সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন, এবার বললেন কৃষিমন্ত্রী

পেঁয়াজের বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারে ভারতকে অনুরোধ ।। অন্য দেশ থেকে আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে

| মঙ্গলবার , ২২ আগস্ট, ২০২৩ at ৫:৪৩ পূর্বাহ্ণ

নিত্যপণ্যের বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন, এবার বলেছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ইচ্ছা করলেই মনিটরিং করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। দাম নির্ভর করবে সরবরাহের ওপর। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে নিয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের পর সরকারের সিদ্ধান্ত জানাতে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে আসেন মন্ত্রী। তিনি জানান, এখন থেকে চীন, জাপান, ইরান, মিশর ও তুরস্ক থেকেও পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে। ভারত এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে, যদিও এখন যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে, তা বাড়তি শুল্ক ছাড়াই এসেছে। বছরের পর বছর ধরে বাজারে একই চিত্র দেখা গেলেও সরকার কখনও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। খবর বিডিনিউজের।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নে কৃষিমন্ত্রী বললেন, ইচ্ছা করলেই বাজার মনিটরিং করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। আসলে চাহিদা ও সরবরাহের উপর নির্ভর করে। সরবরাহ বেশি হলে দাম অটো কমবে, এটাই হলো মূল কথা। আপনারা যতই বলেন, আমরা কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছি নাআসলে সিন্ডিকেট ভাঙা অনেক কঠিন।

বাড়তি শুল্ক প্রত্যাহারে ভারতকে অনুরোধ : মন্ত্রী জানান, তারা বাংলাদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যেন শুল্ক অব্যাহতি দিতে ভারতকে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ভারতের এই পদক্ষেপের পর পেঁয়াজের দাম কীভাবে সামলাব, এ বিষয়ে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমরা বলেছি, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে কেন অব্যাহতি দেন না? এতে আপনাদের বাজারে তেমন কোনো প্রভাব পড়বে নাএই অনুরোধ করেছি। তারা বলেছেন, ‘আমরা এই বিষয়টি বিবেচনা করছি’। দ্রুত এই বিষয়টি প্রস্তাব আকারে মন্ত্রীদের গ্রুপে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। তারা বলেছে, বাংলাদেশকে বিশেষ বিবেচনায় দেখবে।

ভারতের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, পেঁয়াজের এই যে জাতীয় সমস্যাযে বছর উৎপাদন কম হয়, দাম বেড়ে যায়। আর যখন বেশি দাম বাড়ে, ভারতে এর ওপর রেস্ট্রিকশন দেয়। ভারত বাড়তি শুল্কারোপ করার পরেও পেঁয়াজের দর খুব বেশি বাড়বে না বলে আশা করছেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, চাষিদের ঘরে অন্য বছরের তুলনায় পেঁয়াজ একটু বেশি আছে। দাম বাড়বে, তবে আকাশচুম্বী হবে না বলে ধারণা করছি।

অন্য দেশ থেকে কালই আমদানি করা যাবে: এক প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, এখন থেকে কেউ ভারত না, চায়না, জাপান, ইরান বা যে কোনো দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে চায়, আমরা তাদেরকেই অনুমতি দেব। কবে থেকে ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজ আমদানি করতে পারবেএ প্রশ্নে জবাব এল, আমদানি তো কাল থেকেই হতে পারে। যারা আমদানি করে, তারা কাল থেকেই করবেঅসুবিধা নাই। তবে ব্যবসায়ীরা চিন্তা করে লাভ হবে কি না।

পেঁয়াজ নিয়ে সমস্যা ‘উৎপাদন নয়, সংরক্ষণে’: দেশে এখন প্রতি হেক্টরে ২০ টন পর্যন্ত পেঁয়াজ উৎপাদন হয় জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের মূল মৌসুম হল মার্চের শেষে ও এপ্রিলের প্রথম দিকে। সে সময় দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, এটা হলো আমাদের সমস্যা। পেঁয়াজ যেহেতু পচনশীল, তাই বেশি ঘরে থাকলে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যদি পেঁয়াজ ঠিকমত সংরক্ষণ করতে পারতাম, তাহলে পেঁয়াজ নিয়ে কোনো সমস্যা হত না। বড় সমস্যা হচ্ছে পেঁয়াজ গুদামে রাখা যায় না। সেজন্য আমাদের প্রায় প্রতি বছর পেঁয়াজ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। পেঁয়াজ চাষ নিয়ে কৃষকের মনস্তত্ত্বের ব্যাখ্যায় আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছর দাম কম ছিল, ফলে চাষিরা এ বছর আবাদ করতে পারে নাই। এজন্য এবছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদন কম হয়েছে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, চাষিরা যাতে ভালো দাম পায়, এজন্য প্রথম দিকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। ফলে চাষিরা ভালো দাম পেয়েছে। এই মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে আমদানি না করলে দেশি পেঁয়াজ কমে যাচ্ছে এবং দাম আস্তে আস্তে বাড়ছিল। সেই প্রেক্ষিতে আমরা আমদানি উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমরা ১৩ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপিও দিয়েছি। কিন্তু এসেছে মাত্র ৩ লাখ টন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ব্রিগেডিয়ার জেনারেল’ পরিচয় দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি
পরবর্তী নিবন্ধআবারও অস্থির পেঁয়াজের বাজার