সিদ্দিক বাজারের ভবন মালিক দুই ভাইসহ তিনজন গ্রেপ্তার

প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ২২

| শুক্রবার , ১০ মার্চ, ২০২৩ at ৪:৫২ পূর্বাহ্ণ

পুরান ঢাকার সিদ্দিক বাজারে যে ভবনটিতে বিস্ফোরণ ঘটেছে, সেই ভবনের মালিক দুই ভাইসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ওই তিনজন হলেন ভবনটির মূল মালিক মরহুম হাজী মোহাম্মদ রেজাউর রহমানের দুই ছেলে মো. ওয়াহিদুর রহমান (৪৬) ও মতিউর রহমান (৩৫) এবং ওই ভবনের একটি স্যানিটারি দোকানের মালিক আ. মোতালেব মিন্টু (৩৬)। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তিনজনকে গতকাল বৃহস্পতিবার ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ঢাকার আদালতে পাঠায় পুলিশ।

এদিকে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাফে কুইন ভবন থেকে বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১২টার দিকে আরেকটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছিল, ওই ভবনের বেজমেন্টে বাংলাদেশ স্যানিটারি নামের একটি দোকানের কর্মী মেহেদী হাসান স্বপনের খোঁজে তল্লাশি করছিলেন তারা। উদ্ধার করা লাশটি স্বপনের কি না, তা জানা যাবে মর্গে স্বজনরা মরদেহ শনাক্ত করার পর। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন আরো এক যুবকের মৃত্যু হয়। ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন এস এম আইউব হোসেন জানান, ইয়াসিন নামের ২৬ বছরের ওই যুবকের শরীরে ৫৫ শতাংশ পুড়ে গিয়েছিল। তাকে নিয়ে বিস্ফোরণের ঘটনায় ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটল। খবর বিডিনিউজের।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার সিদ্দিক বাজারের ক্যাফে কুইন নামে পরিচিত ওই ভবনে বিস্ফোরণের পর মোট ১৭ জনর লাশ উদ্ধার করা হয়। বুধবার অভিযানের দ্বিতীয় দিনে ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয় দুটি লাশ। আর রাতে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহত ওই ২০ জনের মরদেহ ইতোমধ্যে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার আরও দুইজনের মৃত্যুর খবর জানা গেল।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের ব্যাপারে ডিএমপির অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপকমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনজনকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আব্দুল মাবুদ। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর মাহবুব আলম তাদের দুদিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।

এই ভবনে বিস্ফোরণে ২২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে। এর বাইরে নিহতদের কেউ মামলা করতে চাইলে তা নেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তিনজনকে গ্রেপ্তারের কারণ জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশিদ বলেন, এতবড় একটি দুর্ঘটনার দায় ভবনের মালিকসহ সংশ্লিষ্ট কেউ এড়াতে পারে না। ভবনটিতে কোনো সংস্কার হত না, পয়ঃনিষ্কাশন নিয়মিত তদারকি হত না, পার্কিং এলাকায় গুদাম ভাড়া দেওয়ার নিষেধ থাকার পরেও দেওয়া হয়েছে, ব্যবসায়ীরা জেনেও নিয়েছেন। সংশ্লিষ্ট সংস্থার তদারকিরও অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে। এসব কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে জানিয়ে হারুন বলেন, আর কারও সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

সাততলা কুইন ভবনের মালিক ছিলেন রেজাউর রহমান। এক সময় তিনি ক্যাফে কুইন নামে একটি রেস্তোরাঁ খুলেছিলেন এই ভবনে, সেজন্য স্থানীয়রা ভবনটি ক্যাফে কুইন বিল্ডিং নামে চেনে। রেজাউর অনেক দিন আগে মারা গেছেন। তিনি মারা যাওয়ার পর এখন তার তিন ছেলে এর মালিক। মশিউর রহমান নামে এক ছেলে দেশের বাইরে থাকেন। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ওয়াহিদুর এবং সবার ছোট মতিউর ঢাকায় থাকেন। তারাই ভবনের দেখাশোনা করেন।

বিস্ফোরণের পরদিন বুধবার দুই ভাই ওয়াহিদুর ও মতিউরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মো. জাফর হোসেন বুধবার বলেছিলেন, রাজউক, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর প্রতিবেদনের উপর নির্ভর করছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি। তারা যদি প্রতিবেদন দেয় ভবনটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল, ভবন মালিকদের গাফিলতিতে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে যে অপমৃত্যু মামলা হয়েছে, সেই মামলাটিতে ধারা পরিবর্তন হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মিজানকে বহিষ্কার
পরবর্তী নিবন্ধঅর্ধশতাধিক তরুণীর নামে ফেক আইডি খুলে ব্ল্যাকমেইলিং