আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ (মা.জি.আ.) বলেছেন, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেব সিলসিলা ও জামেয়ার যে খেদমত করে গেছেন, সেটি আজ বৃহদাকার রূপ লাভ করেছে, পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার (রঃ) ও তাঁর টিমে যারা ছিলেন, তাঁদের মাঝে ৮–১০ জনের একটি মিশন ছিল। সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটির (রহঃ) সাথে থেকে তাঁরা সিলসিলার বুনিয়াদ রেখেছেন। আল্লাহ তাআলা’র অনেক বড় অনুগ্রহ যে, সেই সিলসিলা আজ দেশে দেশে ছড়িয়ে গেছে, মানুষের অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে।
আল্লামা মুহাম্মদ সৈয়্যদ সাবির শাহ (মা.জি.আ) এবং আল্লামা শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) গতকাল দুপুরে সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ) বাংলাদেশে প্রথম যেখান থেকে ‘জামেয়ার মিশন’ শুরু করেছিলেন, সেই কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেস পরিদর্শন করেন। যেখানে ১৯৪৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ) প্রথম বাংলাদেশে এসে অবস্থান করেছিলেন। হুজুর সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটিকে (রহঃ) রেঙ্গুন থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিলেন আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার। যিনি ওনার অন্যতম খলিফা হিসেবে বাংলাদেশে ‘জামেয়ার মিশন’ বাস্তবায়নের প্রথম দিন থেকেই সাথে ছিলেন।
কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের দোতলাস্থ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের বাসভবনেই প্রথম খানকা তৈরি করে সেখান থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করতেন সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটি (রহঃ)। জামেয়া প্রতিষ্ঠাসহ যাবতীয় কার্যক্রম এই প্রথম খানকা থেকেই পরিচালিত হয়েছে। হুজুর প্রতিবছরই চট্টগ্রামে আসতেন এবং শুরুর দিকে প্রায় প্রতি বছরই তিনি ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেকের বাসভবনেই অবস্থান করতেন।
কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের দোতলায় উঠে আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ (মা.জি.আ) এবং আল্লামা শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) বেশ আপ্লুত হন। তিনি দিনটিকে একটি ঐতিহাসিক দিন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আমি আজ যেনো একটি ইতিহাসের পাতা উল্টাচ্ছি। এখান থেকেই জামেয়ার যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা ভাবতেই আমি আপ্লুত হচ্ছি। আমার অনেক ভালো লাগছে।
আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ (মা.জি.আ) এবং আল্লামা শাহজাদা সৈয়্যদ মুহাম্মদ কাসেম শাহ্ (মা.জি.আ) আঞ্জুমানের নেতৃবৃন্দসহ গতকাল দুপুরে কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসে পৌঁছালে মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের পুত্র, একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক, দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক এবং নির্বাহী সম্পাদক শিহাব মালেক তাঁদের স্বাগত জানান। এই সময় আঞ্জুমান–এ– রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের সিনিয়র সহ সভাপতি, বিসিবি পরিচালক আলহাজ্ব মনজুর আলম মনজু, ট্রাস্টের সেক্রেটারি আলহাজ্ব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, দৈনিক আজাদীর চিফ রিপোর্টার হাসান আকবর, আশফাক আহমেদ, আলহাজ্ব মোহাম্মদ সিরাজুল হক, মোহাম্মদ গোলাম মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ হোসেন খোকন, এডভোকেট মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার, মোহাম্মদ আরিফুর রহমান, ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, দৈনিক আজাদীর হিসাব বিভাগ, বিজ্ঞাপন বিভাগ এবং কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
