বাংলাদেশ–ভারত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে চোরাই মোবাইলের ব্যবসা। ভারতে ছিনতাই বা চুরি যাওয়া মোবাইল আসছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশ থেকে একই কায়দায় মোবাইল সেট যাচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্ত এলাকার উভয় পাশে একের পর এক চোরাই মোবাইল উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নামার পর পুলিশের হাতে এসেছে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। কলকাতা পুলিশ নিজেরা তদন্ত শুরুর পাশাপাশি বিষয়টি জানিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরকেও।
ভারত থেকে যেভাবে ও যে কারণে মোবাইল আসছে : বাংলাদেশ পুলিশের গোয়েন্দা সদর দপ্তর থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের বাজারে ভারতীয় চোরাই মোবাইলের খুব চাহিদা। তাছাড়া পাচার করতেও তেমন কাঠখড় পোড়াতে হয় না কারবারিদের। চুরি করা সেলফোনের ছবি ও বিশদ বিবরণ একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আপলোড করে চোরাচালানকারীরা। এই গ্রুপে বাংলাদেশি ও কয়েকজন নেপালিও রয়েছে। চুরি হওয়া ফোনগুলো কেউ পছন্দ করলে সেগুলো প্যাকেট করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়।
শুধু এখানেই শেষ নয়, ভারতীয় চোরাই মোবাইল ফোন বাংলাদেশে পাচারের মূল কারণটিও জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। পুলিশের তদন্তকারী কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, অপরাধীরা সেলফোনগুলো ভারতের বাইরে বিক্রি করে। এর ফলে চোরাই সেলফোনের আইএমইআই নম্বর মুছে ফেলার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হয় না, যার ভিত্তিতে পুলিশ তাদের শনাক্ত করতে পারে না। একবার ফোন অন্য দেশে চলে গেলে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা আইএমইআই নম্বর দিয়ে বেশি কিছু করতে পারে না।
বাংলাদেশের মতো ভারতেও অবৈধভাবে আইএমইআই নম্বর মুছে ফেলে এমন সব সেবাদাতার বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক পুলিশি অভিযানের ফলে অপরাধীরা সীমান্তের এপারে সেলফোন পাঠানো শুরু করেছে। এসব চোরাই মোবাইল কিনে কেউ যদি ভারতসহ যে কোনো দেশে ভ্রমণে গেলে সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সহজেই ধরা পড়তে পারেন।
বাংলাদেশ থেকেও যাচ্ছে একই কায়দায় : চট্টগ্রামসহ সারা দেশে চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইল সেট কেনাবেচায় ‘ভালো দাম’ পেতে পাচার হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। ইদানীং নেপালেও যাচ্ছে চোরাই ফোন। সেখানে এসব চোরাই পণ্যের রমরমা বাণিজ্য গড়ে উঠেছে। বর্তমানে এমন ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চোরাই বা ছিনতাই হওয়া নামিদামি ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোন এজেন্ট বা চক্রের সহায়তায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপালসহ বিভিন্ন দেশে নিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কেনাবেচা এবং বিদেশে পাচারের ক্ষেত্রে মাধ্যম বা এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
জানা গেছে, চোরাই মোবাইল কেনাবেচার সময় চার্জার দেওয়া হয় না। এমনকি পুরাতন চোরাই মোবাইলের ব্যাটারি ও ক্যাসিং বদলে দেওয়া হয়। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।
চট্টগ্রাম মহানগর পিবিআইয়ের এএসপি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম আজাদীকে বলেন, চোরাই বা ছিনতাইকৃত মোবাইল সেটের আইএমইআই নম্বরের সূত্র ধরে সাধারণত ফোনটির অবস্থান শনাক্তসহ সেটি উদ্ধার করা হয়। এর মাধ্যমে চোরাই ফোনসেট কেনাবেচায় জড়িতদেরও গ্রেপ্তার করা হয়। মূলত এই বিষয়গুলো এড়ানোর জন্যই চোর–ছিনতাইকারীরা এক দেশের পণ্য অন্য দেশে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিক্রি করছে। মোবাইল ফোন চুরি বা ছিনতাইয়ের ঘটনা এখন অহরহই ঘটছে। চোর বা ছিনতাইকারী চক্র সখের দামি মোবাইল ফোনটি যদি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে নিয়ে বিক্রি করে তখন আর কী করার আছে? বর্তমানে এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা।