হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যা করার দাবি করে এ বিষয়ে ‘শেষ মুহূর্তের’ একটি ড্রোন ফুটেজ প্রকাশ করেছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ভিডিওটির বিষয়ে আইডিএফের দাবির সত্যতা যাচাই না করা গেলেও শুক্রবার হামাসের পক্ষ থেকেও সিনওয়ারের নিহতের তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এবার সিনওয়ার হত্যার বর্ণনা এলো সিএনএন, বিবিসি ও দ্য গার্ডিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম গুলোতে। খবর বাংলানিউজের। সেপ্টেম্বরের শুরুতে ইয়াহিয়া সিনওয়ারের ডিএনএর চিহ্ন পাওয়া যায় রাফাহ–তে তেল আল–সুলতান শরণার্থী শিবির এলাকায়। সেখানে সুড়ঙ্গ থেকে কয়েকশ মিটার ভেতরে একটি ভূগর্ভস্থ গিরিপথে তার ডিএনএ’র চিহ্ন মেলে। যেখানে ছয়জন ইসরায়েলি জিম্মির মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। আইডিএফের দাবি, ইসরায়েলি সেনারা সেই এলাকায় গেলে তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে লুকানোর জায়গা ছেড়ে চলে যান সিনওয়ার। এর আগে ইসরায়েলি জিম্মিদের গুলি করে হত্যা করে কিছু দূরে ফেলা হয়।
ইসরায়েলি প্রেস রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বুধবার বিসলামাচ ব্রিগেডের প্রশিক্ষণার্থীরা রাফাহ ক্যাম্পের ধ্বংসাবশেষে তিনজন সশস্ত্র লোককে দেখতে পান। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ হয় তাদের। এতে অন্তত একজন হামাস যোদ্ধা আহত হন। হামাস যোদ্ধারা বিভক্ত হয়ে দুজন একটি ভবনে আশ্রয় নেয়। আহত যোদ্ধা অন্য একটি ভবনে আশ্রয় নেন। এ সময় আইডিএফের টহলরত ট্যাংক গোলা ছুড়লে ভবন দুটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাল্টা হামলায় একটি ভবনের দ্বিতীয় তলা থেকে দুটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেন আহত হামাস যোদ্ধা, যার একটি বিস্ফোরিত হয়। ইসরায়েলি সেনারা ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের পাশের ফাঁকা গর্ত দিয়ে একটি ড্রোন পাঠায়। ড্রোনের ভিডিও স্ক্রিনে দেখা যায়, তিনটি আর্মচেয়ারের মধ্যে একটিতে বসেছিলেন আহত সেই হামাসযোদ্ধা। ড্রোনের শব্দ শুনে তিনি মাথা ঘোরান। তার মুখ একটি স্কার্ফে ঢাকা ছিল এবং গোটা শরীর ছিল ধুলোয় ঢাকা। ড্রোনটি কাছে আসার সঙ্গে সঙ্গে তিনি তার বাম হাতে থাকা একটি লাঠি ছুঁড়েন। বিসলামাচ প্রশিক্ষণার্থীরা তারপর ভবনের দ্বিতীয় তলায় আরেকটি ট্যাঙ্কের থেকে গোলা ছুঁড়ে এবং ওই আহত ব্যক্তি মারা গেছেন কি না নিশ্চিত করতে আবার ড্রোন পাঠায়। তারা ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করেন। নিহতের মুখের বাম পাশে গভীর ক্ষত দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ছবি প্রকাশ হয়ে, তাতে দেখা গেছে চোখ বন্ধ ও মুখ খোলা অবস্থায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে পড়ে আছেন এক ব্যক্তি। আর সেই ব্যক্তিই ছিলেন হামাসপ্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার। আইডিএফ জানায়, বৃহস্পতিবার যখন মরদেহ পরীক্ষা করা হচ্ছিল তখন একজনের সঙ্গে হামাসের নেতার অদ্ভুত ধরনের মিল লক্ষ্য করা যায়। তবে আত্মঘাতী কোনো ফাঁদ থাকার ঝুঁকি বিবেচনায় দেহটি সেখানে রেখেই দেওয়া হয়। মৃতদেহটি সিনওয়ারের কিনা তা নিশ্চিত করতে আঙুল কেটে নেওয়া হয় এবং ডিএনএর সঙ্গে তুলনা করতে পাঠিয়ে দেয় সৈন্যরা। পরে একটি কালো বডি ব্যাগে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল সিনওয়ারের দেহ। সিনওয়ারের লাশের ময়নাতদন্তকারী ইসরায়েলের প্রধান প্যাথলজিস্ট চেন কুগেল এক সাক্ষাৎকারে জানান, মাথায় গুলির আঘাতে নিহত হয়েছেন হামাস নেতা সিনওয়ার। মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও হামাসের এই নেতা মৃত্যুর আগে মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন।
সিএনএন জানিয়েছে, বর্তমানে সিনওয়ারের মরদেহ ইসরায়েলের কাছে আছে। গাজায় বন্দি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে এখন সিনওয়ারের মরদেহ দরকষাকষি হিসেবে ব্যবহার হতে পারে।