সিজেকেএস-এর রুটিন খেলাধুলা শুরু করা হোক

জামাল উদ্দিন বাবুল | সোমবার , ১৩ অক্টোবর, ২০২৫ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

আজ প্রায় বছর পেরিয়ে গেলো চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার খেলাধূলা বিষয়ক সকল কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর স্টেডিয়াম কেন্দ্রিক যে সব খেলা হতো তা একপ্রকার মুখ থুবড়ে পড়েছে বলা যায়। এনিয়ে সিজেকেএস নিবন্ধিত সংগঠন গুলোর মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুটিং, সাইকেলিং, দাবা, ক্রিকেট, ফুটবল ও অন্যান্য ইভেন্টে চট্টগ্রামের অনেক তারকা খেলোয়াড় দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছে। চট্টগ্রাম জেলায় খেলাধুলার উন্নয়নের স্বার্থে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্টের স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৪৮ সালের ২৪ তারিখ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বৃহত্তর চট্টগ্রামের কমিশনার এর উদ্যোগে চট্টগ্রাম সেনা নিবাস কর্তৃপক্ষের বদন্যতায় পূর্বে নুর আহম্মদ সড়ক, পশ্চিমে সি আর বি তথা পাইওনিয়ার সড়ক, উত্তরে এস এস খালেদ সড়ক ও দক্ষিণে নেভাল এভেনিউ সড়কের মাঝখানে ছোট ছোট টিলা সমেত প্রায় সাড়ে ১৩ একর জায়গা চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এখানে উল্লেখ্য যে চট্টগ্রাম সেনানিবাস স্থাপিত হয় ২য় বিশ্ব যুদ্ধের পর। পরবর্তী সময়ে ১৯৫২ সালে ক্রীড়া প্রেমী সৃজনশীল মনমানসিকতার অধিকারী তৎকালীন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক নিয়াজ মোহাম্মদ খানের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরে দেশের বিশিষ্ট শিল্পপতি জনাব মীর্জা আহমেদ ইস্পাহানীর নেতৃত্বে শিল্পপতি ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের সমম্বয়ে ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নিয়ে যাত্রা শুরু হয় স্টেডিয়াম নির্মাণ কাজ। দায়িত্ব দেয়া হয় তৎকালীন সিএন্ডবি (বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগ) এর প্রধান প্রকৌশলীকে। তিনি চট্টগ্রাম ওয়াসা, পিডিবি, রেলওয়ে ও পৌরসভার প্রধান প্রকৌশলীদের সমম্বয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি গঠন পূর্বক নির্মাণ কাজের সুচনা করেন। এক্ষেত্রে অর্থের কোন সংকট হয়নি। অতপর ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম নির্মাণের কাজ শেষ হলে চট্টগ্রামের ক্রীড়া অঙ্গন সরব হয়ে উঠে। খেলোয়াড়দের আনাগোনা ও খেলাধূলায় মুখর হয়ে উঠে স্টেডিয়াম পাড়া। স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় নিয়াজ স্টেডিয়াম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটা এম এ আজিজ স্টেডিয়াম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট শহীদ জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে চট্টগ্রাম আগমন করলে তিনি চট্টগ্রামের খেলাধুলার কেন্দ্রস্থল চট্টগ্রাম স্টেডিয়াম পরিদর্শনে আসেন এবং সার্বিক বিবেচনায় খেলাধুলার অনুশীলনের স্বার্থে মাত্র ১ টাকায় নাম মাত্র মূল্য চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামের ৬,৩৩ একর জায়গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার নামে বরাদ্দ প্রদান করেন। এর পর থেকে এ মাঠে বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন ও ক্রীড়া সংগঠকদের তৎপরতা শুরু হয়। এ মাঠে অনুশীলন করে আকরাম খান ও তামিম ইকবালরা হয়ে যান নামজাদা ক্রিকেট তারকা।

এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, জুডো, কারাতে, তায়কোয়ানডো ও অন্যান্য অনেক ইভেন্টে চট্টগ্রাম এর খেলোয়াড়রা আশা জাগানো নান্দনিক পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। টেবিল টেনিসে চট্টগ্রামের কৃতি সন্তান মানষ চৌধুরী ৫ বার জাতীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। টেবিল টেনিস জাতীয় পর্যায়ে বালকদের বিভাগে আসিফুল ইসলাম, রিগ্যান বড়ুয়া ও মুফরাদুল খায়ের সজীব একক ও দ্বৈত ইভেন্ট চ্যাম্পিয়ন ও রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে। প্রাথমিক অবস্থায় এরা সবাই নবীন মেলার খেলোয়াড় হিসেবে মেলায় নিয়মিত অনুশীলন করতো।

