সিজেকেএস নিবন্ধিত সরকারি ক্লাব বিক্রির নামে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৩০ মে, ২০২৫ at ৭:৩১ পূর্বাহ্ণ

মোহাম্মদ শাহজাহান সাধারণ সম্পাদক আমিন ইউনাইটেড ক্লাব। মোহাম্মদ আলমগীর সাধারণ সম্পাদক হাফিজ জুট মিলস আরসি, প্রকৌশলী মঈনুদ্দিন সভাপতি পিডিবি রিক্রিয়শন ক্লাব। প্রকৃত পক্ষে এরা কেউই এই তিন ক্লাবের কেউ না। এই নামের কোন কর্মকর্তাও নেই এই ক্লাবে বা প্রতিষ্ঠানে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এই তিন প্রতিষ্ঠানের তিন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাহলে এই তিন ব্যাক্তি আলোচনায় কেন? আলোচনায় এই কারণে যে, এই তিনজনকে ভুয়া সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে এই তিনটি সরকারি ক্লাব বিক্রির অপচেষ্টা করেছে একটি প্রতারক চক্র। এই তিন ক্লাবের মধ্যে আমিন ইউনাইটেড ক্লাব বিক্রির নাম করে গিয়াস উদ্দিন নামের একজনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। বিক্রির তালিকায় ছিল আরো দুই ক্লাব। সে দুটি ক্লাব হচ্ছে পিডিবি আর সি গ্রীন এবং চট্টগ্রাম রাইফেল ক্লাব। ২০২৩ সাল থেকে ভুয়া ক্লাব বিক্রির এই প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছে প্রতারক চক্রটি। গোসাইলডাঙ্গা এলাকার গিয়াস উদ্দিনের সাথে আমিন ইউনাইটেড ক্লাব কিনে দেওয়ার কথা বলে ১৫ লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছে। যেখানে স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে মোহাম্মদ শাহজাহান নামের একজনকে। অগ্রিম দেখানো হয়েছে তিন লক্ষ টাকা। গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন নগরীর মাঝিরঘাট এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের পুত্র হারুন অর রশিদ তার অফিসে গিয়ে তার কাছ থেকে পাঁচ কিস্তিতে ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এসেছে। এই হারুন অর রশিদ আবার সিজেকেএস নিবন্ধিত পাথরঘাটা দুর্বার সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর স্টেডিয়াম প্রতিনিধি। ২০২৩ সালের শুরু থেকে চলে এই ক্লাব বেচা বিক্রির অবৈধ প্রক্রিয়া। কিন্তু ঐ বছরের শেষ দিকে এসে যখন দেখা গেল বিষয়টি ভুয়া তখন বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ক্লাব ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন তখন টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তখনই ধরা পড়ে এই প্রতারণা।

সেই ২০২৩ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত হারুন এবং গিয়াসের মধ্যে যে হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথন হয়েছে তার সব রেকর্ড এসেছে দৈনিক আজাদীর কাছে। আর তাতেই পরিষ্কার হয়ে যায় ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে সরকারি ক্লাব বিক্রির নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়াটাই ছিল প্রতারক চক্রের কাজ। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর দৈনিক আজাদীর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় আমিন জুট মিলস লিঃ এর জিএম এ এইচ এম কামরুল হাসানের সাথে। তিনি জানিয়েছেন, আমিন ইউনাইটেড ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাকে দেখানো হয়েছে সে নামে কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই এই প্রতিষ্ঠানে। তিনি জানান ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর আমরা সিজেকেএস এর সাথে যোগাযোগ করেছি। আমরা বিষয়টি তাদের জানিয়ে দিয়েছি। এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। এটি বিক্রির কোন সুযোগ নেই।

একই কথা বলেছেন পিডিবিআরসির মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি জানান মঈনুদ্দিন নামে তাদের কোন প্রকৌশলী নেই। আর ক্লাবের সভাপতিও সে নামের কেউ নন। তিনি জানান আমরা জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়মিত নানা ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করি। কাজেই এই ক্লাব বিক্রির কোন সুযোগ নেই। কোন প্রতারক প্রতারণা করলে সে জন্য পিডিবিআরসি দায়ী থাকবেনা। তিনি বলেন আমাদের সাথে সিজেকেএস এর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া আমরা সিজেকেএস এর প্রতিবেশি।

এদিকে ক্লাবের ক্রেতা গিয়াস উদ্দিন জানিয়েছেন ভাউচারে প্রতিষ্ঠান সমূহের যাদের নাম দেখানো হয়েছে তাদের সাথে যোগযোগ করতে নিষেধ করতেন হারুন অর রশিদ। তিনি বলতেন আমি নাকি যোগযোগ করলে তারা ক্লাবের দাম বাড়িয়ে দেবে। কারণ হিসেবে বলতেন আরো অনেক ক্রেতা রয়েছে ক্লাব গুলোর। তাই সব যোগাযোগ তার সাথেই করতে হতো। আর গিয়াসের কথার সত্যতা মেলে দুজনের হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকথনে। একইভাবে ডবলমুরিং ক্লাবের স্টেডিয়াম প্রতিনিধি জিয়াউদ্দিন আহমেদ তানভীরের কাছ থেকেও টাকা নিয়েছেন হারুন। যদিও তানভীর জানিয়েছেন তার কাছ থেকে টাকাটা নিয়েছেন প্রয়োজনের কথা বলে। তবে তাকেও একটি ক্লাবের টোপ দেওয়া হয়। তানভীর বলেন তাকে বলেছে তার জন্যও একটি ক্লাবের ব্যবস্থা করবে হারুন। হোয়াটসঅ্যাপ কথোপকতনের বিভিন্ন পর্যায়ে আরো তিনটি ক্লাব নিয়ে কথা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্রেতার কাছে ধরা পড়ে গেলে প্রকাশ হয়ে যায় সবকিছু।

এদিকে অভিযুক্ত হারুন অর রশিদের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে বার বার যোগাযোগ করা হরেও তার মোবাইল নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসমতা ফেরানোর লড়াই আজ বাংলাদেশের
পরবর্তী নিবন্ধদেশের পর্দায় আসছে ছোট্ট লিলো