সিন্ডিকেট শনাক্তে জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত

পেঁয়াজের বাজারে সাংঘাতিক অস্থিরতা

| মঙ্গলবার , ৩১ অক্টোবর, ২০২৩ at ৬:০৭ পূর্বাহ্ণ

পেঁয়াজের বাজারে কী সাংঘাতিক অবস্থা বিরাজ করছে, তা আগে কল্পনাই করা যায়নি! দেশে কোনো শৃঙ্খলা কাজ করছে বলে মনে হয় না। চারদিকে কেমন যেন অস্থিরতা। পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত টনপ্রতি ৮০০ ডলার নির্ধারণ করেছেএমন খবর পেয়েই দেশের বাজারে ফের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এক দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজে ৩০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ এই পেঁয়াজের সঙ্গে আমদানির কোনো সম্পর্ক নেই। মনে হয় মগের মুল্লুক কায়েম হতে চলেছে আমাদের বাংলাদেশে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধির খবরে দেশে পেঁয়াজের বাজারে হঠাৎ করে আবার অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। পাইকারি বাজারে একদিনের ব্যবধানে পণ্যটির দাম মণপ্রতি বেড়েছে ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। ব্যবসায়ীরা ভারতে পণ্যটির দাম বৃদ্ধি এবং দেশে সরবরাহ কমে যাওয়াকে দাম বাড়ার যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন। যদিও দেশের বাজারে এখনো ভারতের বর্ধিত মূল্যের পেঁয়াজ আসেনি। অসাধু সিন্ডিকেট বিনা কারণেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার (২৯ অক্টোবর) দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ ও চাক্তাইয়ে নতুন আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। শনিবার (২৮ অক্টোবর) দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা। পুরোনো ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। বাজারে চীন থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ আছে, তবে সরবরাহ নেই বললেই চলে। এগুলোর দামও ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। শনিবার এসব পেঁয়াজের দাম ছিল ৭০ টাকা। অর্থাৎ কোনো কারণ ছাড়াই এভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়েছে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী। তারা এই কারসাজি করে ভোক্তার পকেট থেকে স্বল্প সময়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেএমন মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে, পেঁয়াজের এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ানোর পরও কর্তৃপক্ষ একেবারেই নির্বিকার।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান পত্রিকান্তরে বলেছেন, ভারত রপ্তানিতে দাম বাড়িয়ে মূল্য নির্ধারণ করলে দেশের বাজারে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়বে, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধি করলেও নতুন দামের পেঁয়াজ এখনো দেশে আসার কথা না। তবে দেখা যাচ্ছে, প্রতিবছরের মতো এবারও অসাধুরা পেঁয়াজের দাম নিয়ে কারসাজি করছে। এছাড়া আলুর বাজারেও এক ধরনের অস্থিরতা চলছে। আর বাজার তদারকি সংস্থার কোনো নজরদারি নেই। এটা কোনোভাবে কাম্য নয়। পরিস্থিতি এমন হয়েছেবাজারে যেন কারও নিয়ন্ত্রণ নেই।

মূল্য নিয়ন্ত্রণে তিন স্তরে নজরদারি করা হবে জানিয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেছেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ে কোন পর্যায়ে কারসাজি করা হয়েছে তা অভিযানের মাধ্যমে বের করা হবে। পাশাপাশি অনিয়মকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘দেশে গত কয়েক বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে; তারপরও বাজারে অস্থিরতা দূর হচ্ছে না। বর্তমানে কৃষকরা নিজেদের বাড়িতেই দেশীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকেন। তাতে পণ্যটি নষ্ট হওয়ার হার বেশি। উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি সারা দেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা না হলে বাজারের অস্থিরতা দূর হবে কিনা, তা বলা মুশকিল। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পেঁয়াজ সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা না থাকায় বর্তমানে কৃষক ফসল ঘরে তোলার পরপরই তা বিক্রি করে দেন। কাজেই সারা দেশে পণ্যটি সংরক্ষণের আধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। পেঁয়াজ উৎপাদনে কৃষকের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য প্রণোদনা প্রদানের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা দরকার।’

কাজেই অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। বাজার তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া মুনাফা করার সুযোগ পায়। অভিযোগ রয়েছে, বাজার পর্যবেক্ষণে জড়িত অসাধু কর্মকর্তাকর্মচারীদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণেই অসাধু ব্যবসায়ীরা পার পেয়ে যাচ্ছে। সিন্ডিকেট শনাক্তে এখনই জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কেউ যাতে অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ না পায়, তাও নিশ্চিত করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে