সীতাকুণ্ডে এক গ্রামেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন শতাধিক মানুষ

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | সোমবার , ৩ জুলাই, ২০২৩ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শীতলপুর গ্রামে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। এই এলাকার প্রতিটি পরিবারের একজন বা তার অধিক নারীপুরুষ ও শিশু ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে কেউ কেউ বাসায় চিকিৎসা নিলেও অধিকাংশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ট্রপিক্যাল ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাদের এলাকার প্রতিটি ঘরে প্রতিদিন কেউ না কেউ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন।

বিআইটিআইডি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত অর্ধশতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৫ জনের অধিক রোগী সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার। এছাড়া হাসপাতালটিতে শনিবার সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ৯ জন রোগী। হাসপাতালটিতে গত এক মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত শতাধিক রোগী ভর্তি হয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে অধিকাংশের বয়স ছিল ২০ থেকে ৬০এর ভেতরে। রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিলেও তারা এখনো চিহ্নিত করতে পারেননি ডেঙ্গুর ধরন। হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীদের বিভিন্ন উপসর্গের পাশাপাশি অধিকাংশেরই রক্তচাপ কমে গেছে। সেই সাথে কমেছে রক্তের অনুচক্রিকা (প্লাটিলেট)। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার। এছাড়া রয়েছে নগরীর বিশ্ব কলোনি, কর্নেল হাট, উত্তর কাট্টলী, সীতাকুণ্ডের কুমিরা, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর ইউনিয়ন এলাকার রোগী।

ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরা দক্ষিণ শীতলপুর এলাকার বাসিন্দা ও পিডিবির প্রকৌশলী পলাশ ভৌমিক জানান, শুধু তিনি নন, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে তার আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে তার ছোট ভাই শিমুল ভৌমিক, তার মা প্রতীমা রানী ভৌমিক ও তার বৃদ্ধ বাবাকে।

কুমিরা বাজার এলাকায় অরবিট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক কাজী রেজাউল করিম বলেন, গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ শীতলপুর গ্রাম থেকে জ্বর নিয়ে পরীক্ষা করাতে আসা সকল রোগীর ডেঙ্গুর উপসর্গ পাওয়া গেছে। তাদেরকে বিআইটিআইডি হাসপাতালে পাঠানো হয়।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুর উদ্দিন রাশেদ বলেন, গত এক মাসে হাসপাতালের বহির্বিভাগে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা বেশ কিছু রোগীর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তবে তারা হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছে। উপজেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ ঠেকাতে প্রতিটি এলাকায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে উঠান বৈঠক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন বলে জানান তিনি।

বিআইটিআইডি হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মামুনুর রশীদ বলেন, গত এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের একতৃতীয়াংশ রোগী সীতাকুণ্ডের দক্ষিণ শীতলপুর, বড় কুমিরা, ছোট কুমিরা, ভাটিয়ারী ও সলিমপুর এলাকা থেকে আসা। এসব এলাকায় ঘরে ঘরে এক বা একাধিক সদস্য ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে বলে ভর্তি থাকা রোগীরা জানিয়েছেন। এক এলাকায় এত রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের। ডেঙ্গু আক্রান্তদের দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত
পরবর্তী নিবন্ধতেল খালাসের সর্বাধুনিক যুগে বাংলাদেশ