ত রয়েছেন, তাদের দ্রুত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লু কর্নারে এসে স্যাম্পল দিতে পরামর্শ দেন তারা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রফিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকসাস ডিজিজের করোনা ইউনিটের প্রধান, সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, করোনা রোগী অনেক বেড়ে গেছে। এখন জ্বর হলেই আইসোলেশনে চলে যেতে হবে। রোগীকে অবশ্যই অক্সিজেনের মাত্রা দেখতে হবে। অক্সিজেন লেভেল কমতে থাকলে অপেক্ষা না করে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। কিন্তু আমাদের কাছে রোগী যখন আসে তখন সংকটাপন্ন হয়ে পড়ে। এতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়।