সিলেটের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ দিকে বেশ জমে উঠেছিল। কারণ জয়তো নিশ্চিতই ছিল। একটা সময় মাচ জয়ের জন্য দরকার এক রান। তামিম ইকবালের ফিফটির জন্য প্রয়োজন দুই। সুমন খানের বল সোজা ব্যাটে চালিয়ে দিলেন বরিশাল অধিনায়ক। মিড অফ দিয়ে বল ছুটতে থাকল সীমানার দিকে। নন–স্ট্রাইক প্রান্ত থেকে রানের জন্য ছুটলেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু হাত ইশারায় মাঝ উইকেটে তাকে থামিয়ে দিলেন তামিম। বল বাউন্ডারিতে গেল। তামিমের ফিফটিও হলো। ম্যাচের শেষ বলের এই দৃশ্য কিছুটা বিনোদনের খোরাক জোগাল। এছাড়া ম্যাচে তো লড়াইয়ের মজা তেমন কিছু হলো না। ৮ উইকেটের জয়ে প্লে–অফ নিশ্চিত করল ফরচুন বরিশাল। এবারের বিপিএল শুরুর ম্যাচে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত ইনিংস খেলে বরিশালকে জয় এনে দিয়েছিলেন ফাহিম আশরাফ। সিলেট–চট্টগ্রাম পর্ব শেষে বিপিএল আবার মিরপুরে ফেরার ম্যাচে পাকিস্তানি অলরাউন্ডার জ্বলে উঠলেন বল হাতে। ৫ উইকেট শিকার করলেন তিনি ৭ রানে, এবারের বিপিএলের যা দ্বিতীয় সেরা বোলিং। ফাহিমের সঙ্গে অন্য বোলারদের কার্যকর পারফরম্যান্সে সিলেটের ইনিংস শেষ হয় ১১৬ রানে। তামিমের ফিফটিতে চার ওভার বাকি থাকতে লক্ষ্য স্পর্শ করে বরিশাল। সিলেটের দুর্দশার শুরু ম্যাচের দ্বিতীয় ওভার থেকে। আগের ম্যাচে ঝড়ো ফিফটি করা জর্জ মানজিকে ৪ রানে বিদায় করেন মোহাম্মদ নবি। তিনে নামা জাকির হাসান থেমে যান একটি চার মেরেই। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বল হাতে পেয়ে তৃতীয় ডেলিভারিতেই উড়িয়ে মারার চেষ্টায় উইকেট হারান রনি তালুকদার। ৯ রান করেন তিনি। নতুন ব্যাটসম্যান কাদিম আলিন দুই বল খেলেই পথ ধরেন ড্রেসিং রুমের। মিড অফ থেকে কাভারের দিকে অনেকটা ছুটে ডাইভিং ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ। একাদশে ফেরার ম্যাচে নাহিদুল ইসলামকে ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ের ভার দেয় সিলেট। কিন্তু তিনিও ৮ রান করে ফাহিমের শিকারে পরিণত হন। এই ম্যাচে সিলেটের হয়ে প্রথম খেলতে নামেন আহসান ভাট্টি। পাকিস্তানের বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার। তবে পাকিস্তানের ক্রিকেটেও তেমন পরিচিত কেউ নন তিনি। বিপিএলে তো বটেই, টি–টোয়েন্টি ক্রিকেটেই তার অভিষেক এটি। এই ম্যাচের আগে স্বীকৃত ক্রিকেটে তার অভিজ্ঞতা ছিল কেবল একটি ম্যাচের। গত অক্টোবরে পাকিস্তানের ঘরোয়া ওয়ানডে টুর্নামেন্টে তিনি খেলেছিলেন একটি ম্যাচ। সতীর্থদের ব্যর্থতার দিনে অবশ্য এক প্রান্তে কিছুটা সময় উইকেট আঁকড়ে রাখেন ভাট্টি। সিলেটের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেন কেবল তিনিই। ষষ্ঠ উইকেটে জাকের আলির সঙ্গে গড়েন ৩২ রানের জুটি। সিলেটের ইনিংসের সেরা জুটি এটিই। নাবির বলে সীমানায় ক্যাচ দিয়ে থামে তার ইনিংস। দুটি ছক্কা ও একটি চার মারলেও ২৮ রান করতে পারেন তিনি ২৯ বলে। জাকের আলির শুরুটা ছিল বেশ ভালো। কিন্তু দলকে টেনে তিনি ফিরেন ১৯ বলে ২৪ রান করে। রিশাদ হোসেনের বলে ছক্কা ও চার মেরে দলকে একশ পার করান তানজিম হাসান। পরের বলেই দারুণ ডেলিভারিতে তাকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান রিশাদ। অধিনায়ক আরিফুল ফিরেন ১২ রান করে। পরের ওভারে সুমন খানকে বোল্ড করে ৫ উইকেট পূর্ণ করার পাশাপাশি সিলেটের ইনিংস ১১৬ রানে শেষ করে দেন ফাহিম। ৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ফাহিম।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে এমন চাপহীন ম্যাচেও ভালো কিছু উপহার দিতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়। আগের সাত ইনিংসের একটিতে ৪৮ রানের ইনিংস ছাড়া গোটা টুর্নামেন্টে হাসেনি তার ব্যাট। গতকাল তিনি ফেরেন ৬ রান করেই। তিনে নামা ডেভিড মালানও ফেরেন ৯ রানে। তবে সহজ লক্ষ্য তাড়ায় কোনো বিপদে পড়তে হয়নি বরিশালকে। তবে ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে দলকে এগিয়ে নেন তামিম। বরিশালের জন্য জরুরি ছিল মুশফিকুর রহিমের রানে ফেরা। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আভাস দেন ফর্মে ফেরার। ৬০ বলে ৮১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ম্যাচ শেষ করেন দুজন। ৫১ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। এবারের আসরে তার তৃতীয় ফিফটি এটি। ৩০ বলে ৪২ রানে অপরাজিত থাকেন মুশফিক। এই আসরে তার এটি সর্বোচ্চ ইনিংস।