সিজেকেএস জিম নিয়ে এবার যা শোনা যাচ্ছে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ২৯ মে, ২০২৫ at ৮:৫৯ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার জিমটি গত এক যুগেরও বেশি সময় ছিল শৈবাল দাশ সুমনের দখলে। ২০১৩ সালে দশ বছরের জন্য মাসে ৩০ হাজার টাকা ভাড়ায় ব্যবহারের চুক্তি হয়। গত ২০২৩ সালে শেষ হয় চুক্তির মেয়াদ। চুক্তি মোতাবেক চুক্তির মেয়াদ শেষ হলে সমুদয় যন্ত্রপাতি সহ জিমটি সিজেকেএস এর কাছে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু তারপরও ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লব পর্যন্ত নানা অজুহাতে এই জিম নিজের নিয়ন্ত্রনে রাখে শৈবাল দাশ সুমন। ৫ আগস্ট দেশে পট পরিবর্তন হলে পালিয়ে যান সুমন। তখন থেকে জিমটি পড়ে ছির বন্ধ অবস্থায়। কিন্তু গত কিছুদিন ধরে সেখানে কিছু লোককে জিম ব্যবহার করতে দেখা যায়। এদিকে গত বেশ কিছুদিন ধরে শোনা যাচ্ছে জিমটি আবার অণ্য কাউকে ভাড়া দেওয়ার চেষ্টা চলছে। তবে একটি সুত্র জানিয়েছে যার সাথে জিমটি ভাড়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে, (কোন কোন সূত্র মতে চুক্তির খসড়াও প্রস্তুত হয়ে গেছে)। সে ব্যাক্তি শৈবাল দাশ সুমনেরই ঘনিষ্টজন। বিষয়টি জানা জানি হওয়ার পর গতকাল চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন সাবেক বডি বিল্ডার দেখা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদির সঙ্গে। তার কাছে সাবেক বডি বিল্ডাররা জিমটি সিজেকেএস এর অধীনে রাখার অনুরোধ জানান। দেখা করতে যাওয়া সাবেক এই সব বডি বিল্ডাররা জানিয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তাদেরকে আশ্বস্ত করেছেন যে বিষয়টি নিয়ে তারা বসবেন।

কারন গত দশ বছরে চট্টগ্রামের কোন বডিবিল্ডার জিমটিতে গিয়ে অনুশীলন করতে পারেনি। কারন তখণ সেটি চলছিল পুরো বানিজ্যিক ভিত্তিতে। অথচ চুক্তিতে ছিল চট্টগ্রাম জেলা দলের বডি বিল্ডাররা তাদের চাহিদা মত অনুশীলন করতে পারবে জিমে। বাস্তবে তা হয়নি পেশি শক্তির জোরে। যার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের বডি বিল্ডিংয়ে। গত দশ বছরে চট্টগ্রামের জন্য বড় কোন সাফল্য আসেনি বডি বিল্ডিং থেকে। কারন হিসেবে বডি বিল্ডিাররা জানিয়েছে তাদের অনুশীলনের অভাব। এখন যদি আবার অন্য কারো হাতে চলে যায় জিমটি তাহলে চট্টগ্রামের বডি বিল্ডাররা আরো পিছিয়ে যাবে। তাই তাদের আবেদন জিমটি যেন সিজেকেএস এর অধীনেই রাখা হয়।

জিমের চুক্তিতে ছিল জিমের সামনে ৪০৬ বর্গফুট আয়তনের অভ্যর্থনা কক্ষ ব্যাতিরেখে অবশিষ্ট জায়গা উন্মুক্ত সবুজ চত্ত্বর হিসেবে থাকবে। সেখানে কোন স্থাপনা নির্মান করা যাবেনা। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছিল তার বিপরীত। যে জায়গাটি উন্মুক্ত সবুজ চত্ত্বর হিসেবে রাখার কথা ছিল সেখানে গড়ে তোলা হয় লিটল লব স্টার নামে একটি রেস্টুরেন্ট। সিজেকেএস এর সাবেক এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন সেই লিটল লবস্টারের অগ্রিম কত ছিল বা ভাড়া কত ছিল তা কিছুই জানতোনা সিজেকেএস। তবে এক অনুসন্ধানে জানা যায় লিটল লব স্টার কতৃপক্ষের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ বিশ লক্ষ টাকা এবং প্রতিমাসে ২০ হাজার টাকা ভাড়া নিতেন শৈবাল দাশ সুমন। যা জমা হতোনা সিজেকেএস তহবিলে। গত বছরের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর থেকে এই লিটল লব স্টার রেস্টুরেন্টটি বন্ধ রয়েছে। তবে সম্প্রতি এই জায়গাটি বরাদ্দ দেওয়ার আলোচনা চলছে বলে নিশ্চিত করেছে একটি সুত্র। অথচ এই জায়গাটি সবুজ চত্ত্বর হিসেবে থাকার কথা।

এদিকে স্টেডিয়ামের শপিং কমপ্লেঙের মাঝখানে যে পার্কিং স্পেস রয়েছে সেটিও লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে একটি সুত্র। একজন বিএনপি নেতার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা একরকম চুড়ান্ত বলে জানিয়েছে সুত্রটি। অথচ বিশাল এই শপিং কমেপ্লেঙের একমাত্র পার্কিং এরিয়া সেটি। এই জায়গাটিতে এক সময় বহুতল ভবন নির্মানের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ক্রীড়া সংগঠকদের বাধার মুখে সেটি সম্ভব হয়নি। এখন সে জায়গাটি লিজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। যা স্টেডিয়াম শপিং কমপ্লেঙের দোকান মালিক থেকে শুরু করে ক্রেতাদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। তারা এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য সিজেকেএস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছেন। উল্লেখ্য একসময় আউটার স্টেডিয়ামে মার্কেট নির্মানের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক এবং নাগরিকদের প্রতিবাদের মুখে সেটা সফল হয়নি। গতকাল এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সাদিউর রহিম জাদির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আজকে যেসব বডি বিল্ডার আমার কাছে এসেছিলেন তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি জিমটা যাতে সিজেকেএস এর অধীনে থাকে সে বিষয়ে চেষ্টা করা হবে। এটা নিয়ে চিন্তিত হওয়ার খুব বেশি কারণ নেই। তবে জিমের সামনে যে খালি জায়গাটা সবুজ চত্বর হিসেবে রাখার কথা সেটিকে জিমের অংশ হিসেবে ধরলে চলবে না। সেটি কাউকে বরাদ্দ দেয়া হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নিবে এডহক কমিটি। অপরদিকে স্টেডিয়ামের শপিং কমপ্লেক্সের মাঝখানে যে পার্কিং স্পেস রয়েছে সেটি কারও নামে বরাদ্দ দেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি বলে তিনি জানান। তবে অনেকে হয়তো আবেদন দিয়ে থাকতে পারে। সেই প্রেক্ষিতে হয়তো কথাটা উঠছে। 

পূর্ববর্তী নিবন্ধঢাকায় এসেছেন ফাহামিদুল ৪ জুন আসবেন সামিত সোম
পরবর্তী নিবন্ধশ্রুতিঅঙ্গনের মহাসমারোহে রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তি উদযাপন