সিঙ্গাপুরে ধনকুবের ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলায় জিতলেন গৃহকর্মী

| শনিবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ৬:৫১ পূর্বাহ্ণ

 

পার্তি লিয়ানি ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার একজন গৃহপরিচারিকা। তিনি কাজ করতেন সিঙ্গাপুরের ধনী একটি পরিবারে। বেতন ছিল মাসে ৬০০ সিঙ্গাপুরি ডলার। তার নিয়োগদাতা দেশটির বিশাল এক ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মালিক লিউ মুন লিয়ং। তিনি বেশ কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির চেয়ারম্যান।

একদিন ওই পরিবারটি পার্তি লিয়ানির বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আনল। তারা রিপোর্ট করল পুলিশের কাছে। অভিযোগে বলা হলো, তিনি ওই বাড়ি থেকে বিলাসবহুল কিছু হাতব্যাগ, পোশাক, একটি ডিভিডি প্লেয়ার চুরি করেছেন। এর মধ্য দিয়ে সূত্রপাত হলো সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে বহুল আলোচিত এক মামলার। খবর বিবিসি বাংলার।

বিত্তশালী ওই পরিবারটির বিরুদ্ধে চার বছর আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে এই মাসের শুরুর দিকে আদালতের রায়ে খালাস পেলেন গৃহকর্মী পার্তি। রায়ের পর দোভাষীর মাধ্যমে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, চার বছর ধরে আদালতে লড়াই করছিলাম। আমি খুব খুশি যে, শেষ পর্যন্ত আমি মুক্তি পেয়েছি।

তার এই মামলাটি সিঙ্গাপুরে অসাম্য ও বিচার পাওয়ার ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, প্রাথমিকভাবে পার্তিকে কীভাবে চোর বলে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল?

পার্তি লিয়ানি লিউ মুনের বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ শুরু করেন ২০০৭ সালে। সেই সময় ওই বাড়িতে মালিকের ছেলে কার্লসহ পরিবারের আরো কয়েকজন সদস্য বসবাস করত। প্রায় নয় বছর পর ২০১৬ সালে কার্ল লিউ ও তার পরিবার ওই বাড়ি ছেড়ে দিয়ে অন্যত্র চলে যায়।

আদালতে যেসব কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে তাতে দেখা যায়, পার্তিকে কার্লের নতুন বাড়ি পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল। এছাড়া তার অফিসও বিভিন্ন সময়ে পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল, যা স্থানীয় শ্রম আইনের লক্সঘন। এ বিষয়ে তিনি আগেও অভিযোগ করেছিলেন।

এর কয়েক মাস পরে ব্যবসায়ী লিউ পরিবারের পক্ষ থেকে পার্তিকে জানানো হয়, চুরি করার অভিযোগে তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে। এরপর তাকে জিনিসপত্র গুছিয়ে বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার জন্য দুই ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। সেদিনই তিনি সিঙ্গাপুর ছেড়ে নিজ দেশে ফিরে যান। পার্তি এর পাঁচ সপ্তাহ পর নতুন কাজের খোঁজে আবার সিঙ্গাপুরে এলে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন। তখন তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে তার কোনো ধারণা নেই।

বিচারপতি চ্যাং সেং ওন বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে গিয়ে ওই পরিবারের উদ্দেশ্য ভালো ছিল না। এর পাশাপাশি এই মামলাটি পুলিশ, সরকারি কৌঁসুলি, এমনকি ডিস্ট্রিক্ট জাজও যেভাবে সামাল দিয়েছেন, সেসব নিয়েও হাই কোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়।

অনেকেই এই মামলাটিকে দেখেছেন সিঙ্গাপুরে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে বৈষম্যের উদাহরণ হিসেবে। এই ঘটনায় জনগণের মনে ক্ষোভ তৈরি হওয়ার পর লিউ মুন লিয়ং কিছু কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন।

এই ঘটনায় সিঙ্গাপুরের পুলিশ বাহিনী ও বিচার প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করে দেখার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। আইন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কে শানমুগাম স্বীকার করেছেন, ঘটনার ধারাবাহিকতায় কিছু একটা ভুল হয়েছে। সরকার এখন কী সিদ্ধান্ত নেয় লোকজন সেদিকে তাকিয়ে আছে। সিঙ্গাপুরে যেসব অভিবাসী শ্রমিক কাজ করেন, তারা কতটা ন্যায়বিচার পেতে পারেন এই ঘটনার পর সেই প্রশ্নটিও উঠেছে।

বেসরকারি সংস্থা হোমের সাহায্য পাওয়ায় পার্তি সিঙ্গাপুরে থেকে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পেরেছেন। তার আইনজীবী অনিল বালচান্দানিও বিনা অর্থে কাজ করেছেন। এজন্যে আইনি খরচ দাঁড়াত দেড় লাখ সিঙ্গাপুরি ডলার।

বেসরকারি সংস্থা হোম বলছে, বছরের পর বছর তো দূরের কথা, কয়েক মাস ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ্যও তাদের নেই। পার্তি লিয়ানি জানিয়েছেন, এখন তিনি তার দেশে ফিরে যাবেন। তিনি বলেন, আমি আমার নিয়োগদাতাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি তাদেরকে শুধু এটুকু বলতে চাই, তারা যেন অন্য গৃহকর্মীদের সঙ্গে আর কখনো এরকম না করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে আরও ২১ মৃত্যু, শনাক্ত ১৩৮৩
পরবর্তী নিবন্ধএক আসমার কাহিনী