সিরিজে সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

স্পোর্টস ডেস্ক | সোমবার , ৪ আগস্ট, ২০২৫ at ৯:০০ পূর্বাহ্ণ

জয়ের জন্য শেষ বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন চার রান। শাহিন শাহ আফ্রিদি যখন বল হাতে ছুটছেন, শেষ মুহূর্তে শাফল করে অফ স্টাম্পের বাইরে চলে এলেন ব্যাটসম্যান জেসন হোল্ডার। আফ্রিদি বল করতে চাইলেন তার নাগালের বাইরে। বল পিচ করে বেরিয়ে গেল আরেকটু। বলটা হলো ওয়াইড। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সম্ভাবনা একটু বেড়ে গেল। দুই রান নিতে পারলে অন্তত ম্যাচ তো সুপার ওভারে যাবে। কিন্তু সেই অনিশ্চয়তায় পা না বাড়িয়ে শেষ বলটি বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দু হাত ছড়িয়ে হুঙ্কার ছুড়লেন হোল্ডার। ডাগআউটে তার সতীর্থরাও তখন দারুণ উল্লসিত। ওয়েস্ট ইন্ডিজের এমন উদযাপন দেখে মনে হতে পারে, বড় কোনো টুর্নামেন্ট বা সিরিজ বুঝে জিতে ফেলেছে তারা। আদতে কেবলই একটি ম্যাচ জয়। তবে হারের বলয়ে থাকা দলের জন্য এই জয়ই যে ছিল পরম কাঙ্‌ক্িষত। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচের টিটোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টানা ছয় টিটোয়েন্টি হারার পর জয়ের মুখ দেখল ক্যারিবিয়ানরা। সবশেষ ১৪ টিটোয়েন্টিতে তাদের দ্বিতীয় জয় এটি। শেষের নায়ক হোল্ডার ম্যাচের প্রথম ভাগে দারুণ বোলিংয়ে গড়ে দেন জয়ের ভিত। চার উইকেট নেওয়ার পথে ডোয়াইন ব্রাভোকে ছাড়িয়ে পা রাখেন এই সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে উইকেট শিকারের চূড়ায় । ব্রাভোর ৭৮ উইকেট টপকে হোল্ডারের উইকেট এখন ৮১। এরপর শেষ বলের বাউন্ডারিতে তিনিই ম্যান অব দা ম্যাচ। ফ্লোরিডায় বাংলাদেশ সময় রোববার সকালের ম্যাচটিতে পাকিস্তান ২০ ওভারে তুলতে পারে ১৩৩ রান। সেই লক্ষ্য ছুঁতে একসময় ধুঁকছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সেখান থেকে ম্যাচ নাগালে নিয়ে এসে শেষ ওভারে আবার কঠিন বানিয়ে শেষ পর্যন্ত জিততে পারে তারা। কোনো ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান ৩০ রানও করতে পারেনি। কোনো জুটিও স্পর্শ করেনি ৩০। তবু কোনোরকমে জিততে পারে তারা। দুই দলের স্কোর থেকেই উইকেটের চরিত্র বোঝা যাচ্ছে। বল গ্রিপ করেছে পিচে, কিছুটা থমকে এসেছে ব্যাটে। স্পিনাররা পেয়েছেন টার্ন। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা পাকিস্তানকে শুরুতেই নাড়িয়ে দেন হোল্ডার। আগের ম্যাচের নায়ক সাইম আইয়ুবকে দ্বিতীয় ওভারেই ফেরান তিনি। ৭ রান করেন আইয়ুব। নিজের পরের ওভারে বিদায় করেন সাহিবজাদা ফারহানকে । হোল্ডারের নতুন বলের সঙ্গী বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেন ফেরান ৪ রান করা মোহাম্মদ হারিসকে । পাওয়ার প্লেতে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তোলে কেবল ২৪ রান। ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে ফখর জামানও পারেননি টিকতে । করেন ২০ রান। চতুর্থ উইকেটে ৩৯ বলে ৬০ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক সালমান আলি আগা ও হাসান নাওয়াজ। বরাবরের মতোই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে চার ছক্কায় ২৪ বলে ৪০ করে ফেরেন হাসান নাওয়াজ। তাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন সেই হোল্ডার। সালমান বিদায় নেন ৩৩ বলে ৩৮ করে। এরপর পাকিস্তানের আর কোনো ব্যাটসম্যান সুবিধে করতে পারেননি। শেষ দিকে ১৯ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারায় তারা। রান তাড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটাও ভালো হয়নি। জনসন চার্লসের জায়গায় সুযোগ পেয়ে এক বছর পর টিটোয়েন্টি খেলতে নেমে আলিক আথানেজ ফেরেন ২ রানে। আগের ম্যাচে অভিষেকে ৩৫ করা জুয়েল অ্যান্ড্রু এবার বিদায় নেন একটি ছক্কা ও চার মেরেই। তিনে নেমে অধিনায়ক শেই হোপ ২১ রান করতে বল খেলেন ৩০টি। তিনটি উইকেটই নেন মোহাম্মাদ নাওয়াজ। আগের ম্যাচে তিন উইকেটের পর তিনি এ দিনও তিন উইকেট নেন চার ওভারে স্রেফ ১৩ রান দিয়ে। স্পিন দিয়ে ক্যারিবিয়ানদের চেপে ধরেন সাইম আইয়ুবও। তার শিকার শেরফেন রাদারফোর্ড (১১ বলে ৯) ও রোস্টন চেইস (১৯ বলে ১৬)। নাওয়াজসাইমের সঙ্গে বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার সুফিয়ান মুকিমের দারুণ বোলিংয়ে এক পর্যায়ে টানা ৫১ বল বাউন্ডারি পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ যখন নাগালের বাইরে যাওয়ার পথে, ৫ ওভারে প্রয়োজন ৫৫ রান, তখন হাসান আলির ওভারে গুডাকেশ মোটির দুটি ছক্কায় জমে ওঠে লড়াই। কিপার হারিসের দারুণ ক্ষিপ্রতায় পরের ওভারেই রান আউট হন মোটি (২০ বেল ২৮)। মুকিমের ওই ওভারে বিদায় নেন কেসি কার্টিও। ৩ ওভারে তখন লাগে ৩৬ রান। শাহিন আফ্রিদির বলে রোমারিও শেফার্ডের ছক্কা ও হোল্ডারের চারে লড়াইয়ে থাকে ক্যারিবিয়ানরা। পরের ওভারে টানা দুই বলে হাসান আলিকে ছক্কা ও চার মেরে দলকে জয়ের দুয়ারে নিয়ে যান শেফার্ড। ৮ বলে যখন প্রয়োজন ৮ রান, তখন অবশ্য টানা দুই বলে রান দেননি হাসান। শেষ ওভারে প্রয়োজন পড়ে ৮ রানের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে হারতে দেননি হোল্ডার। সিরিজের পরের ম্যাচ একই মাঠে আজ সোমবার বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডি ভিলিয়ার্সের সেঞ্চুরিতে চ্যাম্পিয়ন দ. আফ্রিকা
পরবর্তী নিবন্ধবাংলাদেশ টিটি দলের জন্য ২৫ বছর বয়সী থাই কোচ পাসারা