নগরীর আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনি। সরকারি বিশাল এই কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তারাই অনুমতি না নিয়ে নিজেদের বাসার বাইরে নতুন নতুন স্থাপনা তৈরি করেছেন। এতে একদিকে পুরো কলোনিতে ঘিঞ্জি পরিবেশ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি সিজিএস কলোনির মসজিদ মার্কেটে অবৈধভাবে দোকান বরাদ্দ দিয়ে প্রভাবশালীরা হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। অন্যদিকে সিজিএস কলোনিকে ঘিরে কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে অপরাধমূলক নানান কর্মকাণ্ড ঘটে। বছরের নানান সময়ে আধিপত্য বিস্তার ও টেন্ডার বাণিজ্য নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিজিএস (চট্টগ্রাম গভর্মেন্ট সার্ভিস) কলোনিতে প্রায় সবগুলো ভবনের নিচতলায় চারিদিকে অবৈধভাবে স্থাপনা তৈরি হয়েছে। অনেকে গ্যারেজ হিসেবেও এসব স্থাপনা ভাড়ায় দিয়েছেন। আবার অনেকে নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে এসব সরকারি বাসা ভাড়ায় লাগিয়েছেন। একইভাবে দোকান বসিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আগ্রাবাস সরকারি কলোনি এসোসিয়েশনের বিরুদ্ধে। এসব অবৈধ দোকান ও বাসার বর্ধিত স্থাপনা উচ্ছেদ করতে যাচ্ছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তর। আজ সোমবার সকাল থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানানো হয়েছে। অভিযানে প্রায় ১১০টি বাসার অবৈধ বর্ধিতাংশ এবং ২০টির মতো অবৈধ দোকান উচ্ছেদ করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে তিনজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অভিযানে সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে গ্যাস, বিদ্যুৎ, ফায়ার সার্ভিস, র্যাব, পুলিশসহ প্রয়োজনীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোকে চিঠি দিয়েছে সরকারি আবাসন পরিদপ্তর।
সরজমিনে দেখা গেছে, রোববার সরকারি আবাসন পরিদপ্তর ও গণপূর্ত অধিদপ্তরে উচ্ছেদ ঠেকানোর জন্য ধরণা দিয়ে ব্যর্থ হয়ে বিকেল থেকে অনেকে অবৈধ অংশ নিজেরাই সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাকা দিয়ে বরাদ্দ নেওয়া দোকানিরা। নাছির নামের এক দোকানদার বলেন, আমার পিতার নামে দোকানটি বরাদ্দ ছিল। আমার ভাই মহিউদ্দিন দোকানটি চালাতেন। দোকানের জন্য এসোসিয়েশনকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এখন দোকান উচ্ছেদ করার বিষয়টি জেনেছি আজ (রোববার) সন্ধ্যায়।’ অন্যদিকে একশ’ টাকার স্ট্যাম্পে সম্পাদিত একটি দোকান বরাদ্দ চুক্তিনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মসজিদ মার্কেটের ২৪নং দোকানটি বরাদ্দ নিয়েছেন জাকির হোসেন বাবু নামের এক ব্যক্তি। ২০১৩ সালে ৫ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত চুক্তিটি হয়েছিল আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি এসোসিয়েশনের সাথে। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, ‘মসজিদ মার্কেটে নির্মিত দোকান নং-২৪, ঘরটি তিন লক্ষ টাকা এককালীন জমা এবং মাসিক ভাড়া ৬৫০ টাকা নির্ধারণপূর্বক প্রথম পক্ষ আগ্রাবাদ কলোনি এসোসিয়েশন ও দ্বিতীয় পক্ষ মো. জাকির হোসেন বাবুর মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়ার পর আপনি দ্বিতীয় পক্ষের নামে সর্বসম্মতিক্রমে উক্ত ২৪নং দোকান ঘরটি বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’ ওই চুক্তিপত্রে বরাদ্দগ্রহীতা ও সাক্ষীদের নাম থাকলেও এসোসিয়েশনের কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এসোসিয়েশনের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক চুক্তিতে সই করলেও চুক্তির কোথাও সাধারণ সম্পদকের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আগ্রাবাদ সরকারি কলোনি এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হাসান আহসানুল কবির দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘আমরা এসোসিয়েশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো দোকান বরাদ্দ দেইনি। দোকান বরাদ্দ দিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমরা জানতাম না। পুরোনো কমিটি দোকান বরাদ্দ দিয়েছিল। আমরা যখন দায়িত্ব বুঝে নেই, তখন দায়িত্ব হস্তান্তরনামায় টাকা নেওয়ার বিষয়টিও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এখন গণপূর্ত বিভাগের উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেওয়ার পর বিষয়টি আমরা জেনেছি।’
চট্টগ্রাম সরকারি আবাসন পরিদপ্তরের উপ-পরিচালক খিন ওয়ান নু দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সিজিএস কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করে থাকেন। কলোনির ভবনগুলোতে নীচ তলার অনেক বাসায় দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সরিয়ে নেননি। যে কারণে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অবৈধ স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।’
চট্টগ্রাম গণপূর্ত উপ বিভাগ-৮ এর উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আহসান হাবীব দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘সিজিএস কলোনিতে বরাদ্দকৃত বাসার বাইরে অননুমোদিতভাবে অনেকে স্থাপনা তৈরি করেছেন। আমরা এ ধরণের প্রায় শতাধিক বাসা চিহ্নিত করেছি। তাছাড়া সিজিএস কলোনি মসজিদ মার্কেটে কিছু অবৈধ দোকান রয়েছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ১৫ মার্চ এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।’