সিয়াম সাধনা দ্বারা রোজাদারের স্বাস্থ্যসুরক্ষা, মানসিক উৎকর্ষতা ও আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে। সুস্থতা ও নিরোগ জীবনের নিশ্চয়তা দেয় রমজানে মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান রোজার বিবিধ উপকারিতা স্বীকার করে। সিয়াম সাধনা পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত। তাই রোজার ঐশী বিধানটি শুধু ফরজ ইবাদত নয়, এর বিজ্ঞানসম্মত উপকারিতা স্বীকার করতেই হয়। রোজা রাখা দ্বারা পরিপাকতন্ত্র ও পেট বিশ্রাম নেয়। সারা বছর যথেচ্ছ খেয়ে দেয়ে মানবশরীরে যতো রোগ–ব্যাধি বাসা বাঁধে, সিয়াম সাধনা দ্বারা শারীরিক সুস্থতা ও দৈহিক পরিশোধন ঘটে। নবী করিম (দ.) বলেছেন, ‘আল মি’দাতু বায়তু কুল্লি দায়িন।’ অর্থাৎ পেট হচ্ছে সকল রোগের রাজধানী। বিশেষ করে ভরা পেট নানা রোগের উৎস। খাদ্যগর্ভ পেট যতক্ষণ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণে আসবে না ততক্ষণ পর্যন্ত শারীরিক উন্নতি ও দৈহিক পরিশোধন ঘটবে না। সিয়াম সাধনা দ্বারা দেহের পুষ্টির অভাব হয় না এবং স্বাস্থ্যহানিও ঘটে না। বরং অতিরিক্ত চর্বি ও শারীরিক যে মেদ শরীরকে কাবু করে ফেলে সিয়াম সাধনা দ্বারা এর থেকে নিষ্কৃতি মেলে। রোজা দ্বারা শরীর মন মেজাজ ফুরফুরে হয়। শরীর ও মনে চাঙ্গাভাব তৈরি হয়। রোজা মানুষকে কর্মক্ষম বানায়। ডা. আব. ক্যাম ফোর্দের মত হলো, সিয়াম সাধনা পরিপাকতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রচণ্ড ধরনের সাহায্য করে। ডা. ডিউই লিখেছেন, খাদ্যে বিরতি মানে পেটকে বিরতি দেয়া। লোকটিকে উপবাস রাখা উদ্দেশ্য নয়। রোজা দ্বারা তার ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা রোগটিকেই মূলত অনাহারে রাখা হয়। ফলে সিয়াম সাধনায় ফুসফুসের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, যকৃতের ফোঁড়া, মূত্রালয়ের নানাবিধ উপসর্গ এবং গ্যাস্ট্রিক আলসার জাতীয় রোগ থেকে সুস্থ থাকা যায়। রোজা দ্বারা নিউমোনিয়া, সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা দূর হয়, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র অধিক পরিমাণে বিকশিত হয়। পক্ষাঘাত রোগ সেরে যায়। মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে অঙ্গগুলোর অনুভূতি জাগ্রত হয়। চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তি বেড়ে যায়। দৈহিক শান্তি বিরাজ করে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কারণে পশুত্বসুলভ কামনা বাসনা ধ্বংস হয় এবং রোজাদার নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পায়। রোজা দ্বারা ইবাদত বন্দেগিতে আগ্রহ ও উদ্দীপানা জাগে। ফলে মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। নবী করিম (দ.) বলেছেন, ‘আস সিয়ামু জুন্নাতুন’ অর্থাৎ ‘রোজা ঢালস্বরূপ’। ঢাল দ্বারা যেমন আত্মরক্ষা করা যায়, তেমনি সিয়াম সাধনা ঢালের মতো কাজ করে। রোজা রাখলে জীবনঘাতী কোনো রোগ সহজে দেহে প্রবেশ করতে পারে না এবং দেহের অভ্যন্তরে লুকিয়ে থাকা রোগগুলো একে একে ধ্বংস হয়ে যায়।