শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা এবং র্যাগিংয়ের অপরাধে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ১৯ জন শিক্ষার্থীকে আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে হল থেকে বহিষ্কার এবং ২ জনের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। পৃথক দুই ঘটনায় তদন্ত কমিটি, কারণ দর্শানোর নোটিশ এবং অভিভাবকের সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিভাসুর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ লুৎফুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ২৯ জুন বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস ডিসিপ্লিন কমিটির ১৩তম সভায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের মাত্রা অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এসব শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গতকাল শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুতে নতুন ব্যাচ ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। নতুন ভর্তি হওয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী ১ জানুয়ারি তাদের ইমিডিয়েট সিনিয়রদের দ্বারা লাঞ্ছিত ও র্যাগিংয়ের শিকার হয়। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এরপর তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুসারে এ শাস্তিমূলক সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। আরেকটি ঘটনা ২০২৩ সালের। তখন ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে দুই শিক্ষার্থীকে হলে এবং হলের রুমে মারধর, শারীরিকভাবে হেনস্তা ও আহত করার অভিযোগ করা হয়। এ নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলে অভিযুক্তরা সাড়া দেয়নি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাস্তিমূলক ব্যবস্থ নেয়।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড সাইন্স ও টেকনোলজি অনুষদের ২০২৩–২০২৪ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় একই অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মির্জা মাহফুজ হাসান আকাশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও দশ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা, মো. জাবেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা এবং মো. রশিদ শাবাব শুভ, তানজিম মো. সিয়াম ইকবাল ও মো. মেহেদী হাসানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও জনপ্রতি তিন হাজার টাকা হারে আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া ২০২৩–২০২৪ শিক্ষাবর্ষের নতুন ভর্তিকৃত আট জন শিক্ষার্থীর সাথে শৃঙ্খলাবিরোধী র্যাগিং এবং তাদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. তৌহিদুল ইসলাম শিহাবকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে স্থায়ী বহিষ্কার ও দশ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা, মো. সাজেদ–উল–ইসলাম সিফাতকে হল থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও পাঁচ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা এবং মো. শাহেদুল ইসলামকে ৬ মাসের জন্য হল থেকে বহিষ্কার ও তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একই ঘটনায় ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সিফাত উল্ল্যাহ জিলান, মো. মোস্তাকিম হোসেন রিয়াদ, আসিফ আল হাসান, মো. ইলিয়াস আল জাবের, তাইদুল ইসলাম তপু, মো. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, নাজমুস সাদাত তৌহিদ, আবুল হাসান ফাহাত, মো. শাহরুখ খান ও মো. বেলাল হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও সতর্কীকরণ নোটিশ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া ফিশারিজ অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. রিয়াজুল জান্নাহ ওয়াসীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আজীবনের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল নোমান হলের ৪১৮ নং কক্ষে গত ২০২৩ সালের ১ আগস্ট রাতে এক শিক্ষার্থীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় এবং ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর রাতে টিভি রুমে আরেক শিক্ষার্থীকে আক্রমণ ও আহত করার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় এবং কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব প্রদান না করায় গত ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস ডিসিপ্লিন কমিটির ১১তম সভায় অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত এপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল টেকনোলজি বিভাগের মাস্টার্স শিক্ষার্থী অভিষেক নন্দী ও এনিম্যাল সাইন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের মো. আশিকুল ইসলাম রানার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয় এবং তারা ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয় হতে আর কোনো উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবে না মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিভাসুর জনসংযোগ বিভাগের সিনিয়র উপ–পরিচালক খলিলুর রহমান আজাদীকে বলেন, পৃথক দুইটি ঘটনায় ২১ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্র্তৃপক্ষ। সামনে নতুন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে। এটা সবার জন্য এক ধরনের সতর্ক বাণী বলা যায়।