সত্তর আশি দশকে যেসব ক্রীড়াপ্রেমী বরেণ্য ব্যক্তিত্ববৃন্দ জেলা ক্রীড়া সংস্থার পরিচালনা পর্ষদে ছিলেন তাঁদের গতিশীল, গঠনমূখী ও সুদূরপ্রসারী চিন্তা চেতনার ফসল আজকের চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থা বর্তমানে একটি সুদৃঢ বিন্যস্ত কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে আছে তা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর মরহুম ডা: কামাল এ খান, চট্টগ্রাম পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম ফজল করিম, মরহুম হাজী কামাল, মরহুম আলহাজ্ব দস্তগীর চৌধুরী, মরহুম শাহেদ আজগর চৌধুরী, মরহুম আবদুল হামিদ, মরহুম ফজু খান, মরহুম আবদুস শুক্কুর, মরহুম এস এম কামাল উদ্দিন, মরহুম সেলিম আবেদিন, মরহুম আলহাজ্ব রফিক আহম্মদ, মরহুম কামাল উদ্দিন,মরহুম আবু জাফর, মরহুম আবু তাহের পুতু, নিখিল রঞ্জন দাশ, মরহুম ইউসুফ গনি চৌধুরী ও বর্তমান কর্মকর্তা হাফিজুর রহমান গংদের অশেষ অবদান চট্টগ্রামবাসী কৃতজ্ঞতার সাথে আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে যাবে। বিগত নির্বাহী পরিষদে হাফিজুর রহমান নির্বাচিত সহসভাপতি ছিলেন। বর্তমানে তিনি নব গঠিত সিজেকেএস ক্লাব সমিতির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে আছেন।

এখানে উল্লেখ্য যে সম্প্রতি সিজেকেএস সংশ্লিষ্ট ক্রীড়া সংগঠন এর স্বার্থ দেখভাল করা এবং খেলাধুলার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখার তাগিদে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি সমম্বয়ে সিজেকেএস ক্লাব সমিতি গঠিত হয়েছে। এই সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হচ্ছেন যথাক্রমে এডভোকেট শাহীন আফতাবু রেজা ও সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম। ক্রীড়া জগতের সবার প্রিয় সজ্জন কিংবদন্তী সংগঠক হাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে জেলার ক্রীড়া সংস্থার সংগঠকবৃন্দ একত্রিত হয়ে খেলাধুলার বিপ্লব সাধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং এ লক্ষ্য ২০০৭ সালে ১০টি ইভেন্টর ২১/২২ টি লীগ ও টুর্নামেন্টের আয়োজন করেন। এর ফলে স্টেডিয়াম পাড়া নানা খেলায় সরগরম হয়ে উঠে। চট্টগ্রাম জেলা স্টেডিয়াম মাঠে অনুষ্ঠিত ইভেন্টসমূহ হলো ফুটবল, ক্রিকেট, হ্যান্ডবল, খো খো, সেপাক টাকরো, রাগবি, কাবাডি, ভলিবল, অ্যাথলেটিঙ ও হকি। এছাড়া সিজেকেএস প্রশিক্ষণ মাঠ, জিমন্যাশিয়াম, আউটার স্টেডিয়াম ও সুইমিং কমপ্লেক্সে যে সব ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় তা হলো বাস্কেটবল, জুডো, দাবা, টেবিল টেনিস, সাঁতার, কারাতে, তায়কোয়ানডো, আরচ্যারী, ক্যারম, ব্যাডমিন্টন, চুকবল ও উশু।

কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় এই যে বর্তমানে সেই স্টেডিয়াম এলাকা খেলাধুলা বিহীন হয়ে পড়ায় ক্রীড়া সংগঠক ও খেলোয়াড়দের মাঝে দারুণ হতাশা বিরাজ করছে। পদাধিকার বলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক সিজেকেএস এর সভাপতি হিসেবে গণ্য হন। পূর্বের নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত হওয়ার পর বর্তমান এডহক কমিটির পূর্ণাঙ্গ ভাবে খেলাধুলা শুরু করার ব্যাপারে দৃশ্যমান কোন তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত কোন পূর্ণাঙ্গ সাব কমিটিও গঠন করা হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, ক্রীড়া উপদেষ্টা ও ক্রীড়া পরিষদের প্রতি চট্টগ্রামের সর্বস্তরের ক্রীড়া সংগঠন, সংগঠক ও খেলোয়াড়দের একান্ত আবেদন চট্টগ্রাম জেলার খেলাধুলার উন্নয়নের স্বার্থে জেলা স্টেডিয়াম উম্মুক্ত করে অবিলম্বে সকল ইভেন্টের খেলাধুলা শুরু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক এবং সেই সাথে একটি অবাধ ও সর্বজনগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাহী পরিষদ গঠন করার ব্যবস্থা করে জেলার ক্রীড়া অঙ্গনের বন্ধ্যাত্ব দূর করার পদক্ষেপ নেয়া হোক।

লেখক: সভাপতি, নবীন মেলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্মরণ : ভাইস এডমিরাল সরওয়ার জাহান নিজাম
পরবর্তী নিবন্ধমাওলানা সৈয়দ আবদুল গণি কাঞ্চনপুরীর ‘মাইজভাণ্ডারী গান’