সি অ্যাম্বুলেন্স অকেজো স্পিড বোট সার্ভিস বন্ধ

জরুরি রোগী নিয়ে ভোগান্তি সন্দ্বীপবাসীর

সন্দ্বীপ প্রতিনিধি | বুধবার , ২৭ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:১০ পূর্বাহ্ণ

রাতে ভেবেছিল পিঁপড়ার কামড়। কিন্তু রোববার সকাল ১০টা থেকে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ৬ বছরের আনিকাকে দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতাল সন্দ্বীপ মেডিকেল সেন্টারে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কর্তব্যরত চিকিৎসক দ্রুত চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন পৌরসভার আট নম্বর ওয়ার্ডের এ বাসিন্দাকে।

শিবেরহাটের পশ্চিমে সায়েদ স’মিল এলাকায় ২৪ এপ্রিল বিকালে আকিব উদ্দিন রুকন ও সাইফুল ইসলাম নামে দুজন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন। সন্দ্বীপ স্বর্ণদ্বীপ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রামে স্থানান্তরের পরামর্শ দেন।

আনিকার চাচা খোদাবক্স সাইফুল অনেক কষ্টে সার্ভিস বোট ভাড়া করে তাকে চট্টগ্রাম নিতে পারলেও আকিব ও সাইফুলকে সেদিন গুপ্তছড়া ঘাট থেকে ফেরত এনে আবার স্বর্ণদ্বীপ হাসপাতালে ভর্তি করান তাদের খালাত ভাই হাসান আল নাহিয়ান। ২০ এপ্রিল স্পিড বোট দুর্ঘটনায় তিন শিশু নিহত ও একজন নিখোঁজের ঘটনায় কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটে স্থানীয় সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতার নির্দেশে স্পিড বোট চলাচল বন্ধ রেখেছেন ঘাট ইজারাদার আনোয়ার চেয়ারম্যান। কিন্তু জরুরি রোগীদের জন্য সি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস কার্যকর না থাকা এবং দুর্ঘটনার কারণে হঠাৎ স্পিড বোট সার্ভিস বন্ধ থাকায় জরুরি রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।

এ নিয়ে আনিকার চাচা খোদাবঙ সাইফুল বলেন, দ্রুত রোগী পারাপারের জন্য এই নৌ-রুটে ২৪ ঘণ্টা চলাচলের উপযোগী দুটি সি অ্যাম্বুলেন্স জরুরি, যাতে করে ধীরগতির লালবোটে (লাইফবোট) আর কোনো প্রসূতি মাকে সন্তান প্রসব করতে না হয়।

হাসান আল নাহিয়ান জানান, জরুরি রোগীদের জন্য আমাদের ঘাটে দ্রুতগামী সার্ভিসের ব্যবস্থা করতে হবে। সেটা সি অ্যাম্বুলেন্স হতে পারে। তাহলে চট্টগ্রামে নিতে আমাদের ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে না।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ফজলুল করিম আজাদীকে জানান, ২০০৮ সালে সন্দ্বীপের জন্য একটা সি অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ দেয়া হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে। তিনি ২০১৩ সালে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার দায়িত্বে আসার পর কয়েকবার মেরামত করে এটি চালানোর উদ্যোগ নিলেও সফল হননি। মেরামতের পরদিনই এটি অদৃশ্য কারণে আবার নষ্ট হয় যায়। এছাড়া সি অ্যাম্বুলেন্সটি এই নৌ-রুটের উপযোগী নয়। এটি হাওর এলাকার জন্য উপযুক্ত।

সর্বশেষ ২০১৬ সালে সি অ্যাম্বুলেন্সকে ঘাট থেকে মালেক মুন্সির বাজার ২০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখন এখানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তবে বর্তমানে গুপ্তছড়া ঘাটে যে সি অ্যাম্বুলেন্সটি আছে সেটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে সন্দ্বীপ উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

জরুরি রোগীদের পারাপারের জন্য কী ব্যবস্থা আছে জানতে চাইলে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সম্রাট খীসা আজাদীকে বলেন, উপজেলা মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে জরুরি রোগী পারাপারের জন্য গুপ্তছড়া ঘাটে সার্বক্ষণিক একটা লালবোট (লাইফবোট) থাকবে। এছাড়া কুমিরা-গুপ্তছড়া নৌ-রুটে চলাচলের উপযোগী সি অ্যাম্বুলেন্স যাতে বরাদ্দ দেয় সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা আজাদীকে বলেন, এখন যে সি অ্যাম্বুলেন্স আছে সেটা হাওরে চলাচলের জন্য উপযোগী। দ্বীপবাসীর জন্য সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলাচলের উপযোগী সি অ্যাম্বুলেন্স লাগবে। আশা করি শীঘ্রই সন্দ্বীপ চ্যানেলে চলাচলের উপযোগী সি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে পারব।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআমিরাতে সড়ক দুর্ঘটনায় বোয়ালখালীর একজনসহ দুই বাংলাদেশি নিহত
পরবর্তী নিবন্ধবঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ বনভূমি রক্ষায় উচ্চ আদালতের রুল