বকেয়া বেতন বোনাসের দাবিতে নগরের ইপিজেডের মোড়ে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সকাল ১১টা রাত ১০টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। পুলিশ প্রশাসন, বেপজা এবং মালিক পক্ষের পক্ষ থেকে আজ মঙ্গলবার বেতনভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেওয়া হলেও রাত ১০টা পর্যন্ত মানেননি আন্দোলনকারীরা।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) এক নম্বর সড়কের ৬ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত জেএমএস গ্রুপের মালিকানাধীন জেএমএস গার্মেন্টসের প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিক গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় তাদের বকেয়া বেতন–বোনাসের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। দিনভর শ্রমিকদের সাথে প্রশাসন–বেপজা এবং মালিক পক্ষের লোকজন দফায় দফায় আলাপ শুরু করে। শ্রমিকদেরকে আজ মঙ্গলবার বেতনভাতা পরিশোধ করা হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও তারা সারাদিন সড়ক ছাড়েনি। তবে পুলিশ জানায়, কারখানাটিতে শ্রমিক রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। শ্রমিকদেরকে বুঝানোর পর অনেক শ্রমিক সড়ক ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে আড়াইশ শ্রমিক আন্দোলন করছেন। ইপিজেড থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আখতারুজ্জামান গতকাল সোমবার রাত ১০টায় আজাদীকে জানান, এখনো শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে আছে। যানবাহন চলাচল এখনো বন্ধ আছে। তাদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা চলছে। মালিক পক্ষ আগামীকাল মঙ্গলবার (আজ) বকেয়া বেতন পরিশোধ করবেন। সকাল থেকে এখনো সড়ক অবরোধ করে আছে বলে জানান ওসি মো. আখতারুজ্জামান।
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ ১১ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে সড়ক অবরোধের ফলে আগ্রাবাদ–পতেঙ্গা এবং পতেঙ্গা আগ্রাবাদমুখী সড়কে ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে রমজানে অফিসগামী লোকজন এবং ইফতারের সময় সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন। এসময় যানজটের প্রভাব আশপাশের ছোট সড়কগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে।
জানা গেছে, জেএমএস গ্রুপের মালিকানাধীন জেএমএস গার্মেন্টস গত ৪ মার্চ কাজ না থাকায় এবং ব্যাংকিং জটিলতার কারণে লে–অফ (সাময়িক বন্ধ) ঘোষণা করা হয়। লে–অফ চলাকালীন শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদেরকে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা ১৫ অনুযায়ী, গত ২০ মার্চ ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন এবং ২৩ মার্চ ঈদ বোনাস পরিশোধের কথা ছিল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু কোনো শ্রমিক নির্দিষ্ট তারিখে বেতন পাননি।
নোটিশের মাধ্যমে ২৫ মার্চ বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হলেও শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত না মেনে গত শনিবার সকাল ৮টার দিকে কারখানার সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরবর্তীতে ৬ শতাধিক শ্রমিক সকাল ১০টার দিকে নগরের ব্যস্ততম সড়ক ইপিজেড মোড়ে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় প্রায় তিন ঘণ্টা বন্দর–পতেঙ্গাগামী সড়কের উভয় পাশে যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে গতকাল ২৪ তারিখ মালিকপক্ষের সুস্পষ্ট নির্দেশনা আসবে বেপজার এমন আশ্বাসে সড়ক ছেড়েছিলেন তারা।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে বেপজার আশ্বাস অনুযায়ী কারখানার সামনে ভিড় করেন শ্রমিকরা। কিন্তু সেখানে গিয়ে তারা দেখতে পান কারখানায় তালা ঝুলানো। এরপরই তারা ইপিজেড মোড় সড়ক অবরোধ করেন এবং বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বিক্ষোভকারী শ্রমিকরা সড়কের উভয় পাশে ব্যারিকেড দেয়ার ফলে বন্দর–পতেঙ্গাগামী সব গাড়ি আটকা পড়ে এবং ওই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছু শ্রমিকদের হাতে এসময় লাঠিসোঁটাও দেখা গেছে। তারা কোনো গাড়িকেই যেতে দেয়নি। এসময় সড়কের একপাশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেন।
অবরোধের ফলে নগরের প্রবেশদ্বার এ কে খান থেকে নিমতলাগামী সড়কের নয়াবাজার থেকে যানজট শুরু হয়ে ইপিজেড থেকে কাটগড় পর্যন্ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এদিকে আগ্রাবাদ থেকে শুরু করে বারিক বিল্ডিং–সল্টগোলা হয়ে ইপিজেড পর্যন্ত যানজটে শত শত গাড়ি আটকা পড়ে।