দায়িত্বগ্রহণের একশ দিন উপলক্ষে দৈনিক আজাদীকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজের সাফল্যের কথা ব্যক্ত করেছেন। তবে মশার উৎপাত নিয়ন্ত্রণে আশানুরূপ সফল হননি স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘মশার উৎপাত থেকে মানুষকে খুব বেশি স্বস্তি দিতে পারিনি’। দায়িত্বহগ্রহণকালে মেয়র তাঁর ১০০ দিনের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেছিলেন। তার মধ্যে ছিলো মশার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণ, ‘বিশৃঙ্খল’ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনা এবং সড়ক সংস্কারের কর্মপরিকল্পনা। এই একশ দিনের প্রতিশ্রুতি কতটুকু পূরণ করতে পেরেছন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সার্বিকভাবে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ। সবগুলো দৃশ্যমান। আমরা শতভাগ বলব না। সেটা সম্ভবও না। তিনি বলেছেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমে সফল হয়েছি। শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব বেশি ভালো ছিল না। ভাঙা ছিল। সেগুলো প্যাচওয়ার্কের মাধ্যমে সংস্কার করেছি। সবগুলো সড়ক গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত করেছি। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোর অবস্থানে ছিলাম। ফুটপাত ও নালার উপর স্থাপনা করেও বিভিন্নভাবে দখল করা হয়েছে। সেগুলোর বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়েছি। আরো অনেকগুলো প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র। কারণ এ নগরীর মাধ্যমে দেশের মোট রফতানির ৮০ এবং আমদানির প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়। ফলে চট্টগ্রামের উন্নয়নের মাধ্যমে সামগ্রিক অর্থনৈতিক সুফল বয়ে আনা সম্ভব। চট্টগ্রাম থেকে সবচেয়ে বেশি আমদানি শুল্ক আসে। এর একটি অংশ নগরীর উন্নয়নে ব্যয় করার সিদ্ধান্তও অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত। এর সুফল ভোগ করবে পুরো দেশবাসী। তাই চট্টগ্রামের সমস্যাকে আঞ্চলিক সমস্যা হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, ইতোমধ্যে ছোট ছোট সিটি করপোরেশন যেটুকু অর্থ বরাদ্দ পেয়েছে, অর্থনীতিতে বড় অবদান রেখেও চট্টগ্রাম অনেক সময় তা পায়নি। আমরা লক্ষ করছি, চট্টগ্রামের উন্নয়নে দৃষ্টি না দিয়ে মংলা বা পায়রা বন্দরকে এর বিকল্প হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টাও চলছে। আমরা অন্য বন্দর তৈরির বিরোধী নই, কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরের প্রয়োজনীয়তাকে খর্ব করে নয়। কেননা চট্টগ্রাম বন্দরের প্রয়োজন হবে আরো অনেক দিন। সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরের কারণে এ অঞ্চলের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। তাই চট্টগ্রামের উন্নয়নে সবার দৃষ্টি দেয়া আবশ্যক। এতে দেশের অর্থনীতির বিকাশ আরো ত্বরান্বিত হবে। চট্টগ্রামের অনেক সমস্যার মধ্যে যানজট ও জলজট সমস্যা প্রকট। এর সমাধান করা হলে তার সুফল গোটা বাংলাদেশ পাবে।
অন্যদিকে, চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা পিছিয়ে পড়ার প্রধানত কারণ, এখানে কোন প্ল্যানিং ইনস্টিটিউশন নেই। নগর পরিকল্পনাবিদদের মতে, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সমগ্র দেশে পণ্য পরিবহণের ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আলাদা সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে যত দ্রুত এবং কম সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করার মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চেহারা বদলে যাবে। এছাড়া চট্টগ্রাম শহর থেকে বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার যে করিডোরগুলো আছে সেগুলো মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী যথাযথ উন্নয়ন করতে হবে।
একথা অনস্বীকার্য যে, সাফল্য যেমন আরও সাফল্য ডেকে নিয়ে আসে, তেমনি চট্টগ্রামের উন্নয়নও পুরো দেশের আরও উন্নয়ন ডেকে আনবে- এই মুহূর্তে দেশের অর্থনীতির জন্য এটা সবচেয়ে বড় সত্য। চট্টগ্রামের উন্নয়ন তাই কোন আঞ্চলিক দাবি নয়। এটি এখন জাতীয় দাবি। চট্টগ্রামকে ঘিরে নেয়া প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই অল্প কয়েক বছরের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যায়। আর এসব প্রকল্প যথাসময়ে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম এক অনন্য আধুনিক নগরীর পূর্ণতা লাভ করবে। পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র, যা সরকারের ভিশনকে পূর্ণতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী নিজের সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন যেভাবে, তাতে আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাই। তবে এ অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট নয় নগরবাসী। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ ও ফুটপাত হকারমুক্ত করার ক্ষেত্রে তাঁর আরো কঠোর ভূমিকা দরকার। তাছাড়া মশক নিধন কর্মসূচিতে তাঁকে অবশ্যই সফল হতে হবে। একশ’ দিনে তিনি যেভাবে কাজ করেছেন, তার গতি আরো বাড়াতে হবে।