চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সিএমপির ১৬টি থানার মধ্যে ৮টি থানা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলার শিকার হয়েছে প্রায় প্রতিটি থানা। কোথাও কোথাও ক্ষয়ক্ষতি ব্যাপক হলেও একটি থানাও ইটপাটকেল বা হামলা থেকে নিস্তার পায়নি। হামলায় কোনো কোনো থানা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে। বিশেষ করে কোতোয়ালী, সদরঘাট, ডবলমুরিং, পাহাড়তলী, আকবরশাহ, ইপিজেড, পতেঙ্গা ও হালিশহর থানা ভবন ধ্বংসস্তূপ হয়ে যায়। থানাগুলোতে থাকা মূল্যবান নথিপত্র পুড়ে গেছে। পোড়ানো হয়েছে থানার সামনে থাকা গাড়ি। অপরদিকে ট্রাফিক পুলিশের সদরঘাট ডাম্পিং ইয়ার্ড থেকে সব গাড়ি লোপাট করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকারের পতন হওয়ার পর বিক্ষুদ্ধ জনতা নগরীর বিভিন্ন থানায় হামলা করে। হামলায় কোতোয়ালী থানা পুলিশের পিকআপ ও জিপ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছাই হয়ে গেছে থানার চেয়ার–টেবিলসহ বিভিন্ন আসবাব। বিভিন্ন জরুরি কাগজপত্র পুড়ে গেছে। বিক্ষুদ্ধ লোকজন থানার একটি কাচও আস্ত রাখেনি। বাথরুমের কমোড, বেসিন, শোকেজসহ সবকিছু ভেঙে তছনছ করা হয়েছে।
হামলার শিকার হয়ে হতবিহ্বল পুলিশ সদস্যরা থানা ছেড়ে চলে গেছেন। অবশ্য ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া থানাগুলোতে দাঁড়ানোর মতো অবস্থাও নেই।
৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দুষ্কৃতকারীরা অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এতে সিএমপির উপরোক্ত থানাগুলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এসব থানার ভিতরে দফায় দফায় হামলা এবং লুটতরাজ চালানো হয়। পুলিশ সদস্যদের ব্যক্তিগত জিনিসপত্র, ল্যাপটপসহ নানা জিনিস লুটপাট করে নিয়ে যায়। গতকাল কয়েকটি থানায় দেখা গেছে গেট বন্ধ। ভিতরে কাউকে দেখা যায়নি। ৫ আগস্ট রাতে খুলশী থানায়ও হামলার চেষ্টা করা হয়। তবে এখানে আগুন দেওয়া হয়নি। পুলিশ সদস্যরা থানার গাড়িগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে চলে গেছেন। গতকাল খুলশী থানায় গেট বন্ধ এবং পুলিশের কোনো সদস্যকে থানায় দেখা যায়নি।
পাহাড়তলী থানার অবস্থাও ভয়াবহ। গতকাল পাহাড়তলী থানার সামনে ভস্মীভূত কয়েকটি গাড়ি দেখা গেছে। চারতলা থানা ভবনের প্রতিটি কক্ষে হামলা হয়েছে। ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়েছে সবকিছু। পতেঙ্গা থানাও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গাড়ি পুড়ে গেছে। থানার ভিতরেও আগুন জ্বলে নথিপত্রসহ বিভিন্ন জিনিস পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হালিশহর থানার অবস্থাও ভয়াবহ বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
থানার পাশের এক বাড়ির বাসিন্দা জানান, ঘটনার সময় প্রচুর লোক থানায় চড়াও হয়। তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে পুলিশ। কিন্তু এক পর্যায়ে পুলিশ পিছু হটলে হামলাকারীরা থানার ভিতরে ঢুকে সবকিছু পুড়ে ছাই করে দেয়। জিনিসপত্র ভাঙচুর এবং লুটপাট করে নিয়ে যেতে তারা দেখেছেন।
নগরীর সদরঘাট থানার অবস্থাও ভয়াবহ। বিভিন্ন নথিপত্রসহ নানা আসবাব ভাঙচুর এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আকবরশাহ থানা পুলিশের গাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি থানার ভিতরেও ব্যাপক তাণ্ডব চালানো হয়েছে।
এদিকে সদরঘাট ট্রাফিক পুলিশের ডাম্পিং ইয়ার্ডে থাকা সব গাড়ি লুট করে নিয়ে গেছে হামলাকারীরা। কয়েকটি ভাঙা গাড়ি এবড়ো থেবড়ো অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে।










