সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে ছেড়ে আসা উদয়ন এক্সপ্রেসে এক তরুণীকে (১৯) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস এ কর্পোরেশনের তিন কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ। ভিকটিম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জিআরপি থানায় ৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। ধর্ষণের বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষকে না জানানোয় ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) আবদুর রহিমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে। গতকাল বুধবার চলন্ত ট্রেনে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে লাকসাম এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। ট্রেনটি লাকসাম ক্রস করার সময় ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে পুলিশকে জানান ভুক্তোভোগী ওই তরুণী। ভোরে এই ঘটনা ঘটলেও বিষয়টি জানাজানি হয় সন্ধ্যার পর।
এদিকে চলন্ত ট্রেনে তরুণী ধর্ষণের ঘটনাটি তদন্তে বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। গতকাল রাতে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কর্মাশিয়াল ম্যানেজারের পক্ষে অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু বক্কর সিদ্দিকী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজারকে (ডিআরএম) বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশনা দেন। রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিলেট থেকে গত মঙ্গলবার রাত ১০টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। চট্টগ্রাম পৌঁছে গতকাল বুধবার সকাল ৮টায়।
রেলওয়ে পুলিশ জানায়, ১৯ বছরের ওই তরুণী উদয়ন এঙপ্রেসে করে চট্টগ্রামে আসছিলেন। তিনি ভৈরব থেকে উঠে খাবার বগিতে অবস্থান করছিলেন। ওই সময় খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মী তরুণীকে প্রথমে উত্যক্ত এবং পরে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। ওই তরুণীর গ্রামের বাড়ি বান্দরবান। তিনি ভৈরবে আত্মীয়দের সঙ্গে থাকেন, বাড়ি যাওয়ার জন্যই চট্টগ্রাম আসছিলেন। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম জিআরপি পুলিশ ট্রেনে খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস এ কর্পোরেশনের তিন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে। এরা হলো মো. জামাল (২৭), মো. শরীফ (২৮) ও মো. রাশেদ (২৭)। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মোহাম্মদ নাজমুল ইসালামের কাছে জানতে চাইলে তিনি আজাদীকে বলেন, সিলেট থেকে আসা উদয়নের খাবার গাড়িতে একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী ৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। এই ঘটনায় গ্রেপ্তার কেউই রেলওয়ের রানিং স্টাফ না (রেলের কেউ না)। এরা ক্যাটারিং সার্ভিসের লোক। ঘটনার জন্য ব্যক্তির দায় ব্যক্তিকেই নিতে হবে। এই ঘটনায় আমাদেরকে (রেলওয়ে) বিব্রত করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এস এ কর্পোরেশন ক্যাটারিং সার্ভিসের সেবা স্থগিত করা হয়েছে।
রেলওয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী আজাদীকে বলেন, গ্রেপ্তার ৩ জনকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।
এদিকে ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনাটি রেল কর্তৃপক্ষকে না জানানোর কারণে ওই ট্রেনের গার্ড আবদুর রহিমকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি আজাদীকে বলেন, উদয়ন এঙপ্রেসে তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় আমাদের রেলের কেউ জড়িত না।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহীদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, গত মঙ্গলবার সিলেট থেকে ছেড়ে আসা উদয়ন এঙপ্রেসের খাবারের বগিতে ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ওই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। চলন্ত ট্রেনে ঘটনাটি ঘটেছে লাকসামের আগে। এটি আমাদের এরিয়ার মধ্যে ঘটেনি। বুধবার সকাল ৮টায় ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে আসার পর আমরা ভিকটিমের (ধর্ষিতার) অভিযোগের ভিত্তিতে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ওই তরুণী পুলিশের হেফাজতে আছে। তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।