সিলেটে আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। গতকাল রোববার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে এ কম্পন অনুভূত হয়। এর আগে গত শনিবার দফায় দফায় ভূমিকম্প হয় সিলেটে। সরকারি হিসাবে শনিবার সকাল থেকে এ পর্যন্ত পাঁচবার ভূমিকম্প হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে। ডাউকি ফল্টের কারণে সিলেট ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা। যে কারণে জৈন্তাপুর সীমান্তের দিকেই এর উৎপত্তি স্থল। খবর বিবিসি, বিডিনিউজ ও বাংলানিউজের।
এদিকে সিলেটে শনিবার ভূমিকম্প হওয়ার পর একটি হেলে পড়া ভবন নিয়ে অনেকে আলোচনা করছেন। বলা হচ্ছে, ভূমিকম্পের কারণেই ভবনটি হেলে পড়েছে। তবে এই দাবির স্বপক্ষে জোরালো কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। দেশের একটি অঞ্চল থেকে ভূমিকম্প উৎপত্তি হওয়ার নজিরবিহীন খবর মানুষকে উৎসুক করে তোলে। সিলেটে এ নিয়ে আতঙ্কের পরিবেশও তৈরি হয়। ঢাকার আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, গতকাল ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে সিলেট অঞ্চলে হওয়া এই ভূমিকম্পটিও ছিল মৃদু। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ২.৮। গতকাল গণমাধ্যমে খবর আসে, ছোট ছোট এসব ধারাবাহিক ভূমিকম্পের কারণে ভবন হেলে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। তবে পনিটুলা এলাকায় আহাদ টাওয়ার নামে ছয়তলা এই ভবনটির মালিকের একজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় বলেছেন, ভবনটি আগে থেকেই কিছুটা হেলে পড়া ছিল। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, তাদের একটি তদন্ত দল মেপে দেখেছে, ভবনটি ইঞ্চিখানেক হেলে রয়েছে। তবে এটি শনিবার হেলে পড়েছে নাকি আগে থেকেই হেলানো ছিল সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ভূমিকম্পের কারণে ভবনটি হেলে পড়লে ভবনের বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দেওয়ার কথা। কিন্তু সেরকম কোনো ফাটল তারা দেখতে পাননি। নির্মাণের সময় ভবন এমন হেলে পড়লে সেটি গ্রহণযোগ্য এবং এতে কোনো ঝুঁকি নেই। পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা আরো তদন্ত চালাবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা হয়েছে আর্থ অবজারভেটরি। আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, সিলেটের জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্টে সকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল হিসেবে আমাদের কেন্দ্রে চিহ্নিত করেছি। ডাউকি ফল্ট পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিনশ কিলোমিটার বিস্তৃত। এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পলিমাটি দিয়ে ঢাকা।
তিনি জানান, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের দুই দিকের ভূ-গঠনে শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। তবে আজকের প্রথম ভূমিকম্পটি ভালোভাবে বোঝা গেলেও পরেরগুলো ছিল আরও মৃদু কম্পন অর্থাৎ খুবই হালকা ধরনের। কিন্তু মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দুটি অঞ্চলে যেভাবে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে। একেবারে হতে পারে, আবার দফায় দফায়ও হতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না। বারবার যেভাবে মৃদু কম্পন অনুভূত হয়েছে তাতে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বড় ধরনের কম্পন হতে পারে। আবার নাও হতে পারে।
২৪ ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ১০ দিনের জন্য বন্ধ : সিলেট অঞ্চলে বারবার ভূকম্পন অনুভূত হওয়ায় ২৪টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল বিকেলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের পর এ তথ্য জানিয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
মেয়র আরিফুল বলেন, ভূ-বিশেষজ্ঞদের মতে একসাথে কয়েকবার ছোট ভূকম্পনের পর ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ওই এলাকায় বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকে। তাই বাড়তি সতকর্তার অংশ হিসেবে তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপুর্ণ ভবনগুলো আগামী ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবনের তালিকায় মার্কেট, দোকানপাট, বাসাবাড়ি এবং পুরাতন সরকারি দপ্তরও রয়েছে।
জরুরি সভা ডেকেছে সরকার : সিলেটে দুদিন দফায় দফায় ভূমিকম্প হওয়ার পর বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা থাকায় ভূমিকম্প প্রস্তুতি সচেতনতা কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে সরকার। আগামীকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় জুম প্ল্যাটফর্মে ভূমিকম্প প্রস্তুতি ও সচেতনতা বৃদ্ধি কমিটির জরুরি সভা আহ্বান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।











