সিনহা হত্যা মামলা : ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামির চার্জ গঠন

টেকনাফ প্রতিনিধি | রবিবার , ২৭ জুন, ২০২১ at ১২:০৩ অপরাহ্ণ

টেকনাফে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার চার্জ গঠন করা হয়েছে। উভয় পক্ষের কৌশলীর যুক্তিতর্ক হওয়ার পর এ চার্জ গঠন করা হয়। সেজন্য আজ রোববার (২৭ জুন) এ মামলায় অভিযুক্ত ওসি প্রদীপসহ ১৫ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে তাদের তোলা হয়। (এস,টি ৪৯৩/২১) মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী ছিলেন কক্সবাজার বারের এডভোকেট দিলীপ দাশ, মহিউদ্দিন খান, মোবারক হোসেন, চট্টগ্রাম হতে আসে এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, এডভোকেট চন্দন দাশসহ ১০-১২ জন আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম ও বাদীর পক্ষে এডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা, সাবেক পিপি এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মামলাটি আজ চার্জ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল।

এজাহারে ৯ জন আসামি থাকলেও তদন্ত কর্মকর্তা ১৫ জনকে আসামি ও ৮২ জনকে সাক্ষী করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ১২ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে। শুধুমাত্র প্রদীপ দাশ, রুবেল শর্মা, সাগর দেব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। দীর্ঘ শুনানি শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/১১৪/১২০খ/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করে আদালত। আদালত স্বাক্ষীর জন্য দিন তারিখ ধার্য করার উল্লেখ করেছেন।

কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, আগের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শুনানি শেষে চার্জ গঠন করা হয়েছে। এ মামলায় জামিন আবেদন করেছেন টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, উপ-পরিদর্শক নন্দ দুলাল রক্ষিত ও কনস্টেবল সাগর দেব।

এর আগে ৯ জুন নন্দ দুলাল ও ১০ জুন ওসি প্রদীপের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। তবে দীর্ঘ ১০ মাসের বেশি সময় পলাতক থাকার পর বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) দুপুরে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈলের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন কনস্টেবল সাগর দেব। আদালত তিন আসামির আবেদন করা জামিন শুনানির জন্য আজ ২৭ জুন তারিখ নির্ধারণ করেছিল।

উল্লেখ্য, আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম। ওই বছরের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশিকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান।

এ ঘটনায় গত ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের সাবেক ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করে টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ নয়জন পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হয়। আদালত মামলাটির তদন্ত করার আদেশ দেন র‌্যাবকে।

এরপর গত ৬ আগস্ট প্রধান আসামি লিয়াকত আলী ও টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাসসহ ৭ পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন।

পরবর্তীতে সিনহা হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে পুলিশের দায়ের মামলার তিনজন সাক্ষী এবং শামলাপুর চেকপোস্টের দায়িত্বরত আমর্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ ছাড়া একই অভিযোগে পরে গ্রেফতার করা হয় টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের সাবেক সদস্য কনস্টেবল রুবেল শর্মাকেও।মামলায় গ্রেফতার ১৪ আসামিকে র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তা বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এদের মধ্যে টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাস ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া ১২ জন আসামি আদালতে ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

সিনহা হত্যার মামলাটি বেআইনি ও অবৈধ দাবি করে ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে প্রধান আসামি লিয়াকতের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন একটি মামলা দায়ের করেন। ওই দিন আদালত মামলাটির পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।

কিন্তু শুনানির ওই নির্ধারিত দিনে সিনহা হত্যার মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস অসুস্থতার কারণে আদালতে উপস্থিত থাকতে না পারায় পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন ১০ নভেম্বর। অন্যদিকে মামলার শুনানির নির্ধারিত দিনে (১০ নভেম্বর) আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির দিন আবারো পিছিয়ে যায়।

ওই দিন (১০ নভেম্বর) আদালত মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য ১৩ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন। এ মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পর দুদকের একটি দুর্নীতি মামলায় চট্টগ্রাম আদালতে হাজির হতে হচ্ছিল ওসি প্রদীপকে। সে কারণে তাকে ২০২০ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়। পরে কক্সবাজার আদালতে মামলার কার্যক্রম শুরু হলে ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে কক্সবাজার কারাগারে আনা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে করোনায় আরও ৭ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৩০০
পরবর্তী নিবন্ধচমেক শিক্ষার্থীদের টিকাদান ২৯ জুন