সিভাসু ৭ একরে সীমিত, কিন্তু স্বপ্ন বিস্তৃত

অধ্যাপক মোঃ আহসানুল হক রোকন | বৃহস্পতিবার , ২১ আগস্ট, ২০২৫ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

১৯৯৬ সালে ৭ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজটি ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) নামে বিকশিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি ধীরে ধীরে তার অবকাঠামোগত ও শিক্ষাগত পরিধি বৃদ্ধি করেছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০০ নতুন শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসে অবস্থিত তিন অনুষদে ভর্তি হয়ে থাকে। ১২০০ এর অধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তাকর্মচারী নিয়ে, নিরবচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সিভাসু।

সিভাসুর ৭ একরের প্রধান ক্যাম্পাসটিতে রয়েছে প্রধান একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, কেন্দ্রীয় পাঠাগার, এনাটমি জাদুঘর, ফিশারিজ জাদুঘর, টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতাল, মেডিক্যাল সেন্টার, সিভাসু জামে মসজিদ, জিমনেসিয়াম, শহীদ মিনার, শুভ ক্যান্টিন ছাত্র ও ছাত্রীহল, শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা, খেলার মাঠ, পোল্ট্রি রিসার্চ ও টিচিং সেন্টার ও ওয়ান হেলথ্‌ ইন্সটিটিউট। প্রধান ক্যাম্পাসে অবস্থিত তিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের জন্যে ৩৯টি ল্যাবরেটরি। সময়ের সাথে সাথে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অত্যাধুনিক জ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সমন্বয় রাখতে সিভাসুর প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। কর্মক্ষেত্রেও সিভাসুর তিন অনুষদের শিক্ষার্থীরাই একইরকম প্রশংসা কুড়িয়ে যাচ্ছে।

তবুও কোথাও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত চাহিদা পূরণে সিভাসু সচেষ্ট হচ্ছে কিনা। সিভাসু বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্পণের দুই দশক পালন করেছে, তবুও এখন ফুড সাইন্স ও টেকনোলজি অনুষদের জন্যে একটি নিবেদিত ভবন তৈরি করা সম্ভব হয়নি। সময়ের চাহিদা পূরণে বর্তমানে আগের তুলনায় প্রায় ২ থেকে ৩ গুণ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে প্রতিটি অনুষদেই। তবে ল্যাব কিংবা শ্রেণিকক্ষ রয়ে গেছে ঠিক পূর্বের আয়তনেই। প্রায় প্রতি অনুষদেই প্রতিটি ব্যবহারিক শ্রেণিকক্ষে ৩০৩৫জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে থাকে, যার কারণে শিক্ষার্থীদের কার্যকর জ্ঞান আহরণ বিঘ্নিত হয়ে থাকে। এ পরিস্থিতিতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ শিক্ষার মান বজায় রেখে উন্নতমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেইসাথে শিক্ষকগণ স্থান সংকট সমস্যা উত্তরণের উপায় হিসেবে আরো জায়গা ও সুবিধা খুঁজে চলেছেন। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও নাগরিক সমাজের নিকট দৃষ্টিগোচর হওয়া প্রয়োজন।

সিভাসুর সংলগ্ন প্রাণিসম্পদের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমনঃ জেলা ও বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ বিভাগ, ফিল্ড ডিজিজ ইনভেস্টিগেশান ল্যাবরেটরি, কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, আঞ্চলিক মুরগি খামার ও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি স্থাপনার উদ্দেশ্য ও কর্মপ্রয়োগের কেন্দ্র সিভাসুর শিক্ষার্থীদের কাজ ও পড়াশোনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে মিলে যায়। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের নিজ নিজ কাজের সাথে মিল রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে যতোটুকু সুবিধা প্রদান করা যায়ু ততোটুকু সুযোগ তৈরি করে দেয়ার মাধ্যমে এই সম্ভাবনাময় সিভাসুর শিক্ষার্থীদের শেখার পরিধিকে আরোও বিস্তৃত করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যৌথ প্রকল্প বা ক্যাম্পাস এক্সটেনশন নিয়ে আলোচনা করে নতুন জায়গা ও অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারে যা একইসঙ্গে শিক্ষার্থী, সরকারি সংস্থা ও সাধারণ জনগণের উপকারে আসবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন সিভাসুর সাথে উল্লিখিত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পারষ্পরিক সহযোগী মনোভাব ও ঘনিষ্টতা।

সিভাসুর প্রতিষ্ঠাকালে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিশ্রুত ৯ একর জায়গার ২ একর পাওনা রয়ে গেছে। সিভাসুর ছাত্রহল ও শুভ ক্যান্টিন ঘেষে থাকা আঞ্চলিক মুরগি খামারটি থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য জুনোটিক রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে যায়, যা অবশ্যই ভাবনার বিষয়। সুতরাং এটিকে যুগপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে কিংবা অন্যত্র স্থানান্তরের কথা ভাবা যেতে পারে।

মোটকথা, একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে পরিবেশ প্রয়োজন, তা গড়ে তোলার জন্য সিভাসুর প্রধান ক্যাম্পাসের ভৌত পরিসর বাড়ানো খুব জরুরি ও সময়ের দাবি। জায়গার সংকট কাটিয়ে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ উন্নত করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, নীতিনির্ধারক, নাগরিক সমাজ ও রাজনীতিকদের এগিয়ে আসতে হবে।

লেখক: পরিচালক, ওয়ান হেলথ্‌ ইন্সটিটিউট, সিভাসু, মনিটর, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশান (কৃষি, চট্টগ্রাম)

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅগ্রিম এলিজি
পরবর্তী নিবন্ধনারীর সমতা ও ন্যায় : এক অসমাপ্ত অভিযাত্রা