বৃহস্পতিবার রাত ১টা ৫ মিনিট। আত্মীয় এক মহিলা রোগী নিয়ে হাজির হলাম বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। একজন চিকিৎসক, দুজন সহকারী আর তাদের চারপাশে ১৫–২০ জন রোগী ও তাদের স্বজন। একপাশে একজন পুরুষ রোগী বেডে শুয়ে আছেন, নাকে–মুখে রক্ত, একসিডেন্ট করেছেন, সেলাই চলছে। অন্যদিকে বেশ কয়জন রোগীর স্বজন চিকিৎসক ও সহকারীদের নানা ধরনের প্রশ্ন বানে জর্জরিত করছেন। এরমধ্যে চিকিৎসককে নিজের রোগীর কথা বলতে গেলে তিনি স্পষ্টত বিরক্ত হন। তবে পূর্ব পরিচিত হওয়ায় তিনি একেবারে অগ্রাহ্যও করতে পারলেন না। বললেন, এমনিতে নানা ধরনের রোগীর চাপে আছি, তার মধ্যে দেখেন ১০/১২ জন লোক মদ খেয়ে রোড একসিডেন্ট করে এসেছেন। সব মিলিয়ে সন্ধ্যা থেকে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।
দৈনিক আজাদীর কাছে এভাবে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স’র নিজের অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করছিলেন স্থানীয় এক কলেজ শিক্ষক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)। সেদিনের রোগী ভর্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও বলেন, চিকিৎসক রোগীর প্রেসক্রিপশন ও পরীক্ষা–নিরীক্ষার কাগজপত্র দেখে ভর্তি হওয়ার কথা বললেও সাফ জানিয়ে দেন, একটা সিটও খালি নেই, মেঝেতে থাকতে হবে। কি আর করার, মেঝেতে পাটি বিছিয়ে স্বজনের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হল। তিনি বলেন, মহিলা ও পুরুষ প্রতিটি ওয়ার্ডে রোগীতে ভরপুর। সিটে যত সংখ্যক রোগী তার চেয়ে বেশি রোগী মেঝেতে। অনেক শিশু ঝুঁকিপূর্ণভাবে মেঝেতে থেকে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছে। এই উপজেলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ও আউটডোরে কি পরিমাণ রোগীর চাপ তা স্বচক্ষে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, বাঁশখালীর প্রায় ৮ লক্ষাধিক জনগণের চিকিৎসার একমাত্র আশ্রয়স্থল এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। প্রতিদিন গড়ে বেড অকুপেন্সি রেইট ১৪২ এর উপরে। এছাড়া শূন্য পদ জুনিয়র কনসালটেন্ট চক্ষু ও সার্জারি ২ জন, সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত ৪ জন মেডিকেল অফিসার, অনুপস্থিত (প্রশাসনিক ব্যবস্থাধীন) ১ জন মেডিকেল অফিসার, আবাসিক মেডিকেল অফিসার সরকারি চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন (প্রশাসনিক ব্যবস্থাধীন) একজন, পদ শূন্য ৪ জন মেডিকেল অফিসার, সিনিয়র স্টাফ নার্স, মিডওয়াইফ, এসএসিএমও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, এমএলএসএস, ওয়ার্ড বয়, কুক মশালচি, মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থকর্মীসহ ৫৪টি পদ শূন্য বলে সূত্রে জানা যায়। একদিকে রোগীর চাপ অন্যদিকে উপরোক্ত শূন্য পদের কারণে দায়িত্বরতদের এমন বেহাল অবস্থা বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জনসংখ্যা এবং রোগীর সংখ্যা বিবেচনা করে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ করা জরুরি। সেক্ষেত্রে অবশ্য অনেক বেশি সংস্কার প্রয়োজন। বিশেষ করে ১০০ শয্যার জন্য অবকাঠামো ও জনবল নিয়োগ (প্রশাসনিক অনুমোদনসহ), উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, অভ্যন্তরীণ রাস্তা মেরামত, আবাসিক ভবন সংস্কার, রোগীদের জন্য নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট নির্মাণ, অপারেশন কাজে সহায়তার জন্য নতুন ডায়াথার্মী মেশিন এবং রোগীদের জন পর্যাপ্ত সরকারি ওষুধ এবং ল্যাবরেটরি সুবিধা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ জরুরি। বাঁশখালীর সাধারণ জনগণের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এ হাসপাতালকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণসহ শূন্য পদে চিকিৎসক, নার্স নিযোগসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ দরকার।
এদিকে চিকিৎসা সেবাসহ হাসপাতালের সামগ্রীক বিষয়ের ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সব্যচাষী নাথ বলেন, প্রতিদিন অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু আমরা ৫০ শয্যা অনুসারে ওষুধপত্র পেয়ে থাকি। তা নিয়ে সব রোগীকে পর্যাপ্ত সেবা দিতে আমাদের বেগ পেতে হয়। তাছাড়া বেশ কিছু শূন্যপদ থাকায় দায়িত্বরতদের বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়। তিনি কর্তৃপক্ষকে এলাকা ও রোগীর চাহিদা বিবেচনা করে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং শূন্য পদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দানের জন্য আহ্বান জানান।