দুই টেস্টের সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতে এরই মধ্যে সিরিজে এগিয়ে গেছে স্বাগতিক ভারত। তাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট খেলতে নামার আগে কোন চাপ নেই রোহিত শর্মার দলের। যত চাপ বাংলাদেশের ওপর। কারণ পাকিস্তানের ঐতিহাসিক সাফল্যের পর ভারতে যে কুল কিনারা খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ দল। তারপরও প্রথম ম্যাচে হারের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে সিরিজ সমতায় শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে আজ কানপুরের গ্রিন পার্কে ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামছে বাংলাদেশ। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায়।
ভারতের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে চেন্নাইতে দুর্দান্ত শুরু করেছিল বাংলাদেশ। ভারত ম্যাচের লাগাম নেওয়ার আগে দুই সেশন ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রন নিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এরপর আর সে নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে রেকর্ড ২৮০ রানের ব্যবধানে হারের লজ্জা পায় টাইগাররা। এই হারে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট জয় এখনও অধরাই রয়ে গেল। এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ১৪ ম্যাচ খেলে ১২টিতে হার ও দু’টি ড্র করেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই চক্রে ভারতের বিপক্ষে হারের বৃত্ত ভাঙ্গার সুযোগ পাচ্ছে টাইগাররা। যদিও কানপুরের উইকেট অনুকূলে থাকায় বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করার মিশনে ফেভারিট ভারতই। তাই সিরিজ হার এড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। কদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে কানপুরের উইকেট কালো মাটি দিয়ে তৈরি। এটি অনেকটা মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মতো। মিরপুরের মতো কানপুরের উইকেট ধীরগতির এবং নীচু প্রকৃতির। যা ভারতের চেয়ে বাংলাদেশি স্পিনারদের বেশি সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দেওয়ার মূল কারিগর ভারতের দুই প্রধান স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। তবে তারা যে শুধু বল হাতে বাংলাদেশকে কুপোকাত করেছে তা কিন্তু নয়। প্রথম ইনিংসে ব্যাট হাতে ভারতীয় দলের নায়কও এ দুজন। আর বল হাতে টার্নিং এবং স্পোর্টিং উইকেটে বেশি সাফল্য পেয়েছেন তারা। কিন্তু ধীরগতির উইকেটে বাংলাদেশীদের চেয়ে তাদের স্পিনারদের সাফল্যের মাত্রাটা কম।
সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজের সাথে তাইজুল ইসলামকে যুক্ত করে ভারতের বিপক্ষে তিন স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজানোর পরিকল্পনা করতে পারে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে একজন ব্যাটার বাদ দিতে হবে টাইগারদের। প্রথম টেস্টে জসপ্রিত বুমরাহর বলে ডান হাতের আঙুলে ব্যাথা পেয়েছিলেন সাকিব। এতে দ্বিতীয় টেস্টে তার খেলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সাকিবের খেলা নিয়ে কোন শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কানপুরে সংবাদ সম্মেলনে এ ব্যপারে হাথুরুসিংহে বলেন, আমি সাকিবকে নিয়ে কোন অভিযোগ শুনিনি। দলের ফিজিও বা অন্য কারও কাছ থেকে কোন অভিযোগ পাইনি। তাই সে খেলার জন্য প্রস্তুত। যদিও প্রথম টেস্টে স্বাভাবিকের চেয়েও কম বোলিং করেছেন সাকিব। এমনকি ব্যাট হাতেও ভালো কিছু করতে পারেননি। কানপুরে মিরপুরের মতো উইকেটে সাকিবের দলে থাকা বাংলাদেশকে আরও উৎসাহী করবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। হাথুরুসিংহের মতে আমি সাকিবের পারফরমেন্স নিয়ে নয়, আমাদের পারফরমেন্স এবং আমরা কিভাবে আরও ভাল করতে পারি তা নিয়ে চিন্তিত। আমরা সবাই জানি তার কতটা সামর্থ্য আছে।
দ্বিতীয় টেস্টের আগে কানপুরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কারণ সামপ্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সমপ্রদায়ের উপর ঘটে যাওয়া হামলার প্রতিবাদে কিছু ডানপন্থী সংগঠন খেলা বন্ধের দাবি জানায়। এতে দু’দলকে তিন স্তরবিশিষ্ট নিরাপত্তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। টেস্ট ম্যাচের জন্য বিভিন্ন শাখার এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। লাগানো হয়েছে একশর বেশি ক্যামেরা। নিরাপত্তা হুমকি নিয়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নন হাথুরুসিংহে। দ্বিতীয় টেস্টে ভালো শুরু করার নিয়েই বেশি চিন্তিত তিনি। যা প্রতি টেস্টেই বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলে। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে তাতে আমাদের আস্থা আছে। তাই এসব নিয়ে আমরা চিন্তিত নই। বাংলাদেশ দলের ভাবনায় এখন কেবলই দ্বিতীয় টেস্ট। কারণ এই টেস্ট জিততে না পারলে সিরিজ যে হারতে হবে টাইগারদের। বিশ্বের এক নাম্বার টেস্ট দল ভারত। তাই এই দলেল বিপক্ষে জিততে গেলে শতভাগেরও বেশি দিতে হবে। কিন্তু সেটা হয়ে উঠেনি চেন্নাইতে। তাই আজ থেকে শুরু হওয়া নতুন মিশনে নতুন করেই যেন শুরু করতে চায় টাইগাররা।