সিত্রাং কেড়ে নিল ২৬ প্রাণ

সারা দেশে ৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার ঘরবাড়ি

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৬ অক্টোবর, ২০২২ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে, দেয়াল ধসে এবং পানিতে ডুবে দেশের ১৫ জেলায় অন্তত ২৬ জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। ভারী বর্ষণ ও স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে কয়েক ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস সঙ্গী করে সোমবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। এর কয়েক ঘণ্টা আগে থেকেই ঝড়ো হাওয়া আর ভারী বর্ষণ শুরু হয় উপকূলের জেলাগুলোতে। খবর বিডিনিউজের।
সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন উপকূলীয় জেলায় গাছ ভেঙে সড়ক বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর আসতে থাকে, বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে ও তার ছিঁড়ে বহু এলাকা অন্ধকারে ডুবে যায়। এর মধ্যে ভোলা সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশনে মারা গেছেন চারজন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ঝড়ো বাতাসে ঘরের ওপর গাছ পড়ে প্রাণ গেছে এক দম্পতি এবং তাদের চার বছরের শিশুর।
কক্সবাজারের টেকনাফে এক বিদেশি নাগরিক এবং শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুজন করে, নড়াইলের লোহাগড়া, বরগুনা সদর, নোয়াখালীর সুবর্ণচরে এবং শরীয়তপুরের জাজিরায় একজন করে মারা গেছেন ঝড়ের মধ্যে গাছ ভেঙে পড়ে।
সিরাজগঞ্জের সদরে যমুনা নদীর একটি খালে নৌকা ডুবে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে। পটুয়াখালীতে ট্রলার ডুবে মারা গেছেন এক শ্রমিক। ঝড়ের সময় দেয়াল ধসে ঢাকার হাজারীবাগ ও গাজীপুরের কাপাসিয়ায় দুজনের প্রাণ গেছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে এক শিশুর লাশ, যে জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল বলে পুলিশের ধারণা। মীরসরাইয়ে বঙ্গোপসাগরে বালুর ড্রেজার ডুবে ৮ জন নিখোঁজ হওয়ার পর এক শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
৮০ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন : বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানান, ঝড়ে বিভিন্ন বিতরণ সংস্থার প্রায় দুই হাজার বৈদ্যুতিক খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমাদের চার কোটি ৮০ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৮০ লাখ গ্রাহক এখনো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন আছেন। বিকালের মধ্যে এর ৭০ শতাংশ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে বলে আশা করছি।
ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা এরশাদ হোসাইন জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশের বিভিন্ন সড়কে ২৮৭টি গাছ ভেঙে পড়ার তথ্য তারা পেয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত ১০ হাজার ঘরবাড়ি : ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে দেশের ১০ হাজার ঘরবাড়ি এবং ৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান। ঝড়ের বিপদ কেটে যাওয়ার পর গতকাল দুপুরে মন্ত্রণালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, শুকরিয়া, এটা ঘূর্ণিঝড় পর্যন্ত ছিল, কোনো সুপার সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়নি। বাতাসের গতিবেগ ৮০ কিলোমিটারের উপরে যায়নি।
তিনি বলেন, সরকারের তরফ থেকে ঘর মেরামতের জন্য টিন দেওয়া হবে। আর যাদের মাছের ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা সুদমুক্ত ঋণ পাবেন। দুর্যোগে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হবে। তিনি জানান, দেশের ৬ হাজার ৯২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ১০ লাখ লোক আশ্রয় নিয়েছিলেন ঝড়ের সময়। ঝড় কেটে যাওয়ার পর তারা সবাই আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ড উপকূলীয় এলাকায় ভেসে এল ৫০টি মহিষ
পরবর্তী নিবন্ধবিনামূল্যে ২২ কোটি টাকার জিন থেরাপি পেল শিশু