আল্লামা মুহাম্মদ সৈয়্যদ সাবির শাহ (মা.জি.আ) বলেন, আউলিয়ায়ে কেরাম ও সুফীয়ায়ে কেরামের অনুসৃত ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মতাদর্শ সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য হযরত সিরিকোটির আদর্শের অনুসারী ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক (রহ.), আলহাজ্ব নূর মোহাম্মদ আল কাদেরীর (রহ.), আলহাজ্ব আবু মোহাম্মদ তবিবুল আলম (রহ.) প্রমূখ প্রত্যেকেই ছিলেন এ মিশনের দ্বীনি কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে একেকজন সৈনিক, নিবেদিত প্রাণ। তাঁদের বহুমাত্রিক অবদানে আজকে শুধু এদেশে নয়, পৃথিবীর দেশে দেশে সুন্নীয়তের কার্যক্রম বিস্তৃত, লাখো কোটি মুসলমানরা নবী প্রেমে উজ্জীবিত।
আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মাদ সাবির শাহ (মা.জি.আ.) বলেন, আলহাজ্ব আমিনুর রহমান সাহেব, আলহাজ্ব আবদুল জলিল সাহেব, আলহাজ্ব আবুল বশর সাহেবসহ আরো অনেক আছেন, তাঁদের নাম তালিকা করে বলতে হবে। তাঁরা সকলে মিলে এখান থেকে সৈয়্যদ আহমদ শাহ সিরিকোটির (রহঃ) সাথে দ্বীন ও সুন্নিয়তের খেদমতে একটি মিশন নিয়ে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। তাঁরা বাংলাদেশে যে ‘জামেয়ার মিশন’ শুরু করেছিলেন, আপনাদেরকেও সেই সিলসিলা, জামেয়ার খিদমতে এগিয়ে আসতে হবে। এই মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। জামেয়ার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তির চর্চা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে হুজুর মুহাম্মদ সাবির শাহ (মা. জি. আ.) বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম কিন্তু কিছু লোক মুসলিম হয়েও ইসলামের নামে সন্ত্রাস ছড়িয়ে দিয়েছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের কারণে ইসলাম যথাযথভাবে উপস্থাপিত না হয়ে বিপরীতভাবে উপস্থাপিত হচ্ছে। যা ইসলামের ক্ষতি করছে। ইসলামের যে সুমহান আদর্শ তাতে কালিমা লাগাচ্ছে। তারা বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশে জামেয়া ইসলামের শান্তির বাণী মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে।
হুজুর কিবলা বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর বর্তমান করুণ পরিস্থিতির চিত্র তুলে ধরেন, ইসলামের শত্রুরা আজকের দুনিয়ায় শান্তির ধর্ম ইসলামকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, অথচ বিশ্বব্যাপী আউলিয়ায়ে কেরাম ইসলামের শান্তি ও সমপ্রীতির বাণী প্রচার করেছে, হযরত তৈয়ব শাহ (রহ.) ১২ ই রবিউল আউয়াল শরীফে এদেশে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবর্তন করে মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠায় এক অনন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যা আজ বিশ্বের দেশে দেশে পালিত হচ্ছে। তবে বিশ্বের সর্ববৃহৎ জশনে জুলুস আয়োজনের কৃতিত্ব বাংলাদেশের সৌভাগ্য। হুজুর কিবলা বর্তমান বিশ্বের নির্যাতিত নিপীড়িত নিষ্পেষিত মজলুম মুসলমানদের কঠিন ক্রান্তিকালে অসহায় দুর্গত মানুষের পাশে দাড়ানো ঈমানী দায়িত্ব হিসাবে বর্তমান সময়ের দাবি পূরণে চ্যারিটেবল দাতব্য তহবিলে সহযোগিতার আহবান জানান।
তিনি বলেন, জুলুসের বর্ণনায় বাংলাদেশের নাম প্রথমেই আসে। এদেশে হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ সিরিকোটির (র.) কৃপাদৃষ্টি পড়েছে, এখানে জামেয়া, সিলসিলার প্রচার–প্রসার ঘটেছে। তাঁর পরে হযরত তৈয়্যব শাহ অতপর হযরত তাহের শাহ সাহেব কিবলা এই মিশনকে বেগবান করেছেন। ইনশাআল্লাহ ওই খান্দানে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই মিলে এই মিশনকে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাব। তিনি মানবকল্যাণের এই মিশন যাঁতে সামনের দিনগুলোতে আরো বেগবান হয় সেই লক্ষ্যে সকলকে ইসলামের মহাত্ম প্রচারের আহ্বান জানান। তিনি মরহুম আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারসহ জামেয়ার শুরু থেকে যারা নিবেদিত ছিলেন তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনার পাশাপাশি দৈনিক আজাদী এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ ও সমৃদ্ধি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করেন।