সিএনজি টেক্সিতে ভাড়া নৈরাজ্য

প্রতিদিন হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি টাকা নৈরাজ্য শব্দে আপত্তি চালকদের

হাসান আকবর | সোমবার , ৭ এপ্রিল, ২০২৫ at ৬:০২ পূর্বাহ্ণ

নগরীর খুলশী থানার সামনে থেকে প্রবর্তক মোড়ের দূরত্ব দেড় কিলোমিটারের কম। অথচ সিএনজিচালিত টেক্সির ভাড়া হাঁকা হয় দেড়শ টাকা। ১২০ টাকায় দফারফা হয়। জিইসি মোড় থেকে আগ্রাবাদের দূরত্ব চার কিলোমিটারের কাছাকাছি। দেড়শ টাকার কমে কথা বলতে চান না সিএনজি চালকেরা। এভাবে নগরীর বিশ হাজারের বেশি সিএনজি টেক্সি দৈনিক দুই কোটি টাকার বেশি মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে। ভাড়ার ব্যাপারে কোনো নিয়ন্ত্রণ না থাকায় মাসে অন্তত ৬০ কোটি টাকা নগরীর সাধারণ মানুষের পকেট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন টেক্সি চালকেরা। মিটারে ভাড়া আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সেক্টরটি সংস্কারের আওতায় আনার আশা করা হলেও তা হয়নি।

নগরীতে টেক্সি ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছে অনেকদিন ধরে। টেক্সি চালকরা নিজেদের ইচ্ছেমাফিক ভাড়া আদায় করছেন। এক্ষেত্রে কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। নেই বিধিবিধানও। নগরবাসী দরদাম করে যতটুকু কমাতে পারেন সেটাই তাদের লাভ। অথচ প্রতিটি ট্রিপে প্রত্যেক যাত্রীকে এই বাড়তি ভাড়ার কবলে পড়তে হচ্ছে।

মোমিন রোড থেকে জিইসি মোড়ের দূরত্ব সর্বোচ্চ তিন কিলোমিটার। অথচ ১২০ টাকার কমে একটি টেক্সিও যায় না। নগরীর জাকির হোসেন রোডের উইম্যান কলেজ মোড় থেকে আগ্রাবাদের দূরত্ব ৪ কিলোমিটারের কম। ভাড়া দেড়শ টাকা। মোমিন রোড থেকে হালিশহরের ভাড়া আড়াইশ টাকা। আগ্রাবাদ থেকে হালিশহর আবাসিক এলাকার ভাড়া চাওয়া হয় ১২০ টাকা। অথচ মিটারে চলাচল করলে এসব গন্তব্যের ভাড়া ৬০৭০ টাকার বেশি হতো না। এভাবে প্রতিদিন নগরীতে চলাচলকারী বিশ হাজারের বেশি সিএনজি টেক্সি বেশি ভাড়া আদায় করছে।

চট্টগ্রাম মহানগরীতে বর্তমানে বৈধ তের হাজার টেক্সির সাথে অবৈধভাবে আরো অন্তত সাত হাজার টেক্সি চলাচল করে। অবৈধ টেক্সিগুলোর রেজিস্ট্রেশন নেই, রুট পারমিট নেই। সরকার এই টেক্সিগুলোর বিপরীতে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ টেক্সিগুলো নগরজুড়ে দাপটের সাথে চলাচল করছে।

প্রায় ২০ বছর আগে ২০০৫ সালের ১ জুনের মধ্যে চট্টগ্রামের সকল ফোর স্ট্রোক টেক্সিতে মিটার সংযোজনের জন্য সরকার নির্দেশ দিয়েছিল। ওই বছরের ৬ এপ্রিল সরকার সার্কুলার জারি করে ভাড়ার হারও নির্ধারণ করে দেয়। সরকার ছয়টি প্রতিষ্ঠানকে মিটার আমদানি এবং সিএনজি টেক্সিতে সংযোজনের জন্য নির্দিষ্ট করে দেয়। কিন্ত ২০০৫ সালের ১ জুনের নির্ধারিত সময়ে একটি টেক্সিতেও মিটার সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। এক পর্যায়ে ওই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে যাচ্ছেতাই মানের মিটার কিনেন সিএনজি টেক্সির মালিকেরা। টেক্সি মালিকদের কাছে ওই ছয়টি প্রতিষ্ঠান অন্তত ১০ কোটি টাকার মিটার বিক্রি করে। অথচ একটি মিটারও ঠিকভাবে চলেনি। ওই ছয়টি প্রতিষ্ঠান টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেলেও মিটারগুলো টেক্সিচালক, মালিক এবং নগরবাসীর কাজে লাগেনি। নগরবাসী কোনোদিন মিটারে ভাড়া প্রদান করতে পারেনি। পুলিশের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্তভাবে কিছুদিন চেষ্টা করা হলেও পুরো আয়োজনটি ব্যর্থ হয়।

মিটার সংযোজনের সরকারি উদ্যোগ ভেস্তে যাওয়ার পর নগরজুড়ে শুরু হয়েছে সিএনজিচালিত টেক্সির ভাড়া নৈরাজ্য। অস্বাভাবিকভাবে ভাড়া হাঁকানো এবং আদায় করা হচ্ছে। অসহায় নগরবাসীর কাছে বাড়তি ভাড়া প্রদান অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। তবে অস্বাভাবিক বাড়তি ভাড়া চাওয়ার ঘটনায় বিচ্ছিন্ন বিক্ষিপ্তভাবে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে।

নগর ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা ভাড়া নৈরাজ্যের কথা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। ভাড়ার একটি নির্দিষ্ট হার থাকা উচিত, শৃক্সখলা থাকা উচিত। কিন্তু নগরীতে টেক্সি ভাড়ার ব্যাপারে কোনো শৃক্সখলা রক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, মিটার লাগানোর যে উদ্যোগটি নেওয়া হয়েছিল সেটি কার্যত চাপা পড়ে গেছে। এখন নগরীতে কোনো টেক্সিতেই মিটার নেই।

টেক্সি চালকদের একজন নেতা বলেন, মিটারে ভাড়া আদায়ের কোনো সিস্টেম নেই। চুক্তিমাফিক ভাড়া আদায় করা হয়। যাত্রী এবং চালকই ভাড়া ঠিক করে গন্তব্যে যাতায়াত করেন। চালকের পছন্দ না হলে এক টেক্সির পরিবর্তে অন্য টেক্সিতে যেতে পারেন। ভাড়া নৈরাজ্যের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, নৈরাজ্য শব্দটি আপত্তিকর। আমরা জোর করে কারো কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছি না। যাত্রীরা দরাদরি করে টেক্সিতে উঠেন। তিনি বলেন, প্রতিটি জিনিসের দাম বাড়ছে। জিনিসপত্রের দামের সাথে গাড়ির যন্ত্রাংশ, গ্যাসের দাম, মালিকের জমা সবকিছুই বেড়েছে। এতগুলো বাড়তি চাপ সামাল দেওয়ার পর চালকদেরও তো বাঁচতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইপিজেডে জুতা কারখানায় শ্রমিকদের হামলা, ভাঙচুর
পরবর্তী নিবন্ধরক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জামায়াত নেতাসহ তিন চাচাতো ভাই-বোনের মৃত্যু