এক যুগের বেশি সময় পর নেওয়া অনন্যা আবাসিক এলাকার দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্প হিমাগারে। বর্তমানে ‘বায়েজিদ বোস্তামী আবাসিক এলাকা’ নামে নতুন একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। অনন্যা আবাসিক এলাকার মতো বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের আশা বাদ দিয়ে সিডিএ ছোট ছোট আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিশ একরের চেয়ে ছোট আয়তনের নতুন এই প্রকল্প নেয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কাঠাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা দামে ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিংক রোডের পাশে চমৎকার লোকেশনে আবাসিক এলাকাটি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সাদার্ন ইউনিভার্সিটির কাছে সিডিএর তিন একর নিজস্ব জায়গার পাশাপাশি খাস ও ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা হুকুমদখল করে ১৬৭টি আবাসিক এবং ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া ফ্ল্যাট ব্লকও থাকবে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় ক্লিয়ারেন্স পাওয়া গেছে।
সিডিএর সর্বশেষ আবাসন প্রকল্প হচ্ছে অনন্যা আবাসিক। ২০০৮ সালে নেওয়া প্রকল্পটিতে ১ হাজার ৭৪৭টি প্লট রয়েছে। ২০০৮ সালের পর গত তের বছরে সিডিএ আর কোনো আবাসিক এলাকা গড়ে তুলতে পারেনি। অনন্যা দ্বিতীয় পর্যায়ের একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার জন্য এক বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টা করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, অনন্যা দ্বিতীয় পর্যায়ের আবাসিক এলাকা প্রকল্প হিমাগারে চলে গেছে।
বড় আবাসিক এলাকা করতে না পারলেও সিডিএ এবার ২০ একরের চেয়ে কম আয়তনের আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। বায়েজিদ হাউজিং নামের এই প্রকল্পটির ডিটেইল প্রজেক্ট প্ল্যান (ডিপিপি) গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৩৫৭ কোটি ৮২ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা আবাসিক এলাকাটিতে ৩ থেকে ৫ কাঠা আয়তনের ১৬৭টি আবাসিক এবং ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট থাকছে। সিডিএর চিফ ইঞ্জিনিয়ার কাজী হাসান বিন শামস আজাদীকে বলেন, এই আবাসিক এলাকায় ভূমির দাম কাঠাপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা ধরা হবে। ফৌজদারহাট বায়েজিদ বোস্তামী লিংক রোডের পাশে ১৯.৬৫ একর জমির উপর নতুন এই আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পটিতে তিন কাঠার ১২৬টি, চার কাঠার ৭টি এবং পাঁচ কাঠার ৩৪টি আবাসিক প্লট থাকবে। এছাড়া ১৮টি বাণিজ্যিক প্লট এবং ৩৬.৫ কাঠার একটি অ্যাপার্টমেন্ট ব্লক এবং দুটি ইউটিলিটি ব্লক রাখা হয়েছে। প্রকল্পটিতে একটি কৃত্রিম হৃদ এবং সবুজের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কোনো পাহাড় কাটতে হবে না। একটি টিলার সামান্য একটি অংশ প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প এলাকাটি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে গ্রিন সিগন্যাল নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, প্রকল্প এলাকায় সিডিএর তিন একর জায়গা রয়েছে। এর পাশে কিছু খাস জায়গা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জায়গা হুকুমদখলে যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেজন্য জেলা প্রশাসনেরও গ্রিন সিগন্যাল নেওয়া হয়েছে। আগামী জুন মাস থেকে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
কাঠা প্রতি ৩০-৩৫ লাখ টাকা দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকারি নিয়মে ভূমি অধিগ্রহণে জায়গার দাম তিন গুণ পরিশোধ করতে হয়। মৌজা ভ্যালুর তিন গুণ দাম দিতে গিয়ে প্রচুর দাম পড়ে যায়। এর বাইরে ভূমি উন্নয়নেও অনেক টাকা খরচ হয়। বায়েজিদ আবাসিক এলাকায় ভূমি ভরাট করতে বড় খরচ আছে। তিনি জানান, সিডিএ ব্যবসা করতে নয়, নগরবাসীর আবাসন সংকট ঘুচানোর পাশাপাশি নান্দনিক একটি আবাসিক এলাকা গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে।
কাজী হাসান বিন শামস বলেন, আমরা বড় প্রজেক্ট নিয়ে সমস্যায় পড়ছি। তাই ছোট ছোট প্রজেক্ট বাস্তবায়নের চিন্তাভাবনা করছি। বায়েজিদ আবাসিক এলাকার প্রকল্পটি ২০ একরের কম। তাই এটি দ্রুত অনুমোদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ২০ একর পর্যন্ত আবাসিক এলাকার অনুমোদন মন্ত্রণালয় থেকে দিতে পারে, একনেকে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। এই প্রকল্প ১৯.৬৫ একরের। এটির অনুমোদন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকেই পাওয়া যাবে। মন্ত্রণালয়ে সবকিছু পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই কাজ শুরু হবে।
জানা যায়, ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সিডিএ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ১২টি আবাসিক এলাকায় ৬৩৬৪টি প্লট তৈরি করে বিভিন্নজনের নিকট বরাদ্দ দিয়েছে।