সিকান্দার আবু জাফর (১৯১৯–১৯৭৫)। তিনি একজন বাঙালি কবি, সঙ্গীত রচয়িতা, নাট্যকার ও সাংবাদিক। ষাটের দশকে পূর্ব বাংলায় বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও বাঙালি সংস্কৃতিচর্চার যে ধারা গড়ে ওঠে, আবু জাফর ছিলেন তার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীনতা, দেশপ্রেম ও বিপ্লবের চেতনাউদ্দীপ্ত অনেক গান রচনা করেন। ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই, আমাদের সংগ্রাম চলবেই হতমানে অপমানে নয়, সুখ সম্মানে, বাঁচবার অধিকার কাড়তে’ গানটির মাধ্যমে তিনি স্বাধীনতাকামী সংগ্রামী জনতার কাছে অমর হয়ে থাকবেন। ১৯১৯ সালের ১৯ মার্চ সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতার নাম সৈয়দ মঈনুদ্দীন হাশেম। আবু জাফর স্থানীয় তালা বিদে ইনস্টিটিউট থেকে প্রবেশিকা (১৯৩৬) এবং কলকাতার রিপন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। কলকাতার মিলিটারি একাউন্টস বিভাগে (১৯৩৯) তিনি পেশাগত জীবন শুরু করেন এবং পরে সিভিল সাপ্লাই অফিসে চাকরি করেন। সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদারের ‘গ্লোব নিউজ এজেন্সী’ নামক সংবাদ–সংস্থায়ও তিনি কিছুকাল কাজ করেন। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে তিনি কাজী নজরুল ইসলামের নবযুগ পত্রিকায় যোগ দেন। এছাড়া তিনি দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক মিল্লাত–এ চাকরি করেছেন। পঞ্চাশের দশকে রেডিও পাকিস্তানের শিল্পী হিসেবে কাজ করেন। তিনি মাসিক সমকাল পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা–সম্পাদক (১৯৫৭–১৯৭০) ছিলেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ‘সমকাল মুদ্রায়ণ’ নামে একটি ছাপাখানা ও ‘সমকাল প্রকাশনী’ নামে একটি প্রকাশনালয় স্থাপন করেন।
১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি সাহিত্য পত্রিকা ‘সমকাল’–এর প্রকাশক ও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বাংলা সাহিত্যে ক’জন শব্দসচেতন, সমাজসচেতন সংগ্রামী কবিদের মধ্যে কবি সিকান্দার আবু জাফর তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থ : উপন্যাস– ‘পূরবী’ (১৯৪১), ‘নতুন সকাল’ (১৯৪৬); ছোটগল্প– ‘মাটি আর অশ্রু’ (১৯৪২); কবিতা– ‘প্রসন্ন শহর’ (১৯৬৫), ‘তিমিরান্তিক’ (১৯৬৫), ‘বৈরী বৃষ্টিতে’ (১৯৬৫), ‘বৃশ্চিক–লগ্ন’ (১৯৭১), ‘বাংলা ছাড়ো’ (১৯৭১); নাটক ‘সিরাজ–উদ–দৌলা’ (১৯৬৫), ‘মহাকবি আলাউল’ (১৯৬৬); সঙ্গীত-‘মালব কৌশিক’ (১৯৬৬)। অনুবাদ সাহিত্যেও তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর অনূদিত গ্রন্থ ‘যাদুর কলস’ (১৯৫৯), ‘সেন্ট লুইয়ের সেতু’ (১৯৬১), ‘রুবাইয়াৎ : ওমর খৈয়াম’ (১৯৬৬) অনুবাদ সাহিত্যে বিশেষ অবদান রেখেছে। তিনি নাটকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৬) এবং একুশে পদক (১৯৮৪, মরণোত্তর) লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৫ আগস্ট সিকান্দার আবু জাফর মৃত্যুবরণ করেন।